অক্টোবর ২১: গত বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি ঘটনা ঘটে। যখন মার্কিন প্রতিনিধি মিশেল টেলর বক্তৃতা দেন, তখন অনেক অংশগ্রহণকারী ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা’ সমর্থনের প্রতিবাদ জানাতে মঞ্চের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। জাতিসংঘের এ দৃশ্যটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সতর্কতা বলে মন্তব্য করেছে সিএমজি সম্পাদকীয়।
এ পর্যন্ত, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষে ৫২০০’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজা অঞ্চলের চারটি হাসপাতালই পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হিসাবে এ মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের দুই পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে, সংঘর্ষে নিরীহ বেসামরিক মানুষের হতাহত উপেক্ষা করেছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মানবিক ত্রাণ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবে দু’বার ভেটো দিয়েছে।
আসলে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছিল। কাতারের আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র গত ৫০ বছরে ইসরায়েলের সমালোচনা করে নিরাপত্তা পরিষদের ৫০টিরও বেশি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করেছে।
২০২০ সালে, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান ও মরক্কোকে "আব্রাহাম চুক্তি" স্বাক্ষর করায় যুক্তরাষ্ট্র। সে বছরের শুরু থেকে, বাইডেন প্রশাসন ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য সৌদি আরব এবং ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়। যার মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা উপেক্ষা করা হয়। এর ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমেছে। যা ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের বর্তমান সংঘর্ষের প্রত্যক্ষ কারণ হয়ে উঠেছে।
সংঘাত শুরুর পর, একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন মধ্যপ্রাচ্য সফর করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার দাবি জানায়। অন্যদিকে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলে যায় এবং ইসরাইলকে সব ধরণের অস্ত্র দেয়। যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক ত্রাণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেয়। এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজ ভিন্ন।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন ওয়াল্টার সম্প্রতি "ফরেন পলিসি"-তে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, " ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নতুন দফা যুদ্ধের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্র।"
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যুদ্ধে কোন বিজয়ী পক্ষ নেই এবং সহিংসতা প্রতিরোধে সহিংসতা ব্যবহার করলে সংকট আরও গুরুতর হয়। বর্তমানে, আন্তর্জাতিক সমাজ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে অবিলম্বে সার্বিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে। চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়া উচিত, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতকে ঘরোয়া দলীয় সংগ্রামের একটি হাতিয়ার এবং অন্যান্য দেশে আক্রমণ করার সুযোগ হিসাবে দেখা বন্ধ করা উচিত। "একতরফা" আচরণ বন্ধ করা উচিত এবং যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমাজের সাথে কাজ করা উচিত। তা না হলে সারা বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
(ইয়াং/তৌহিদ/ছাই)