১৯৪৮ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) বেইজিং থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে হ্যপেই প্রদেশের সিপাইফো গ্রামে লিয়াওশেন, হুয়াইহাই ও ফিংচিনে তিনটি যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং জাতীয় ভূমি-সম্মেলন আয়োজন করার মাধ্যমে সারা চীন মুক্ত করে। চীনে সিপাইফো 'নয়াচীনের শুরু' বলে পরিচিতি লাভ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিপাইফোতে অবস্থিত ফিংশান জেলায় পর্যটন খাত অনেক গুরুত্ব পায়। জেলার পর্যটন খাতের উন্নয়ন অনেক যুবককে জন্মস্থানে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উত্সাহিত করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে সেই গল্প তুলে ধরবো।
সিপাইফোতে অবস্থিত ফিংশান জেলা সাংস্কৃতিক পর্যটনসম্পদে সমৃদ্ধ। এখানে লাল বিপ্লবী ধ্বংসাবশেষ দুই শতাধিক। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আছে শতাধিক। ২০২২ সালে ফিংশান ভ্রমণ করেন ২.১ কোটিরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক, যা ২০২০ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
ছি না না হলেন সিপাইফো থানার লিয়াং চিয়া গৌ'র গ্রামবাসী। তিনি বেইজিংয়ে অনেক বছর কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জন্মস্থানে পর্যটন শিল্প দ্রুত উন্নত হওয়ায়, ২০১২ সালে তিনি সিপাইফো ফিরে আসেন। তিনি প্রথমে গ্রামে পারিবারিক হোটেল খুলে বসেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আগে বেইজিংয়ে কাজ করতাম। আমার সন্তান হওয়ার পর আমি জন্মস্থানে ফিরে আসি। বেইজিংয়ে আমার বেতন বেশি ছিল। তবে, বড় শহরে খরচও বেশি। আমি সন্তানকে নিয়ে বাইরে কাজ করতে পারি না। সেজন্য আমি ফিরে এসেছি এবং এখানে পারিবারিক হোটেল দিয়েছি।‘
বর্তমানে লিয়াংচিয়াকৌ গ্রামে ছি না না'র মতো পারিবারিক হোটেল খুলেছেন আরো কয়েক ডজন পরিবার। ছি না না বলেন, এখানে হোটেল ব্যবসা করার পাশাপাশি নিজের সন্তানের যত্ন নিতে পারেন তিনি। তাঁর স্বামী পর্যটনকেন্দ্রে কাজ করেন। বেতন ভালো। এখন তাঁর পরিবারে সুখ আছে, স্বাচ্ছন্দ্যে আছে।
লিয়াংচিয়াকৌ গ্রাম কমিটির পরিচালক হান চি ফিং বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ গ্রামবাসী রেস্তোরাঁ, হোটেল ও পর্যটন স্যুভেনির বিক্রির ব্যবসা করছেন। গ্রামবাসীদের প্রতিবছর মাথাপিছু গড় আয় ১০ হাজার ইউয়ানের বেশি। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সিপাইফো থানার লিয়াংচিয়াকৌ গ্রামে মোট ৯০ পরিবারের ৩৪০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা সিপাইফো'র পর্যটনসম্পর্কিত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা এ ব্যবসা করেন।‘
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিপাইফো থানায় অবস্থিত ফিংশান জেলা 'পরিবেশ সুরক্ষা ও পর্যটন সমৃদ্ধ' কৌশল কার্যকর করে এসেছে। ২০২২ সালে জেলাটির আয় ৪৮ বিলিয়ন ইউয়ান ছিল, যা ২০২০ সালের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। পর্যটন শিল্প উন্নয়নের ফলে স্থানীয় যুবকরা জন্মস্থানে ফিরতে আগ্রহী হচ্ছে। ওয়াং ওয়েই ফিংশান জেলার পর্যটনকেন্দ্রে একটি রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জানান, তাঁর ব্যবসা খুবই ভালো চলছে। তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত সময়ে আমাদের পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে পর্যটক হয় ১০ হাজারেরও বেশি। সেজন্য আমার রেস্তোরাঁর ব্যবসা খুবই ভাল। আমার স্বামী হলেন চিয়াংসু প্রদেশের মানুষ। আগে আমরা চেচিয়াং প্রদেশে কাজ করতাম। এখন আমার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ী আমার সঙ্গে আমাদের জন্মস্থানে ব্যবসা করছেন।‘
ওয়াং ওয়েই'র রেস্তোরাঁ ফিংশান জেলার হংইয়াকু পর্যটনকেন্দ্রে অবস্থিত। হংইয়া প্রাচীন থানাকে কেন্দ্র করে স্কি রিসোর্ট, হংইয়া কলেজ ও গ্লাসের তৈরি ঝুলন্ত সেতু নির্মিত হয়েছে। হংইয়া ক্রমবর্ধমান হারে পর্যটক আকর্ষণ করছে। ওয়াং ওয়েই পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের থাইচৌ শহরে কাজ করেছেন ১২ বছর। দু'বছর আগে তিনি জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তখন তাঁর স্বামী তার ফিরে আসার বিরোধিতা করেছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগে আমি স্বামীর সঙ্গে চেচিয়াং প্রদেশে ১২ বছর কাজ করেছি। তখন আমার স্বামীর মাসিক বেতন ছিল ১০ হাজার ইউয়ানের কিছু বেশি। তিনি মনে করতেন, উত্তরাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের গতি দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে ধীর। কিন্তু আমার মনে হয়, যদিও আমার জন্মস্থানে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের শুরুর মনে হয়েছে, উন্নয়নের গতি ভবিষ্যতে দ্রুত হবে। এ ছাড়া, আমাদের অভিজ্ঞতা বেশি। সেজন্য আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবো।‘
স্বামীকে রাজি করানোর পর, ২০২০ সালের শেষ দিকে ওয়াং ওয়েই তাঁর স্বামীকে নিয়ে হংইয়াকু পর্যটনকেন্দ্রে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। তাঁরা খাবারের মান, সেবা ও নব্যতাপ্রবর্তনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁদের ব্যবসা খুবই ভালো। ওয়াং ওয়েই বলেন, ‘আমার মনে হয়, সেবা প্রথম, খাবার দ্বিতীয় স্থানে। এ ছাড়াও নব্যতাপ্রবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাবারের দাম বেশি না। আমি ১২ বছর চেচিয়াং প্রদেশে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজের জন্মস্থানে রেস্তোরাঁ খুলেছি। আমাদের গ্রাম আগের মতো নেই। অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে আমার জন্মস্থান আরো সুন্দর হবে, আমাদের আয় আরো বেশি হবে।‘
হংইয়াকু পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার পাশাপাশি স্থানীয় অবকাঠামোরও অনেক উন্নতি হয়েছে। সড়ক-যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় কাছাকাছি ছয়টি গ্রামের পরিবহনসমস্যার সমাধান হয়েছে। গ্রামবাসীরা পারিবারিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকান খুলেছেন। বর্তমান পর্যটনকেন্দ্রে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩২০ জন। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী হলেন ওয়াং ওয়েই'র মতো স্থানীয় বাসিন্দা। ফিংশান জেলার সংস্কৃতি, বেতার, টেলিভিশন ও পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক মাদাম ওয়াং ওয়েই বলেন, স্থানীয় যুবকদের উদ্যোক্তা হতে আরও উত্সাহ দেওয়া হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জন্মস্থানে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে যেসব যুবক, তাদের জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়, যাতে তারা বাইরে থেকে জন্মস্থানে ফিরে ব্যবসা করে, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এ ব্যাপারে আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।‘
এ পর্যন্ত ফিংশান জেলা ৫০টিরও বেশি পর্যটন শিল্প গ্রাম উন্নয়ন করেছে এবং পারিবারিক হোটেল খুলেছে ৬ শতাধিক। জেলায় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ এবং সাংস্কৃতিক শিল্পসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে আরও অনেক যুবকের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়। (ছাই/আলিম)