চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৯
2023-10-21 18:34:36

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ:

১. বেইজিং-খুনমিংয়ে বিআরআই কনসার্ট

চীনের রাজধানী বেইজিং ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে তৃতীয় সংগীত সম্মেলন ও কনসার্টের আয়োজন করে ‘এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ’-বিআরআই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংগীত মহলের জোট মিউজিক এডুকেশন অ্যালায়েন্স।

 

৬ দিনের এ আয়োজনের উদ্বোধন হয় বেইজিংয়ে, চীনের সেন্ট্রাল কনসারভেটরি অফ মিউজিকে গত ১৫ অক্টোবর। বিআরআই সংশ্লিষ্ট ৩০টি দেশের ১০০ জনের বেশি শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ এতে যোগ দেন।

চীনের সেন্ট্রাল কনসারভেটরি অফ মিউজিকের প্রেসিডেন্ট ইউ ফেং ফোরামে তুলে ধরেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতি সহযোগিতায় সংগীতের ভূমিকার কথা।

‘মানুষে মানুষে এবং সভ্যতার মধ্যে শিক্ষা ও আদানপ্রদানে সংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিআরআই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শিল্পীরা এখানে সংগীতের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতিকেই তুলে ধরছেন’।

থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মিউজিকের সহকারি ডিন ক্রিস্টোফার চাউব উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন আয়োজনের।

‘এটি একটি চমৎকার সম্মিলন। আমি বিআরআইভুক্ত দেশগুলোর অনেক সংগীত স্কুলের অসাধারণ পরিবেশনা দেখেছি। আমি ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে এ সব সংগীত স্কুলের ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছি’।

‘এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগ’-বিআরআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিয়ে চীনের নেতৃস্থানীয় সংগীত স্কুল সেন্ট্রাল কনসারভেটরি অফ মিউজিকে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিউজিক এডুকেশন অ্যালায়েন্স।

বর্তমানে বিআরআই সংশ্লিষ্ট ৩৮টি দেশের ৬১টি সংগীত স্কুল এ জোটের সদস্য। বছরব্যাপী সিরিজ কনসার্ট, ওয়ার্কশপ, ফোরাম ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে জোটটি।

 

২. নবম সিল্ক রোড আন্তর্জাতিক আর্ট ফেস্টিভ্যাল

নবম সিল্ক রোড আন্তর্জাতিক আর্ট ফেস্টিভ্যাল ১৫ অক্টোবর উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের সি’আন শহরে শুরু হয়েছে।

‘সিল্ক রোডের একটি নতুন অধ্যায়, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আরও ভাল দিন’, থিমে আয়োজিত এ উৎসবে ৯০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলের শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।


চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং শায়ানসি প্রাদেশিক সরকার যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে। আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।

২০১৪ সালে শুরু হওয়া সিল্ক রোড আন্তর্জাতিক আর্ট ফেস্টিভ্যাল বিআরআই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বিনিময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

 

৩. বিআরআই তথ্যচিত্রের বহুভাষিক সংস্করণ

গত ১০ বছরে ‘এক পথ, এক অঞ্চল উদ্যোগ-বিআরআই কাঠামোয় অর্জিত সাফল্য এবং এক্ষেত্রে চীনের অবদান তুলে ধরে ‘সমৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক তথ্যচিত্রের বহুভাষিক সংস্করণ প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)।

১৬ অক্টোবর বেইজিংয়ে তথ্যচিত্রটির বিশ্বব্যাপী প্রিমিয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন সিএমজি প্রেসিডেন্ট শেন হাইসিয়ুং।

তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ‘এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ’ উত্থাপনের দশম বার্ষিকীতে ‘সমৃদ্ধির পথে’ ডকুমেন্টারিটির বিশ্বব্যাপী প্রিমিয়ার হয়েছে। এই সিল্ক রোডের গল্পগুলো এবং চীনের গল্পগুলো যা আবেগ এবং স্বপ্নে প্রস্ফুটিত হয় তা অবশ্যই সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে আরও উজ্জ্বলভাবে প্রস্ফুটিত হবে।

সিএমজি নির্মিত, ছয় পর্বের তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে চীন এবং বিআরআইয়ের অংশীদার দেশগুলো গত দশকে জয়-জয় সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য তাদের হাতে হাত মিলিয়েছে।

তথ্যচিত্রটি বিগত দশকে বিআরআইয়ের মাইলফলক অর্জনগুলোকে তুলে ধরেছে এবং মানবজাতির একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে উদ্যোগটির ঐতিহাসিক মূল্য এবং তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছে।

তথ্যচিত্রটি প্রচারের পরপরই চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং প্রশংসা পেয়েছে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

২. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

চিয়া তাও: তিক্তরসের কবি

চিরায়ত চীনা কবিতার রয়েছে নানা রূপ, নানা রস। কেউ কবিতা লিখেছেন প্রেম, কেউ বা প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে। কবি চিয়া তাও এর কবিতায় ফুটে উঠেছে জীবনের তিক্ততা। জীবন সম্পর্কে চিয়া তাও খুব আশাবাদী ছিলেন না। আবার নৈরাশ্যবাদী হওয়া বা হা হুতাশ করাটাও তার ধাতে ছিল না। তিনি জীবনের কঠোর বাস্তবতা ও তিক্ততাকে দেখেছেন নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

চিয়া তাও এর জন্ম ৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে বেইজিংয়ের কাছে। তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি। প্রথম তারুণ্যে তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। পরবর্তিকালে তিনি থাং রাজবংশের রাজধানী ছাংআন নগরে আসেন। তিনি বিখ্যাত চীনা দার্শনিক, কবি, রাজনীতিবিদ  হান ইয়ুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। চিয়া তাওর লক্ষ্য ছিল রাজকীয় চাকরি জন্য চিনশি পরীক্ষা দেয়ার। বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হন চিয়া তাও। তিনি গীতিময় কবিতা ও বর্ণামূলক কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তার সেসব কবিতা খুব একটা প্রশংসা পায়নি। তার কবিতাকে খুব সংক্ষিপ্ত, অগভীর এবং কৃত্রিম বলে সমালোচনা করা হয়।

তবে পরবর্তিকালের বিশেষজ্ঞরা তার প্রতি অনেকটা সুবিচার করেছেন। তাদের মতে চিয়া তাও এর কবিতার তিক্তরস তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে।

চিয়া তাওর দুটি কবিতা।

 

অনুপস্থিত প্রভুর প্রতি

পাইন গাছের নিচে এক ছোট শিশুকে প্রশ্ন করলাম

সে বললো, প্রভু ভেষজ সংগ্রহে ওই দিকে গেছেন

পাহাড়ের ঢালে সে একা দাঁড়িয়ে আছে

মেঘ এত ঘন যে সে জানে না সে কোথায়।

 

তলোয়ারধারী

তরোয়ালটি পালিশ করছি দশ বছর ধরে

এর মরিচা পড়া প্রান্ত কখনও নামেনি পরীক্ষায়

এখন আমি এটা ধরে আপনাকে বলছি জনাব

এখানে কি কেউ আছেন যার প্রতি অবিচার হয়েছে?

দুটি কবিতাই প্রতীকি এবং ব্যাঙ্গাত্মক। দ্বিতীয় কতিায় একজন বীর তার তরোয়ালকে কেবলি পালিশ করেছে, চকচকে করেছে। কিন্তু সে তরোয়ালটিকে কখনও ব্যবহার করেনি। তার বীরত্বেরও কোন পরীক্ষা হয়নি এ যাবৎ। এতদিন পরে সে প্রশ্ন করছে এমন কি কেউ আছে যার প্রতি অবিচার করা হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে অবিচার করা হয়েছে তার নিজেরই প্রতি। কারণ সে নিজের শক্তিসামর্থ্যকে কখনও ন্যায়ের পক্ষে ব্যবহার করেনি।

চিয়া তাও মৃত্যুবরণ করেন ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কবিতায় কর্কশতা ও নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য আজও চিরায়ত চীনা সাহিত্যে বিশেষ স্থান রয়েছে থাংযুগের কবি চিয়া তাও এর।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।