তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’আন্তর্জাতিক শীর্ষ সহযোগিতা ফোরাম ১৮ অক্টোবর শেষ হলেও পরের দিন ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। একদিনেই তিনি ফোরামে অংশ নিতে আসা ৯জন নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
কেন এবারের ফোরাম ১০ হাজারেরও বেশি অতিথিকে আকর্ষণ করে? কেন এ ফোরামকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে মনে করা হয়?
আঠারো অক্টোবর রাতে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ আন্তর্জাতিক শীর্ষ সহযোগিতা ফোরামের মূল ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবারের ফোরামে মোট ৪৫৮টি বিষয়ে সুফল অর্জিত হয়, যা দ্বিতীয় ফোরামের তুলনায় অনেক বেশি। পাশাপাশি ফোরামের সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথাও ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন পক্ষ একমত হয় যে, এবারের শীর্ষ ফোরাম হচ্ছে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণের নতুন একটি মাইলফলক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর বক্তব্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রস্তাবের সাফল্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা সারসংক্ষেপ করেন। এর মধ্যে একটি হলো কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে ভাল ও বড় কাজ করা যায়।
শীর্ষ ফোরাম চলাকালে ১৫১টি দেশ ও ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার ১০ হাজারের বেশি অতিথি বেইজিংয়ে মিলিত হন। তারা মৈত্রী, সহযোগিতা ও উন্নয়নের জন্য আসেন এবং মতৈক্য, স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক শক্তি অর্জন করেন।
উচ্চ-মানের উন্নয়ন যেমন বর্তমানে চীনের প্রধান কর্তব্য তেমনি এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে চীন গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ও কৌশল পৌঁছে দেয়। এবারের শীর্ষ ফোরামের প্রতিপাদ্য হলো উচ্চ-মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণ এবং অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন। উচ্চ-মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণের সমর্থনে ৮টি কার্যক্রম ঘোষণা করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। ফোরাম চলাকালে আন্তঃযোগাযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সবুজ উন্নয়ন বিষয়ক তিনটি উচ্চ-পর্যায়ের শাখা ফোরাম আয়োজিত হয়।
আধুনিকীকরণ বিভিন্ন দেশের মানুষের অভিন্ন প্রত্যাশা ও অধিকার। এবারের শীর্ষ ফোরামে প্রেসিডেন্ট সি প্রথম বারের মতো উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন দেশের উচিত হাতে হাত রেখে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করা, উভয়ের জন্য কল্যাণকর সহযোগিতা চালানো এবং সমৃদ্ধির আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করা। এ মহান প্রত্যাশা মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের ধারণা অনুসরণ করে এবং উচ্চ মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’যৌথ নির্মাণকে দিকনির্দেশনা দেয়।
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণ শুধু মুখের কথা নয়; বরং বাস্তব কাজ। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রস্তাব উত্থাপনের প্রথম দশকে হাজারটি বাস্তব সহযোগিতামূলক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আর আগামী ১০ বছরে বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে আরও সাফল্য অর্জিত হবে। প্রেসিডেন্ট সি তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, বাস্তব সহযোগিতার মাধ্যমে যুগান্তকারী প্রকল্প ও জীবিকা প্রকল্পের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ।
বিশটির বেশি দেশের নেতা ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবারের ফোরামে অংশ নেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বা করবেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। উনিশ অক্টোবর এক দিনে ৯টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওইদিন মিশরের প্রধানমন্ত্রী, মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, তুর্কমেনিস্তান পিপলস কাউন্সিলের চেয়ারপারসন, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, মোজাম্বিকের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বৈঠককালে বলেন, ইতিহাসে কোনও প্রস্তাব ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর মতো ১৫০টি দেশকে যুক্ত করতে পারেনি। কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু গুয়েসো বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণ এমন একটি কাজ, যা আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি পুনর্নির্মাণের জন্য সহায়ক এবং নতুন উন্নয়ন পদ্ধতি ও সহনশীল সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিশ অক্টোবরও প্রেসিডেন্ট সি ফোরামে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। (শিশির/রহমান/রুবি)