”প্রতিদিন তিনটি জুজুব খেলে আজীবন যৌবন থাকবে”। চীনে এমন একটি কথা খুব প্রচলিত। চীনের সায়ান সি প্রদেশের ইয়ান ছুয়ান কাউন্টিকে চীনা জুজুবের হোমটাউন বলা হয়। এ জেলায় ৩ হাজার বছর ধরে জুজুব বা চীনা খেজুর চাষের ইতিহাস রয়েছে। জুজুব ফল, শুকনো জুজুব, জুজুব রুটিসহ নানা খাবার উত্তর সায়ানসিবাসীদের স্মৃতিতে চিরউজ্জ্বল।
ইয়ান ছুয়ান কাউন্টি হোয়াং হো নদীর অববাহিকার মাঝামাঝি এবং উত্তর সায়ান সি প্রদেশের লোইস (loess) মালভূমির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এ জেলায় বছরে সুর্যালোক থাকে ২ হাজার ৪শ ঘন্টারও বেশি। অঞ্চলটির গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার। এটি জুজুব চাষের উপযোগী স্থান। এখানকার জুজুবের মাংস পুরু, বীজ ছোট, মান ভাল এবং পুষ্টিমান উন্নত। বিশেষ করে হোয়াং হোর তীরে চাষ করা জুজুব ভোক্তাদের মধ্যে অনেক প্রিয়।
এ মৌসুমে হোয়াং হোর তীরের ক্ষেতে তাজা লাল জুজুব গাছের শাখায় ঝুলছে। জুজুব ফসল মৌসুম ঘনিয়ে আসছে।
“এ বছরে জুজুবের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ ইউয়ান হতে পারে। কারণ উত্পাদনের পরিমাণ অনেক কম।” ইয়ান ছুয়ান জেলার ছিয়ান খুন ওয়ান উপজেলার ফু ই হ্য গ্রামের জুজুব চাষি কুও হাই ইয়ান আনন্দের সঙ্গে এ কথা বলেন। কুও হাই ইয়ান এবার ১৩৭ হেক্টর জমিতে জুজুব চাষ করেছেন।
তবে কুও হাই ইয়ানের চোখের সামনের এ জুজুব বাগান ২০১৮ সালের আগেও ছিল পতিত ভূমি। এ প্রসঙ্গে কুও হাই ইয়ান বলেন, “কারণ বৃষ্টি হলে জুজুব ফেটে যায়, যার কারণে সেগুলো বিক্রি করা যায় না। কৃষকদের এক বছরের পরিশ্রম বৃথা যায়। এর চেয়ে অন্য কোনও কিছুতে শ্রম দেওয়া ভালো।”
২০১৮ সালে জমি সংগ্রহ ও বদলের মাধ্যমে কুও হাই ইয়ান ফুইহ্য গ্রামের ১৩৭ হেক্টর জুজুব বাগান একত্র করেন। তিনি তার এ বাগানে ৫ ধরনের জুজুব চাষ করেন। কৃষকদের গাছ ব্যবস্থাপনাসহ নানা প্রশিক্ষণের আয়োজনও করেন কুও। ফসল তোলার সময় একযোগে তাদের ফল বিক্রিও করা হয়।
এ সময় কৃষকরা কুও হাই ইয়ানের কাছে শ্রম দিয়ে বেতন পাওয়ার পাশাপাশি নিজের জুজুব বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন করেন। বছরে প্রতি পরিবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারছে, যা শ্রমের মূল্য হিসাবে অনেক ভালো হয়। তাই অনেকে অন্য স্থান থেকে এখানে ফিরে আসছেন।”
কুও হাই ইয়ানের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলে জুজুবের গুণগতমান এবং উত্পাদনের পরিমাণ উভয়ই বেড়েছে। তাছাড়া তিনি সমবায় গঠন করে জুজুব প্রক্রিয়াকরণ করেন। জুজুবে ফাটল থাকলে তাও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে এখন।
ছিয়ান খুন ওয়ান উপজেলার জুজুব শিল্পবিষয়ক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাং ইয়াং বলেন, “সমবায় যোগ কেন্দ্র যোগ কৃষক’ পদ্ধতিতে সমবায়ের ব্যবস্থাপনায় ৫৬টি কৃষক পরিবার মানদণ্ড প্রমিতকরণের দৃষ্টান্তমূলক উদ্যান ব্যবস্থাপনা ও নির্মাণের মাধ্যমে পেশাদারিত্বের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে জুজুব শিল্পকে।”
বর্তমানে এ উপজেলায় জুজুব বাগানের পরিমাণ ২ হাজার ১৩৩ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে এবং সেখানকার বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ৪৬ হাজার টন।
চাং ইয়াং বলেন, “আমরা বিক্রির পদ্ধতিও সম্প্রসারণ করেছি, যাতে জুজুব চাষীদের বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয়। বর্তমানে এটা থেকে গড় উপার্জন ৬ হাজার ৩শ ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।”
গুপ্তধনে ভরা জুজুব গাছ। জুজুব খাওয়া যায় এবং ঔষুধিতেও ব্যবহার করা যায়। জুজুব ফুল দিয়ে মধুও তৈরি করা যায়। জুজুব কুঁড়ি জুজুব কুঁড়ি চা তৈরি করতে ব্যবহার করা যায় এবং জুজুব কাঠ জুজুব কাঠের খোদাইয়ে ব্যবহার করা যায়।
কুও হাই ইয়ান বলেন, “বসন্তকালে জুজুব কুঁড়ি দিয়ে গ্রিন টি তৈরি করা যায় এবং শরত্কালে এটা দিয়ে ব্ল্যাক টি তৈরি করা যায়। এক বাক্স জুজুব চা ৬০০ ইউয়ানে বিক্রি হয়।”
জানা গেছে, ছিয়ান খুন ওয়ান উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরে জুজুব কুঁড়ি চা উত্পাদন কারখানা প্রতিষ্ঠায় ১ লাখ ৬০ হাজার ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে, যার ফলে জুজুব চাষীদের গড় উপার্জন ১ হাজার ১শ ইউয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে ইয়ান ছুন জেলায় জুজুব কুঁড়ি চা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫টি, সমবায় ও পারিবারিক কৃষিক্ষেতের সংখ্যা ৫টি। প্রতি বছর গ্রিন টির উত্পাদনের পরিমাণ আড়াই হাজার কেজি এবং ব্ল্যাক টির পরিমাণ ৫শ কেজির বেশি।
বর্তমানে ইয়ান ছুয়ান জেলায় ৬০টিরও বেশি জুজুব প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো চাষ করা হচ্ছে ১০ হাজার ৩৩৩ হেক্টর জমিতে। জুজুব শিল্প স্থানীয় কৃষকদের উপার্জন বাড়ানো এবং সমৃদ্ধ হওয়ার প্রধান শিল্পে পরিণত হয়েছে। গত ২০২২ সালে এ শিল্পের আকার ১২ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়।
(রুবি/রহমান)