আকাশ ছুঁতে চাই ৪০
2023-10-19 21:53:12

 


১. অদম্য ক্রীড়াবিদ নারী ওয়াং সিয়াওমেই

২. বক্সিংয়ে জেন্ডার সমতা চান নারীরা

৩. ভেষজ উদ্ভিদের চাষে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন নারীরা

৪. তিব্বতি নারীদের কাজ নিয়ে ফ্যাশন শো

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।


অদম্য ক্রীড়াবিদ নারী ওয়াং সিয়াওমেই

মানুষের জীবনে সাফল্য লাভের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। বিশেষ করে যদি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে এইসব প্রতিবন্ধকতা সত্বেও অনেক সাহসী মানুষ এগিয়ে চলেছেন। এখন শুনবো এমনি একজন অদম্য ক্রীড়াবিদ নারীর কথা। 

 

জীবনে যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক, কোনকিছুই তার এগিয়ে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনি একজন অদম্য ক্রীড়াবিদ ওয়াং সিয়াওমেই। তিনি একজন সাইক্লিস্ট। প্যারা এশিয়াডে অংশ নিচ্ছেন ওয়াং।

ওয়াং দীর্ঘদিন ধরে সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত। দেহের ডানপাশে কনজেনিটাল নার্ভ ডিসওর্ডারেও ভুগছেন তিনি। এ কারণে তার দেহের ডান পাশ ঠিকমতো কাজ করে না। 

তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি খেলাধুলা ভালোবাসতেন। প্রথমে তিনি ছিলেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড খেলোয়াড়। একদিন তিনি ট্র্যাকে প্য্যাকটিস করছিলেন সেই সময় একজন সাইক্লিং কোচ তাকে লক্ষ্য করেন। সেই কোচের নির্দেশনায় প্র্যাকটিস করেন তিনি। ২০১৬ সালে যোগ দেন কুয়াংতোং প্রদেশের প্যারা সাইক্লিং টিমে। 

 

ওয়াংয়ের একটা বড় সমস্যা ছিল যে, তিনি প্র্যাকটিসের সময় ভালো করলেও মূল প্রতিযোগিতায় গিয়ে ভালো করতে পারতেন না। কারণ তিনি নার্ভাস হয়ে পড়তেন। তার আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি ছিল। তবে তিনি এসব দুর্বলতা অতিক্রম করেছেন। কোচের নির্দেশনা মেনে চলেছেন। প্র্যাকটিস করেছেন। পরিবারের সদস্যরাও তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। 

 

সব মিলিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তোলেন এই সাহসী নারী। জাতীয় প্যারাগেমসে ভালো করেন তিনি। টোকিও প্যারালিম্পিকে রৌপ্য পদক জয় করেন। 

এখন ওয়াং কঠোর পরিশ্রম করছেন। তার স্বপ্ন হাংচৌ এশিয়াড প্যারাগেমসকে ঘিরে। তিনি এখানে সাইকেল চালনায় স্বর্ণ জয় করতে চান। 

 

তার কোচ লি ফাং মনে করেন, ওয়াং খুবই যোগ্য ও দক্ষ ক্রীড়াবিদ। তবে তাকে এজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা তার ভিতরে যে ভয় ও দ্বিধা ছিল সেটা কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। শারীরিক প্রতিবদ্ধকতা জয় করে নিজেকে সাহসী ও জয়ী হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ওয়াং। শুধু তাই নয়, তিনি অন্য প্রতিবন্ধী নারীদের জন্যও হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার উৎস।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান




বক্সিংয়ে জেন্ডার সমতা চান নারীরা 

বর্তমানে নারীরা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে পুরুষের মতোই সমান দক্ষতায় এগিয়ে যাচ্ছেন প্রায় সকল ইভেন্টে। একসময় বক্সিং, কুস্তি ইত্যাদি কয়েকটি ইভেন্টে  নারীদের  কিছুটা দুর্বল বলে মনে করা হতো। সেজন্য নারীদের ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন ছিল কিছুটা সহজ বা শিথিল। কিন্তু এতে নারীদের কৃতিত্ব অনেকটা কমে যেতে পারে এমন আশংকাও রয়েছে। বর্তমানে তাই বক্সিংয়ে পুরুষদের মতো একই নিয়মকানুনের দাবি তুলেছেন অনেক নারী ক্রীড়াবিদ। তার বক্সিং থেকে জেন্ডার বৈষম্য দূর করার জন্য সোচ্চার হয়েছেন। 

 

বক্সিংয়ে নারী পুরুষ সমঅধিকারের দাবী তুলেছেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অনেক নারী বক্সার। সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে সাবেক ও বর্তমান আন্তর্জাতিক নারী বক্সাররা এই দাবী তোলেন।বিবৃতিতে লায়লা আলীর মতো খ্যাতিমান নারী বক্সারও আছেন। 

পুরুষ ও নারীদের বক্সিংয়ের নিয়মে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পুরুষদের একেকটি রাউন্ড হয় ৩ মিনিটে এবং তারা ১২ রাউন্ড খেলেন। কিন্তু নারীদের একেকটি রাউন্ড ২ মিনিটের এবং তারা ১০ রাউন্ড খেলেন।

এতে নারীদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার একটা সুযোগ তৈরি হয়। 

এ কারণেই বিশ্বখ্যাত নারী বক্সাররা দাবী তুলেছেন ১২ রাউন্ড এবং তিন মিনিটের রাউন্ড খেলার। তবে আগামিতে অনুষ্ঠেয় পুয়ের্তো রিকোর অবিসংবাদিত ফেদারওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আমান্ডা সেরানো বনাম ব্রাজিলের ড্যানিলা রামোসের খেতাব জয়ের লড়াইটি ১২ রাউন্ডের হওয়ার কথা রয়েছে। রাউন্ডও হবে তিন মিনিটের। 

এটাকে একটা ভালো পদক্ষেপ বলছে ওয়ার্ল্ড বক্সিং অরগানাইজেশন, ওয়ার্ল্ড বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং ফেডারেশন। এর মাধ্যমে ক্রীড়া ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বিশ্ব।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান


ভেষজ উদ্ভিদের চাষে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন নারীরা 

চীনের নারীরা পরিশ্রমী। তাদের রয়েছে অনেক সৃজনশীল চিন্তাভাবনাও। চীন এখন তার পুরো জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। এর  পিছনে নারীদের শ্রম একটি বিশাল ভূমিকা রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে নারীরা তাদের দীর্ঘদিনের লালিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে চিলিন প্রদেশের সানডাওকোও টাউনের একটি গ্রামে। চলুন শোনা যাক সেই গল্প। 

 

চিলিন প্রদেশের সানডাওকোও টাউনের আরদাওকোও গ্রাম। পাহাড়ি এই গ্রামটি একসময় ছিল দারিদ্র্য পীড়িত। কিন্তু এই গ্রামের অবস্থা এখন অনেকটাই বদলে গেছে। আর এই বদলে দেয়ার কাজে বড় ভূমিকা রেখেছে নারীদের উদ্যোগ ও পরিশ্রম। 

এই গ্রামের উইমেন ফেডারেশনের চেয়ারওম্যান চাং সিউচুয়ান তুলে ধরেন সেই সাফল্যের গল্প। তিনি জানান, গ্রামের অধিবাসীরা এখন ভেষজ উদ্ভিদ চাষ করে তাদের রোজগার বাড়িয়েছেন।

 

চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো উওয়েইচি নামের এক ধরনের উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ শরীরে ফ্লুইড বাড়াতে সাহায্য  করে এবং স্নায়ুকে শীতল রাখে। 

আবহমান কাল থেকেই এই গ্রামে এই উদ্ভিদটি জন্মায়। কিভাবে এই উদ্ভিদটি জন্মায় এবং কোথায় পাওয়া যায় এটা গ্রামের প্রবীণ নারীরা জানতেন। সাম্প্রতিক গ্রামীণ অর্থনীতি পুনর্জীবনের সময় স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রয়োজনীয় উদ্ভিদটি বাণিজ্যিকভাষে চাষ করা হবে। গ্রামীণ নারীরা মূলত এই কাজে এগিয়ে আসেন। তারা এই চাষে অংশ নেন। 

 

চাং বলেন, ‘ উওয়েইচি বিক্রি করে বাড়তি আয় হয়েছে। এদিয়ে গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। গ্রামে নতুন ঘরবাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে।’

বর্তমানে উওয়েইচির বাজারের আকার ৩.৫৭ বিলিয়ন ইউয়ান। বর্তমানে এই গ্রামের ৮০ হেকটরের বেশি জমিতে এই উদ্ভিদের চাষ হচ্ছে। প্রবীণ নারীরা এর চাষপদ্ধতি নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন নতুন প্রজন্মকে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান


তিব্বতি নারীদের কাজ নিয়ে ফ্যাশন শো 

খোলা আকাশের নিচে সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক ফ্যাশন শো। এই ফ্যাশন শোতে প্রদর্শিত হচ্ছে তিব্বতি নারীদের কারুশৈলী। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মায়োর গ্রামে নেছেন খাংসাং পাহাড়ের বুকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ফ্যাশন শো। এর আয়োজন করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার নারী কুয়ো সিউলিং। তার ব্র্যান্ডের নাম স্যান্ড রিভার। 

 

মূলত তিব্বতি নারীদের কারুশিল্প তুলে ধরার জন্য এই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছেন কুয়ো। তিনি শাংহাইভিত্তিক তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি তিব্বতি নারীদের হস্তশিল্পের নিদর্শগুলো পৌছে দিচ্ছেন সকলের কাছে। তিনি মনে করেন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সংরক্ষণ এবং স্মার্ট উপায়ে সেগুলো বাজারজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় নারীদের আয়বৃদ্ধির কাজ করা সম্ভব হবে।

 

তিনি জানান এরমধ্যেই শুধু দেশ নয়, বিদেশের ক্রেতারাও পোশাকগুলো পছন্দ করেছেন। এই পোশাকগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন ম্যাটেরিয়াল নষ্ট হয় না। বাড়তি কাপড় দিয়ে ছোট ছোট একসেসরিজ তৈরি করা হয় যা পোশাকটির সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যায়।

নারীদের এই হাতের কাজগুলো ফ্যাশনজগতে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করার সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন। 


সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম,  হোসনে মোবারক সৌরভ

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল