আধুনিকায়ন সবাই চায় তবে এটি এক কঠিন কাজ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাত্র ২০টির মতো দেশ আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কীভাবে আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন সম্ভব? গতকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ আন্তর্জাতিক শীর্ষ সহযোগিতা ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায় চীন। তিনি বলেন, চীন একসাথে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণকে উচ্চ মানের উন্নয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বের নানা দেশের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট সি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ মানের যৌথ নির্মাণ এগিয়ে নিতে ৮টি কার্যক্রমের কথা ঘোষণা করেন, যাতে প্রতিফলিত হয় আগামী ১০ বছরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণের সুন্দর প্রত্যাশা ও বাস্তবায়নের উপায়।
এ সম্পর্কিত একজন বিশেষজ্ঞ চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, শতাধিক বছরে নজিরবিহীন অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জের মুখে প্রসিডেন্ট সি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ মানের উন্নয়ন বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছেন। চীন উত্থাপিত ৮টি কার্যক্রমের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ও বাস্তব। এটা যেমন নতুন যুগের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ মানের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা, তেমনি বিশ্বের আধুনিকায়নে আগামীর চালিকাশক্তি। একটি বৃহৎ দেশ হিসেবে চীন বিশ্বের সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব বহন করছে।
গত ১০ বছরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রস্তাবের আওতায় ‘সার্বিয়ার স্মেডেরেভো ইস্পাত কারখানা, মালদ্বীপের ক্রস-সি ব্রিজ, নাইজেরিয়ার দুর্গম গ্রামের নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং নানা দেশের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে সহায়তা করা হয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নানা দেশের ভারসাম্যহীন উন্নয়ন এখনও একটি বড় সমস্যা। ধনী-দরিদ্র এবং উত্তর-দক্ষিণ ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্বের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তা ব্যাপকভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, বিশ্বের আধুনিকায়ন শান্তি, উন্নয়ন, সবার জন্য লাভজন এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য হতে হবে। তাহলে এ উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ মানের যৌথ নির্মাণ কী কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
দীর্ঘ সময় ধরে অনেক উন্নয়নশীল দেশ মনে করতো আধুনিকায়ন মানে পশ্চিমীকরণ। তারা পশ্চিমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, তবে তাতে ফল হয়নি। তারা নতুন একটি পথ খুঁজে পেতে চায়। গত ১০ বছরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও ভাগাভাগির ধারণায় অবিচল থেকে চীন ও সংশ্লিষ্ট দেশ উভয়ের কল্যাণ অর্জন করেছে। উচ্চ মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণ নানা দেশের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে একটি কার্যকর পথ দেখিয়েছে।
এবারের শীর্ষ ফোরামে আন্তঃযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও উন্মুক্তকরণের বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তোলা, বাস্তব সহযোগিতা, সবুজ উন্নয়ন বাস্তবায়নসহ নানা বিষয় নিয়ে ৮টি কার্যক্রম উত্থাপন করে চীন। সহজে বোঝা যায় যে, এ কার্যক্রমগুলো একদিকে যেমন বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চালিকাশক্তি দুর্বল হওয়াসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে, তেমনি যুগ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এতে যেমন রয়েছে বাস্তব পদক্ষেপ তেমনি রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা, যা বিশ্বের আধুনিকায়নে নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে।
কিছু দিন আগে, চীন ও ইন্দোনেশিয়া-নির্মিত জাকার্তা-বান্দুং হাই স্পিড রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। ট্রেনটি চীন ও ইন্দোনিশেয়ার উচ্চ মানের উন্নয়ন এগিয়ে নিয়েছে এবং মানুষেরা বিশ্বাস করে যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণের সুন্দর একটি ভবিষ্যত রয়েছে। কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে কাজটি সফলভাবে করা সম্ভব। আগামী ১০ বছরে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ মানের যৌথ নির্মাণ নানা দেশের আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং মানবাজতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির গঠনকে এগিয়ে নেবে। (শিশির/রহমান/রুবি)