এবারের পর্বে রয়েছে
১. যেভাবে সমৃদ্ধ হলো ইনার মঙ্গোলিয়ার কৃষকরা
২. স্মার্ট কৃষি পদ্ধতি বাড়াচ্ছে ফলন
৩. গাছের আইডি কার্ড
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
যেভাবে সমৃদ্ধ হলেন ইনার মঙ্গোলিয়ার কৃষকরা
আধুনিক কৃষিতে দারুণ কার্যকর সমবায় সমিতি কৃষি প্রকল্প। একটি গ্রামের কৃষকরা যখন এক হয়ে কাজ করতে পারেন, তখন আসলেই বড় পরিবর্তন আসে। বড় পরিসরে কাজ করার কারণে, একইসঙ্গে ধান চাষ, কাঁকড়া চাষ, মাছ চাষ এবং অন্যান্য প্রাণীও লালন পালন করা যায়। বলছি ইনার মঙ্গোলিয়ার একটি গ্রামের কথা। এখানে রয়েছে পর্যটকদের জন্যও অবকাশ কাটানোর চোখজুড়োনো জায়গা।
এ যেন এক কাশ্মিরী গ্রাম ! ইনার মঙ্গোলিয়ার এই হালাহি গ্রামটি যেন পর্যটনের দারুণ এক লীলাভূমি।
এটি মূলত একটি সমবায় সমিতি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা সবাই মিলে একজনকে জমির দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য হলো তিনি যেন বড় পরিসরে ভালো কিছু করতে পারেন এবং বছর শেষে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায় তার সমান ভাগে সবার মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়।
চাং চুং সিন, স্থানীয় সমবায় সমিতির প্রধান
“আমাদের এই সমন্বিত চাষাবাদ পদ্ধতিতে আমরা একই সঙ্গে ধান চাষ করি, কাঁকড়া চাষ করি এবং রাজ হাঁসের লালন পালন করি। এছাড়াও অনেক ধরনের মাছ চাষ করতে পারি আমরা। এসব কাজের জন্য প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ধীরে ধীরে এই কাজে আমরা দক্ষ হয়ে উঠি। এই খামারে প্রায় ৩০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা সবাই মিলে আমাদের ভালো ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছি।“
একদিকে ধান চাষ, অন্যদিকে কাঁকড়া চাষ করা হচ্ছে ছোট্ট পুকুরে। ঠিক পাশেই একটি বড় লেক, যেখানে পর্যটকরা আসেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে মাছ ধরেন। এখান থেকে কিন্তু বেশ ভালো মুনাফা আসে।
বড় আকৃতির মাছগুলো অনেকটা বাংলাদেশের কার্প মাছের মত। ঠিক ঐরকম বেশ কিছু ধরনের মাছ তারা ধরেছেন এবং এখানে দেখতে পাচ্ছেন যে কয়েকজন নারী মৎস্য শিকারি ও রয়েছেন তারাও মাছ ধরছেন।
হো লি ইউয়ান, হালাহি গ্রাম থেকে আসা পর্যটক
"আমি অনেক দূর থেকে এখানে এসেছি। আমার খুবই ভালো লাগছে। এখানে আমি লোকজনকে মাছ ধরতে দেখলাম। এটা খুবই আনন্দের একটা ব্যাপার। আবার সাদা সাদা রাজহাস দেখেছি। দূর থেকে ডাকলে এগুলো কাছে চলে আসে।এত সুন্দর জায়গায় এসে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।"
অক্টোবরে গাছের পাতাগুলো সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করে। এখানে একরকম প্রকৃতির সঙ্গে পাহাড়, নীল আকাশ, নীচে সুবিশাল ধানের ক্ষেত। সব মিলিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য। আমরা সাধারণত কাশ্মীর কিংবা সুইজারল্যান্ডে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখি, সেটা কিন্তু চীনের এই ইনার মঙ্গোলিয়ায় এসে দেখলাম। এখানে একটি পর্যটন বাড়ি আছে যারা দূর থেকে আসেন তারা এখানে রেস্ট নেন এবং সব মিলিয়ে বলা যায় এটি একটি দারুণ জায়গা।
এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা এবং কৃষকদের বেশ শিক্ষণীয় কিছু বিষয় আছে। একটি গ্রামের সবাই মিলে যদি এক হতে পারে তাহলে সেখানে সরকারি সহযোগিতাও পাওয়া সম্ভব। এভাবেই ছোট গ্রাম থেকে বড় পরিবর্তন আসে, আর প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
স্মার্ট কৃষি পদ্ধতির ফলে ফলন বাড়ছে
চীন জুড়ে এখন চলছে শরৎ-হেমন্তকালীন ফসল সংগ্রহের মৌসুম। এবছর বাম্পার ফলন হচ্ছে। স্মার্ট কৃষি পদ্ধতির ফলে ফলন বাড়ছে । ফসল সংগ্রহও হচ্ছে দ্রুত ও কার্যকরভাবে। মৎস্য চাষ ও সংগ্রহ করা হচ্ছে স্মার্ট পদ্ধতিতে।
এই স্মার্ট ফসল ও মাছ সংগ্রহ পদ্ধতি সেদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ভূমিকা রাখছে।
চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে এখন চলছে অটাম হারভেস্ট। শরৎ ও হেমন্তকালীন ফসল তোলার ধুম লেগেছে মাঠে মাঠে। আর এই ফসল তোলায় কাজ করছে স্মার্ট পদ্ধতি। ফসল ও মাছ চাষে স্মার্ট পদ্ধতি প্রয়োগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।
এ বছর চীনে বাম্পার ফলন হয়েছে। সিচুয়ান প্রদেশের ছোংচৌ সিটিতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ধানের ফসল উঠছে। উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের তাছাং প্রিফেকচারের শাওয়ান সিটির আনজিহাই টাউনে চলছে এখানকার বিখ্যাত ঝাল মরিচ সংগ্রহের পালা। হোমটাউন অব চিলি পিপারস ইন চায়না নামে খ্যাত এই স্থানের ক্ষেতে খামারে এখন লাল মরিচ সংগ্রহ ও শুকানোর পালা চলছে।
দক্ষিণ চীনের কুইচোও প্রদেশে কিউই ফল তোলার মৌসুম চলছে। তাজা ফল তোলা হচ্ছে বাগান থেকে। ফিংথান গ্রামের ৯৪ শতাংশ জমিতে কিউই ফলের চাষ হয়। এতে স্থানীয় কৃষকদের আয় বেড়েছে।
মাছ ধরার শরৎকালীন পালা চলছে এখন। চিয়াংসি প্রদেশের সিনইয়ু সিটির ফেইরি লেকে মাছ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। ৪০ দিন ধরে মাছ ধরা হয়। চলতি মৌসুমে ফেইরি লেক থেকে পাঁচ লক্ষ কেজি মাছ ধরা হবে যা থেকে আয় হবে ৬ মিলিয়ন ইউয়ান বা আট লক্ষ মার্কিন ডলার।
পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের ইয়ান থাই সিটির মেরিন খামারগুলোতে মাছ সংগ্রহের পালা চলছে। এখানে মাছ তোলা দেখতে আসছেন পর্যটকরাও। এখানকার ssপরিবেশ, মৎস্যচাষ, খাদ্য এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারছেন পর্যটকরা।
শরৎ-হেমন্তকালী ফসল তোলার স্মার্ট পদ্ধতির ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে চীনে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
গাছের জন্য আইডি কার্ড তৈরি করছে চীন
বহুকাল ধরে বিরল প্রজাতির গাছের অভয়াণ্য ইউলং স্নো পর্বত। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের এই পর্বতে নেওয়া হয়েছে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। বিরল প্রজাতির প্রতিটি গাছকে খুঁজে পেতে তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল আইডি কার্ড। যেখান থেকে খুব সহজেই জানা যাবে গাছের অবস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য ।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে সব সময় আন্তরিক থাকে চীন সরকার। ভূমিকা রাখে বৈজ্ঞানিক জরিপের কাজেও।
২০২০ সাল থেকে চীন সরকার ইউলং স্নো পর্বতের উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। চলছে উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের বৈজ্ঞানিক জরিপের কাজ। আর এই জরিপে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখছে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং স্থানীয় বন ও তৃণভূমির প্রশাসনিক বিভাগ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় এই পর্বতের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। এখানে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে তৃণভূমি। আর এই তৃণভূমির ২৫ হেক্টর জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক নমুনা, পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণায়।
গবেষকরা বলছে, এই তৃণভূমি এলাকায় প্রভাবশালী গাছ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে স্প্রুস । প্রাচীন এবং বিরল স্প্রুস গাছগুলো এই পর্বতকে করে তুলেছে আরও বেশি মূল্যবানর। এজন্যই প্রতিটি গাছের জন্য করা হয়েছে ডিজিটাল আইডি কার্ড।
বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বলছে, এই পর্বত উদ্ভিদ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এখানে রয়েছে দেড় হাজারেও বেশি প্রজাতির গাছ।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী