সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথ কল্যাণ লাভের উদ্ভাবনী পথ- রেশমপথের সঙ্গে যাত্রা
2023-10-17 16:53:33


উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দশ বছর আগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই-এর প্রস্তাব ছিল একটি উদ্ভাবনী বিষয়। দশ বছর ধরে অনুশীলনে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ উদ্ভাবন বিআরআই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নে দৃঢ় প্রাণশক্তি যোগানোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, প্রযুক্তিগত যোগাযোগ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথ কল্যাণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। 

 

মিশরীয়দের দৈনন্দিন জীবনে গম অপরিহার্য। দেশটিতে রয়েছে গম চাষের সাত হাজার বছরের ইতিহাস। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে।

মিশরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উপগবেষক আব্দুল্লাহ খালিদ বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। গম খাতের গবেষক হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হলো গমের উন্নয়ন ও সুবিন্যাস করে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা।”

 

গমের প্রজাতি পরিবর্তন করতে চাইলে বীজ লালনের নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। মিশরে ঐতিহ্যবাহী বীজ লালনের প্রযুক্তিতে অন্তত ৬ বছর লাগবে! কিভাবে বীজ লালনের হার উন্নত করা যায়? এ বিষয়ে বরাবরই গবেষণা করছেন আব্দুল্লাহ খালিদ। এ সময় তিনি চীনের বীজ লালনের প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

তিনি নতুন প্রযুক্তি শিখতে চীনে আসতে চান। ছ’বছর আগে তাঁর বন্ধু তাকে বলেছিলেন, বিআরআই’র সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিনিময়ের প্রকল্প পরিচালিত হয় চীনে। এ প্রকল্পের কারণে আবদুল্লাহ’র স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি চীনের ইয়ুননান প্রদেশে এক বছর গবেষণা দলের একজন সদস্য হিসেবে বীজ রোপণ থেকে ফলন পর্যন্ত পূর্ণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পেরেছেন এবং অগ্রসর বীজ লালনের প্রযুক্তি শিখেছেন।

 

তরুণ বিজ্ঞানীদের ওই বিনিময় প্রকল্পের আসল নাম ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর তরুণ ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের চীনে কাজ করার পরিকল্পনা। এটি বিআরআইয়ের আওতাভুক্ত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্ভাবনী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রকল্প।  ২০১৭ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রথম বিআরআইয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামে বিআরআইকে উদ্ভাবনী পথ তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন। এ বছরে ‘বিআরআইয়ের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উদ্ভাবনীময় পরিকল্পনা শুরু হয়। যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তিগত হস্তান্তর করা এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিনিময় এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্যানের সহযোগিতাসহ নানা বাস্তব ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উদ্ভাবনী সক্ষমতা উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ১০ হাজার তরুণ বিজ্ঞানী চীনে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও কাজ করতে আসেন। মিশর সর্বপ্রথম বিআরআইয়ে অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে এ প্রকল্প সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। গত বছর তরুণ ডক্টরেট আহমেদ এরফানা আব্দুল্লাহ খালিদের পরিচয়ে এ প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন। তারপর তিনি ইয়ুননান প্রদেশে বীজ লালনের প্রযুক্তি শিখতে আসেন।

 

ইয়ুননান প্রদেশের কৃষি বিজ্ঞান একাডেমির ডিএইচ নামের প্রকল্প বেশ কয়েকটি স্বাধীন মেধা সম্পত্তি অধিকার পেয়েছে। চীনের গবেষকদের সাহায্য কিছু কিছু নির্ণায়ক প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছেন এরফানা। বর্তমানে এক বছরের প্রান্তিকে এরফানা নিজের লালিত গমের ডিএইচ বীজ পেতে যাচ্ছেন।

শুধু একতরফাভাবে শেখা যায় না। দুটি মিশরের পণ্ডিতের সফর চীনা গবেষণা দলের জন্য নতুন নমুনা ও ধারণা দিয়েছে।

ইয়ুননান প্রদেশের কৃষি একাডেমির খাদ্যশস্য গবেষণালয়ের গম প্রযুক্তিবিষয়ক দলের প্রধান ইয়াং মু চিন বলেন, ‘তাদের রোগ প্রতিরোধক উপাদান এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধক উপাদানের সঙ্গে মেশালে এ প্রজাতির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও উন্নত হয়।”

 

একটি ছোট বীজ বহন করে অভিন্ন স্বপ্ন। দুপক্ষ যৌথভাবে পরস্পরের কাছ থেকে শিখেছে। এটি রেশমপথের চেতনা- শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, উন্মুক্তকরণ ও সহনশীলতা, পারস্পরিক শিক্ষা গ্রহণ এবং উভয়ের কল্যাণ লাভের বাস্তব প্রতিফলন।

(রুবি/তৌহিদ/লাবণ্য)