চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-স্পোর্টস
2023-10-16 15:30:11

সম্প্রতি হাংচৌ এশিয়ান গেমস চীনের হাংচৌ শহরে আয়োজিত হয়। গেমসের একটি জনপ্রিয় ইভেন্ট ছিল ই-স্পোর্টস। ই-স্পোর্টস ভিডিও গেমসের একটি রূপ। এর সম্পূর্ণ নাম ইলেকট্রনিক স্পোর্টস। গত ২ অক্টোবর চীনের খেলোয়াড়রা হাংচৌ ইস্পোর্টস কেন্দ্রে মঙ্গোলিয়ান দলকে পরাজিত করে এ ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করে। হাংচৌ এশিয়ান গেমস চলাকালে চীনা দল এ ক্রীড়ায় মোট ৪টি স্বর্ণপদক আর ১টি ব্রোঞ্জপদক লাভ করে।

বস্তুত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার স্কেল অনেক বেড়েছে। চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকট্রনিক স্পোর্টস কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমাজে ই-স্পোর্টস প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।

ই-স্পোর্টস শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও চীনা সমাজে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০১৬ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগরি স্কুলের ১৩টি নতুন বিষয় যুক্ত করে, যার মধ্যে ই-স্পোর্টস ও প্রশাসন মেজর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তখন থেকে ই-স্পোর্টস শিক্ষাদান আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাসের একটি অংশ পরিণত হয়েছে। তবে, শিক্ষক, প্রশিক্ষণ কোর্স, আর সমাজের স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ই-স্পোর্টস ব্যাপক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হচ্ছে। দক্ষ ই-স্পোর্টস ক্রীড়াবিদ গড়ার সঠিক পথ কী, এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

২০২২ সালে চীনের ই-স্পোর্টসসংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ খাতে চীনের বার্ষিক আয় ১৪৪৫০ কোটি ইউয়ান। উক্ত সালে দেশের ভিতরে মোট ১০৮টি ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যদিও এ শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, তবে সংশ্লিষ্ট দক্ষ ব্যক্তির চাহিদাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চীনা সরকারের সংশ্লিষ্ট তদন্তে ই-স্পোর্টস খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি এবং এ খাতে দক্ষ ব্যক্তির অভাব প্রায় ১৫ লাখ।

এ সম্পর্কে চীনের শাংহাই চিয়াওথং বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া ও সম্প্রচার একাডেমির অধ্যাপক স্যু চিয়ান বলেন, বর্তমানে চীনে দক্ষ ই-স্পোর্টস ব্যক্তিত্বের অভাব প্রকট। এর সাথে চীনা সমাজে ই-স্পোর্টসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য ক্রীড়ার সাথে ই-স্পোর্টসের তুলনাটা একটি বড় ইস্যু।  চীনারা ই-স্পোর্টসের ব্যাপারে এখনও সন্দিহান। অনেকে মনে করেন, ই-স্পোর্টস মানে গেমস, যা ভুল ধারণা। এটা ঠিক যে, কোনো কোনো ধরনের কম্পিউটার গেমস ই-স্পোর্টসের অন্তর্ভুক্ত, তবে সকল গেমস ই-স্পোর্টস নয়।

চীনের শানতুং ক্রীড়া একাডেমির মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি শাখা একাডেমির উপ-প্রধান ইয়ান হং ছিয়াও বলেন, একটি ক্রীড়া হিসেবে ই-স্পোর্টসের অন্য ঐতিহ্যিক ক্রীড়ার সাথে মিল রয়েছে। যেমন, নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মের অধীনেই ই-স্পোর্টসে অংশ নেন সংশ্লিষ্ট ক্রীড়াবিদরা।

এবার হাংচৌ এশিয়ান গেমসে ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতা দাবা ইভেন্টের মতো সমান মর্যাদা পায়। বর্তমানে ভার্চুয়াল বাস্তবতা আর সিমুলেটেড ক্রীড়া ধীরে ধীরে এ খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে।

চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ই-স্পোর্টস প্রশিক্ষণের পথে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে দিতে হবে। এতে আরও বেশি দক্ষ ও উপযুক্ত শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। ২০১৯ সালে চীনের শানতুং ক্রীড়া একাডেমি প্রথম দফায় ই-স্পোর্টস বিষয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী ভর্তি করে। সেটি ছিল চীনের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ই-স্পোর্টস মেজর। চার বছর পর প্রথম দফার ই-স্পোর্টস শিক্ষার্থীরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হয়।

তবে, এখনও চীনে উচ্চশিক্ষা খাতে ই-স্পোর্টস একটি মেজর হিসেবে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে ই-স্পোর্টস ও প্রশাসন মেজর চালু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৫টি আর কলেজের সংখ্যা ১৬৫টি। এদের মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মেজরে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে। এর পিছনের কারণ বিশ্লেষণ করে শিক্ষক ইয়ান বলেন, কলেজ পর্যায়ে ই-স্পোর্টস প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে পেশাদার নির্দেশনার অভাব রয়েছে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের ধরণও স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি আছে দক্ষ শিক্ষকের অভাব। তাই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা তেমন ভালো শিক্ষা পায় না। বিশেষ করে, যে সকল শহর উন্নয়নের দিক দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে আছে, সে-সব শহরে ই-স্পোর্টস শিক্ষাও দুর্বল।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্লাবের মাধ্যমে পেশাদার ই-স্পোর্টস ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে ইস্পোর্টস বিভাগ চালু করাও অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শাংহাই চিয়াওথং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যু চিয়ান। তাঁর দৃষ্টিতে ইস্পোর্টস একটি নতুন ক্রীড়া, যেখানে দক্ষ ব্যক্তিদের দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্সের মাধ্যমে আরও বেশি উপযোগী ও গুণগত মানসম্পন্ন ইস্পোর্টস ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পেশাদার ইস্পোর্টস খেলার ভাষ্যকার এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরি। যারা ইস্পোর্টস ও মিডিয়া সম্প্রচারের বিষয় জানেন, তারা এমন কাজ করতে পারেন। তাই ইস্পোর্টস মেজর শুধু একটি আলাদা বিষয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া, সংবাদ সম্প্রচার ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মেজরের দক্ষ শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে বহুমুখী দক্ষ ব্যক্তি গড়ে তোলা সম্ভব।

দক্ষ শিক্ষক তৈরি করতে শানতুং ক্রীড়া একাডেমি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ২০২৩ সালে এ একাডেমির একজন ইস্পোর্টস স্নাতক শিক্ষার্থী একটি সুবিখ্যাত ইস্পোর্টস কোম্পানিতে যোগ দেন। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ইস্পোর্টস ঘাঁটি নির্মিত হয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি আরও বেশি ইন্টারশিপের সুযোগ পেয়েছেন এবং তাঁর দক্ষতাও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট জরিপ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ইস্পোর্টস খেলার সাথে জড়িত কর্মসংস্থানের ধরন শতাধিক রকমের, তাই ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে এখানে। ভবিষ্যতে আরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সহযোগিতায় দেশে দক্ষ ইস্পোর্টস ক্রীড়াবিদ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।

(সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)