চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
৪০তম পর্বে যা থাকছে:
* শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করলো চীন
* নতুন খনিজ আবিষ্কার করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা
* অনুমোদন পেল চীনের উড়ন্ত ট্যাক্সি
শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করলো চীন
কম্পিউটারের সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। আমাদের প্রতিদিন ব্যবহার করা কম্পিউটারগুলো আর কতইবা শক্তিশালী। সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরা একটি নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছেন, যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের চেয়েও অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে বিশেষ কম্পিউটিং কাজ করতে পারে।
গত শতাব্দী-জুড়ে যে ধরনের কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর চাইতে একেবারে ভিন্ন উপায়ে কাজ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিজ্ঞানীরা এখন এই নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার উদ্ভাবনের জন্য পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
তারা বলছেন, এখনকার সাধারণ একটি কম্পিউটারকে যদি গরুর গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে তুলনা করা যাবে দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন কিংবা রকেটের সঙ্গে। এই দুটো কম্পিউটার হয়তো একই কাজ করে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তারা একেবারেই আলাদা।
পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের রাজধানী হ্য-ফেইয়ের বিখ্যাত চীনা কোয়ান্টাম পদার্থবিদ প্যান চিয়ান ওয়েই এবং তার নেতৃত্বাধীন একটি দল ‘চিওচাং ৩.০’ নামের এ কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি তৈরি করেছেন। এটি ফোটন (আলোকরশ্মি) চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যসব কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ২৫৫টি ফোটন শনাক্তের সক্ষমতা রয়েছে এ কম্পিউটারটির।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা আমেরিকান বৈজ্ঞানিক জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, সেরা ক্লাসিক্যাল অ্যালগরিদম দিয়ে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে একই বিতরণ থেকে একটি একক আদর্শ নমুনা তৈরি করতে সুপার কম্পিউটার ফ্রন্টিয়ারের প্রায় ৬০০ বছর সময় লাগে, সেখানে একই ধরনের একটি নমুনা তৈরি করতে চিওচাং ৩.০ মাত্র ১ দশমিক ২৭ মাইক্রোসেকেন্ড সময় নেয়।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্যানের দল চিওচাং ১.০ তৈরি করে। এটি ছিল চীনের প্রথম আলো-ভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যা ৭৬টি ফোটন শনাক্ত করতে পারতো। এ ছাড়া ২০২১ সালে জিবিএস সমস্যার সমাধানে চিওচাং ২.০ তৈরি করেন, যা ১১৩টি ফোটন শনাক্তের সক্ষমতা ছিল।
সাধারণত তিন ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটার রয়েছে। এগুলো হলো- ইলেকট্রন, অ্যাটম ও ফোটন বা আলোকরশ্মিভিত্তিক।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
নতুন খনিজ আবিষ্কার করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা
পারমাণবিক শিল্পে ব্যবহার করা যাবে এমন একটি নতুন খনিজ আবিষ্কার করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। দেশটির উত্তর চীনের ইনার-মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বাওথু শহরে এ খনিজ আবিষ্কার করেন তারা। খনিজটি সুপারকন্ডাক্টিং উপকরণ উৎপাদন এবং সুপারঅ্যালয় তৈরি করতে পারে। চীনের জাতীয় নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন এ সব তথ্য জানিয়েছে।
বেইজিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব ইউরেনিয়াম জিওলজির গবেষক ক্য সিয়াং খ্যুন, ফান কুয়াং এবং লি থিং নতুন এ খনিজটি আবিষ্কার করেন। ইতোমধ্যেই এই খনিজ ইন্টারন্যাশনাল মিনারোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের নামকরণ ও শ্রেণীবিভাগ থেকে দাপ্তরিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রায় সাত দশক আগে চীনের ইউরেনিয়াম ভূতত্ত্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবিষ্কৃত এ খনিজটি ১৩তম নতুন খনিজ। খনিজটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার সম্ভব এবং এর ভালো অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ছাড়া নতুন এ খনিজটি বাওথু শহরের বৃহত্তম বিরল আর্থ খনি বায়ান ওবোতে পাওয়া ১৭তম নতুন খনিজ। খনিটিতে এখন পর্যন্ত ১৭০টিরও বেশি ধরণের খনিজ পাওয়া গেছে।
নিওবোবাওটাইট নামের খনিজটি বেরিয়াম, নিওবিয়াম, টাইটানিয়াম, আয়রন এবং ক্লোরিন সমৃদ্ধ একটি সিলিকেট খনিজ।
এটি বাদামী থেকে কালো রঙের, কলাম বা প্ল্যাটের মতো আকৃতির এবং কণার আকার প্রায় ২০ থেকে ৮০ মাইক্রন।
নতুন খনিজ গবেষণাটি ২০১২ সালের প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে খনিজ আবিষ্কার কার্যক্রমের গবেষক ফান কুয়াং বলেন, “২০১২ সালে আমরা একটি জিওকেমিক্যাল প্রসপেক্টিং সাইট থেকে কিছু নমুনা এনেছিলাম। তারপরে নিওবিয়াম-সমৃদ্ধ খনিজটি আবিষ্কৃত হয়। খনির মধ্যে আবিষ্কৃত বাওটাইটের থেকে এর রাসায়নিক গঠনও ভিন্ন। তাই, আমরা ভেবেছিলাম এটি একটি নতুন খনিজ হতে পারে এবং এর সম্পর্কে আরও গবেষণা চালিয়েছি।”
আবিষ্কৃত এ নতুন খনিজটি পারমাণবিক শিল্পের জন্য অত্যন্ত সহায়ক এবং এটি আরও অনেক কিছু তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে উল্লেখ করে আরেক ক্য সিয়াং খ্যুন বলেন, “এর রাসায়নিক গঠন থেকে দেখা যায়, এটি নিওবিয়াম সমৃদ্ধ এক ধরনের বাওটাইট। এর সমস্ত উপাদানের মধ্যে নিওবিয়াম পেন্টাক্সাইড ২৬ শতাংশ।..নিওবিয়াম আমাদের দেশের একটি কৌশলগত খনিজ, যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি আমাদের পারমাণবিক শিল্পের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এটি সুপারকন্ডাক্টিং উপকরণ উৎপাদন, সুপারঅ্যালয় এবং আরও অনেক কিছু তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।”
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
অনুমোদন পেল চীনের উড়ন্ত ট্যাক্সি
সড়কে যানজটে আটকে থাকার দিন শেষ হতে চলেছে। চীনে অনুমোদন পেয়েছে চালকবিহীন উড়ন্ত ট্যাক্সি। ফলে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন, এয়ার ট্যুর, পণ্য সরবরাহ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে এ উড়ন্ত ট্যাক্সি ব্যবহার হতে পারে।
চীনের সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএএসি) দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যাত্রী বহনকারী চালকবিহীন এরিয়াল ভেহিকাল (ইউএভি) বা উড়ন্ত এ ট্যাক্সিকে ‘ফার্স্ট টাইপ’ছাড়পত্র দিয়েছে। এ ছাড়া দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এটিকে আকাশে উড়ারযোগ্য বলেও জানানো হয়েছে।
আকাশযান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইহাং উড়ন্ত এ ট্যাক্সিটি নির্মাণ করেছে। চালকবিহীন বৈদ্যুতিক উড়ন্ত ট্যাক্সি ‘ইএইচ২১৬-এস’ খাড়াভাবে যাত্রা শুরু এবং একইভাবে মাটিতে নামতে সক্ষম। এর উচ্চতা ১ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ৭৩ মিটার। সর্বোচ্চ টেকঅফ ওজন ৬২০ কিলোগ্রাম। লাগেজসহ দুজন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচলে সক্ষম এ আকাশযানটির আটটি ভাঁজযোগ্য আর্মস এবং ১৬টি প্রপেলার রয়েছে। উড়ন্ত এ ট্যাক্সিতে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধামত্তা ব্যবস্থা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলবে।
নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান ইহাং জানিয়েছে, ফার্স্ট টাইপ’ ছাড়পত্র পাওয়ার মানে হল ইএইচ২১৬-এস ডিজাইনটি সম্পূর্ণরূপে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা মান এবং আকাশে ওড়ার জন্য যেসব শর্ত থাকে সেগুলো পূরণ করেছে। অর্থাৎ মডেলটি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন, এয়ার ট্যুর, পণ্য সরবরাহ এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত। এটি সম্পূর্ণরূপে বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং দুই ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি চার্জ করা যাবে।
এ ছাড়া ফ্লাইট কন্ট্রোল এবং ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ এর মধ্যে রয়েছে একাধিক স্মার্ট ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে আরও রয়েছে হাই-স্পিড ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক, নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন ফ্লাইট অভিজ্ঞতা।
বিমান কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে চালকবিহীন বৈদ্যুতিক এ উড়ন্ত ট্যাক্সির ছাড়পত্রের আবেদন গ্রহণ করেছিল। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আকাশে উড্ডয়নের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয়। উড্ডয়নের বৈধতা প্রক্রিয়া চলাকালীন ইএইচ২১৬-এস দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন স্থানে ৪০ হাজারেরও বেশি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং গত আগস্টে চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করেছে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী