অক্টোবর ১৩: গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ছিল চীনের জাতীয় উদ্যানের প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বার্ষিকী। বিগত দুই বছরে চীনের জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা ফলপ্রসূ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে, চীন-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থা বিশ্বের পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি চীনের জাতীয় উদ্যানগুলো তুলে ধরবো।
২০২১ সালের অক্টোবর দৈত্য পান্ডা জাতীয় উদ্যান চীন-নির্মিত প্রথম দফার জাতীয় উদ্যানগুলোর একটি হয়ে ওঠে। নিবাশান করিডর হলো এ উদ্যানটির গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এটি দাসিয়াংলিং পর্বতমালা ও ছিয়ংলাই পর্বতমালার বন্য দৈত্য পান্ডা জনসংখ্যাকে সংযুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডর।
বন্য দৈত্য পান্ডার বাস্তুসংস্থান সুরক্ষা এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দৈত্য পান্ডা জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক করিডর নির্মাণের চেষ্টা নেওয়া হয়। উদ্যানটির ইংজিং জেলার সংরক্ষণ স্টেশনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা ফু মিং সিয়া বলেন, নিবাশান করিডর তৈরির উদ্দেশ্য হলো দাসিয়াংলিং পর্বতমালার বন্য দৈত্য পান্ডাগুলোকে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। দৈত্য পান্ডাগুলো ছিয়ংলাই পর্বতমালার দৈত্য পান্ডাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও বিনিময় করতে পারবে। আমরা এই করিডরটিকে ‘প্রেম করিডর’ বলি। এ করিডোরের মাধ্যমে দুটি পর্বতশ্রেণী থেকে দৈত্য পান্ডাগুলো বংশবৃদ্ধির জন্য সঙ্গী খুঁজে পাবে। এর মধ্য দিয়ে দাসিয়াংলিং পর্বতমালায় পান্ডার ক্ষুদ্র জনসংখ্যার দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা নিশ্চিত করা যাবে।
বর্তমান দৈত্য পান্ডা জাতীয় উদ্যান পান্ডা সুরক্ষা গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এ উদ্যোনের মাধ্যমে ৭০ শতাংশেরও বেশি বন্য দৈত্য পান্ডাকে সুরক্ষা করা যাচ্ছে। দৈত্য পান্ডা ছাড়াও উদ্যানটিতে তুষার চিতাবাঘ, সিচুয়ান সোনালী বানর, সবুজ লেজের রংধনু তিতির, ক্রেস্টেড আইবিসেস, ইয়ু গাছ, ডেভিডিয়া ইনভোলুক্রেটা এবং বিভিন্ন পাখি, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ, পোকামাকড় ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী সংরক্ষিত হয়েছে।
দৈত্য পান্ডা জাতীয় উদ্যান ছাড়া চীনে প্রথম দফায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় উদ্যানগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে। জাতীয় বনায়ন ও তৃণভূমি ব্যুরোর মহাপরিচালক এবং জাতীয় উদ্যান পরিচালনা ব্যুরোর মহাপরিচালক গুয়ান চি ওই বলেন, সানজিয়াং ইউয়ান জাতীয় উদ্যান ইয়াংজি নদী, হোয়াং হো নদী ও ল্যাঙ্কাং নদীর উত্সগুলোর সামগ্রিক সুরক্ষা অর্জন করেছে। বর্তমানে বন ও ঘাস আচ্ছাদনের হার ৭৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং তিব্বতীয় হরিণের জনসংখ্যা ৭০ হাজার অতিক্রম করেছে। সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান সুরক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে একীভূত করে একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং চিতাবাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত বন্য সাইবেরিয়ান বাঘের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে এবং বন্য আমুর চিতাবাঘের সংখ্যা ৬০ অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে হাইনান ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট জাতীয় উদ্যান গিবন সংরক্ষণ গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ছয়টি প্রজাতির গিবনের সংখ্যা ৩৭-এ পৌঁছেছে। উইশান জাতীয় উদ্যানে রেইন গড হর্নড টোড এবং ফুজিয়ান গ্যাস্ট্রোডিয়া এলাটাসহ ১৭টি নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে।
অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনের জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা মূল্যাবান। বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি ভাল অভিজ্ঞতা। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী কার্স্টেন গ্রোড-কর্ভিট সম্প্রতি বলেন, চীনে বিস্ময়কর জীববৈচিত্র্য এবং মূল্যবান ও প্রচুর জৈবসম্পদ রয়েছে। চীন এসব সম্পদ সুরক্ষা করতে পারে।
উল্লেখ্য ‘জাতীয় উদ্যান স্থান বিন্যাস পরিকল্পনা’ অনুযায়ী চীন সারা দেশে ৪৯টি জাতীয় উদ্যান এলাকা প্রতিষ্ঠা করবে, যার মোট আয়তন হবে প্রায় ১১ লাখ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলের আয়তন হবে প্রায় ৯ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং সমুদ্রের আয়তন প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এসব জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার পর জাতীয় উদ্যান সংরক্ষণ আয়তনের দিক থেকে চীনের হবে বিশ্বের শীর্ষ দেশ। (ছাই/রহমান)