থ্রি-সু শ্রাইন
2023-10-13 13:25:15

থ্রি-সু শ্রাইন এমন একটি জায়গা, যা চীনের উত্তর সুং রাজবংশের মহান সাহিত্যিক সুন সুন, সু সি, সু চ্য-এর পুরানো বাসস্থান। তিন জন একই পরিবারের সদস্য। এই শ্রাইন একটি ছোট দ্বীপের মতো স্থানে আছে। এর তিন পাশে পুকুর, প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর।

২০২২ সালের ৮ জুন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সি ছুয়ান প্রদেশের মেই শান শহরের ‘থ্রি-সু শ্রাইনে’ এসে স্থানীয় ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সুরক্ষার অবস্থা পরিদর্শন করেন। এ সময় সি চিন পিং বলেন, “...একটি থ্রি-সু শ্রাইন আমাদের চীনা সংস্কৃতির প্রশস্ততা ও গভীরতার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। আমরা সবসময় বলি, আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে হবে আর এর জন্য চীনে রয়েছে 'থ্রি-সু'।”

চীনের ইউয়ান রাজবংশ আমলের সাহিত্যিকদের পুরানো বাড়িঘরকে শ্রাইন হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে এই তিন জন মহান সাহিত্যিককে স্মরণে রাখা যায়। আর ছিং রাজবংশ আমলে স্থানটি আবারও নির্মিত হয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়।

‘থ্রি-সু’-এর মধ্যে বাবা সু সুন। ২৭ বছর বয়সের সময় কঠোর চেষ্টা করে তখনকার বিখ্যাত সাহিত্যিক হন। তিনি লেখার  সহজ শৈলী ও ভালো পারিবারিক ঐতিহ্যের ওপর জোর দিতেন এবং তাঁর দুই পুত্র, সু শি ও সু চ্য খুব সাহিত্যিক প্রতিভা ছিলেন। পিতা ও পুত্রের নিবন্ধগুলো কেবল যুগ যুগান্তরে পঠিত হয়ে আসেনি, বরং "বই পড়া, ভালো কাজ করা, সদয় ও দয়ালু হওয়া, যা ভুল তা গ্রহণ না করা, ও দুর্নীতিকে না বলার" পারিবারিক ঐতিহ্য প্রচার করেছে।

বিশেষ করে, সু শি সম্পর্কে আজও অনেক কথা প্রচলিত আছে। কথাগুলো এমন: তিনি হাংচৌ শহরের পশ্চিম হ্রদ ব্যবস্থাপনা করেছিল; সাহসের সাথে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন; মিচৌ শহরে পঙ্গপাল দুর্যোগ মোকাবিলা করেছিলেন; পরিত্যক্ত শিশুদের দত্তক নিয়েছিলেন; সুইচৌ শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করেছিলেন; কয়লার সন্ধান পেয়েছিলেন; হুইচৌ শহরে স্থানীয় লোকজনের জন্য সেতু নির্মাণে অনেক চেষ্টা করেছিলেন; দানচৌ শহরে লোকপ্রথার উন্নতি করেছিলেন ও জনগণকে শিক্ষিত করেছিলেন...। একজন কর্মকর্তা হিসাবে সু শি লোকজনের উপকার করেছিলেন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।

হাজার হাজার বছর ধরে, পিতা ও পুত্র তাদের সাহিত্য, মানবিকতা ও রাজনৈতিক কাজের জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আদর্শ মডেল হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন।

সামনের হল, ডাইনিং হল, লাইফেং হল... চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে লোকেরা তিন দিকে জলে ঘেরা দীর্ঘ প্রাচীন শ্রাইনে ঘুরে বেড়াযন, বীরদের সৎ পারিবারিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানান।

“পারিবারিক ঐতিহ্য ও শিক্ষা হলো একটি পরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার। পারিবারিক শিক্ষা ও পারিবারিক ঐতিহ্য নির্মাণে মনোযোগ দিতে সমগ্র সমাজকে উন্নত করতে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের অনুভূতি আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের পরিবার ও দেশের জন্য, এবং দেশ ও সমাজের জন্য উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চেষ্টা করতে হবে। পরিদর্শনকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এমন কথা বলেন।

সু সুন, যিনি অল্প বয়সে "শিক্ষা ছাড়াই ঘুরে বেড়াতেন", তিনি ক্লাসিক ও ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ার ও ছেলেদের শেখানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী ছেং-এর যত্নে দুই ছেলে সু শি ও সু চ্য সরকারি পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ ফলাফল পেয়েছিলেন এবং সারা দেশে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তারপর থেকে, "থ্রি –সু পরিবার" সমাজের ও জনগণের কল্যাণকে তাদের নিজস্ব দায়িত্ব হিসাবে নিয়েছিল, বিশেষ করে সু শি। যদিও তার ভাগ্য ভালো ছিল না, তবুও তিনি একজন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করার এবং দেশের উপকার করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাঁর সাহিত্যিক অর্জন ও ব্যক্তিত্ব যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে আছে।

থ্রি-সু শ্রাইন পরিদর্শনের সময়, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, সিপিসির সদস্য, বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাদের অবশ্যই সৎ, পরিশ্রমী, দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে, সততার সাথে রাজনীতি করতে হবে, নিজের ও পরিবারের ভালো যত্ন নিতে হবে, নতুন যুগে কমিউনিস্টদের ভালো পারিবারিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে হবে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা সংস্কৃতির দর্শন ও প্রজ্ঞার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন এবং শাসনের ধারণাকে স্পষ্ট করার জন্য সু শির মতো প্রাচীন পন্ডিতদের বিখ্যাত কথাগুলো বারবার উদ্ধৃত করেছেন।

থ্রি-সু শ্রাইনের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় মনে হয়বে যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের ছন্দ অনুসরণ করছি। ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি প্রাচীন সভ্যতাকে প্রাণচঞ্চল করে এবং আত্মার মশাল জ্বালিয়ে দেয়।

সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য হল আরও মৌলিক, বিস্তৃত ও গভীর আত্মবিশ্বাস, এবং এটি আরও মৌলিক, গভীর ও আরও দীর্ঘস্থায়ী শক্তি।" ইট ও টাইলস, কবিতা ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে, আজকের চীনা জনগণ আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী এই ভেবে যে এই দেশে এমন লোক ছিল: যারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছেন, কিন্তু কখনও হার মানেননি, এবং জীবনের সমস্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও তাঁরা বরাবরের মতো শক্তিশালী ছিলেন। (শুয়েই/আলিম)