আকাশ ছুঁতে চাই ৩৯
2023-10-12 17:23:55

১.  পরিশ্রমী নারী লিয়াও চেমেং

২. মায়ের ভূমিকায় কোমল পিস্তসোভা

৩. বিউফিট: নারীদের ফিটনেস নিশ্চিত করছে

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

পরিশ্রমী লিয়াও চেমেং

পরিশ্রমী নারী লিয়াও চেমেং । ফুড ডেলিভারি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। ছোংছিং মহানগরীর এই পরিশ্রমী নারী রাত বিরেতে বিরূপ আবহাওয়াতেও ছুটে যান অর্ডার অনুযায়ী খাবার পৌছে দিতে। তার জীবনে আছে প্রেম, আছে আনন্দ। চলুন তার জীবনের গল্প শুনি ।

                                             

 

ব্যস্ত শহর ছোংছিং। রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খাওয়ার সময় নেই অনেকের।  তাদের জন্য ঠিক সময়ে খাবার পৌছে দিচ্ছেন লিয়াও চেমেং। এই তরুণী ফুড ডেলিভারির কাজ করেন।

দিন বা রাত যেকোন সময় মানুষের দোরগোড়ায় তিনি পৌছে দেন তাদের অর্ডার করা খাবার। বসন্ত উৎসবের ছুটি কিংবা মধ্য শরৎ উৎসব, শীত অথবা ঝড় বৃষ্টি, ঠিকই পৌছে যান লিয়াও। শহরের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে মোটর বাইক যেতে পারে না। তেমনি পাথুরে উঁচু সিঁড়ি ভেঙেও হাসিমুখে কাজ করে যান লিয়াও।

লিয়াও চেমেং বলেন, ‘এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে বাইক চলে না। আমরা সেখানে ফুড ডেলিভারি দিতে পৌছে যাই।’

সাড়ে তিন বছর আগে ছোংছিংয়ের হ্যছুয়ান জেলায় তার হোমটাউন থেকে মহানগরীতে আসেন লিয়াও। তিনি দেখেন একজন ফুড ডেলিভারি ড্রাইভার পরিশ্রম করলে বেশ ভালো অর্থ রোজগার করতে পারে। লিয়াও  প্রতিটি অর্ডারে ৫ ইউয়ানের মতো রোজগার করেন। প্রতিদিন গড়ে ৬০ কিলোমিটার বাইক চালানো আর ২০ হাজার ধাপ  সিঁড়ি ভাঙতে হয় তাকে।

লিয়াও কঠোর পরিশ্রম করেন হাসিমুখে। তাকে পছন্দ করেন সহকর্মী ও পরিচিতজনরা। এমনি একজন নারী কাও। তিনি একজন বিক্রেতা।  কাও বলেন, ‘আমি একবার আমার ফ্রাইয়ার বাসকেট ফেলে এসেছিলাম। তাকে একটু উপকার করতে বলি। সে খুশি হয়ে আমাকে সাহায্য করে। বাইক চালিয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে যায় আবার পৌছে দেয়।’

এরপর থেকে কাও তার বন্ধু হয়ে যান।

ফুড ডেলিভারির এই পেশা থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেও খুঁজে পেয়েছেন লিয়াও। একটি ছোট রেস্টুরেন্টে লিয়াও প্রায়ই যান। সেখানকার কর্মী তরুণ সাই এসেছেন লিয়াওর হোমটাউন থেকে।

সাই বলেন  ‘আমি অনুভব করি যে, এই তরুণী কঠোর পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, হাসিখুশি। ও হাসতে ভালোবাসে। এমন নারী অবশ্যই আকর্ষণীয়।’

কোভিড মহামারীর মধ্যেও কাজ করেছেন লিয়াও। খাবার পৌছে দিয়েছেন।

লিয়াও বলেন, ‘একবার এক মা ও ছোট ছেলের জন্য ফুড ডেলিভারি করি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমি খুব বিব্রত বোধ করছিলাম। কিন্তু আমাকে অবকা করে নিয়ে সেই মা তার ছেলেকে বললেন এই আন্টিকে ধন্যবাদ দাও। উনি খাবার পৌছে না দিলে আমাদের না খেয়ে থাকতো হতো।’

এই ধরনের প্রশংসা তাকে অনুপ্রেরণা দেয়। একবার বৃষ্টির মধ্যে পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন বাইক নিয়ে। পথচারীরা তাকে সাহায্য করেছে।

লিয়াও এবং সাইয়ের মধ্যে ভালোবাসাও নিবিড়। সাই তাকে উৎসবে তাকে বিশেষ ধরনের নি-গার্ড উপহার দিয়েছেন। কারণ তীব্র শীতের ভিতর বাইক চালাতে হয় লিয়াওকে। এই নি-গার্ড তাকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাবে।

 

শুধু নি-গার্ডই নয় সাই এবং লিয়াওর প্রেম তাদের সম্পর্ককে উষ্ণ করে তোলে। লিয়াও কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে যান সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

মায়ের ভূমিকায় কোমল পিস্তসোভা

সন্তানের জন্য অনেক সময় অনেক মা তার ক্যারিয়ার ত্যাগ করেন। আবার অনেক মা তার ক্যারিয়ার ও সন্তান দুটোইকেই প্রাধান্য দেন। এমনি একজন ক্রীড়াবিদ মা উলিয়ানা। চলুন শোনা যাক তার গল্প।

হাংচৌ এশিযান গেমসে মর্ডান পেনটাথলোন প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিযোগী উলিয়ানা পিস্তসোভা। হাতে ফেন্সিংয়ের সরু তলোয়ার নিয়ে কঠোর মুখে মোকাবেলা করছেন প্রতিপক্ষের। কিন্তু প্রতিযোগিতা শেষে সেই চেহারাই কোমল হয়ে ওঠে যখন কোলে নেন এক বছরের শিশুকন্যাকে। তখন তিনি হয়ে ওঠেন মা।

মাতৃত্ব ও ক্যারিয়ার দুটোর মধ্যে চমৎকার ব্যালেন্সও করছেন তিনি। কাজাখস্তানের নারী উলিয়ানার জন্ম ১৯৯৩ সালে। পাঁচ বছর বয়স থেকে পেনটাথলোনের সবগুলো ক্যাটাগরিতে তালিম নেয়া শুরু করেন। তবে ১৭ বছর বয়স থেকে পাঁচটি স্পোর্টসের মধ্যে শুধু ফেন্সিংকে বেছে নেন। কাজাখস্তানে তিনি বেশ বিখ্যাত। বিশ্বকাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

অনেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জয় করেছেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে তার কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ফেন্সিং সোর্ড নামিয়ে রেখে মেয়েকে কোলে তুলে নেন উলিয়ানা। সন্তান জন্মের মাত্র ৪০ দিন পরেই তিনি আবার প্র্যাকটিস শুরু করেন। এর মাত্র তিনমাস পরেই তিনি জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চতুর্থ স্থান পান।

ক্যারিয়ার ও সন্তান দুটোই প্রিয় তার কাছে। তবে একন যেহেতু মেয়েটি খুব ছোট তাই তার প্রতিই মনোযোগ বেশি দিতে হচ্ছে।

উলিয়ানার স্বামী কাজাখস্তান ফেন্সিং টিমের প্রধান কোচ। সন্তানের যত্ন দুজন মিলে নেন। উলিয়ানার বাবা মায়ের বেশ বয়স হয়েছে। তাই তারা শিশুটির যত্ন নিতে পারেন না। ফলে উলিয়ানা এবং তার স্বামীই শিশুকন্যার দেখভাল করেন। বেশিরভাগ সময়ই প্রতিযোগিতার আসরে শিশুকে নিয়ে আসেন উলিয়ানা। একবছরের শিশুটি দর্শকরে আসন থেকে অবাক চোখে তাকায় মায়ের দিকে। মায়ের মুখে তখন মুখোস, হাতে ফেন্সিং সোর্ড। কঠোরভাবে প্রতিযোগীকে মোকাবেলা করছেন।

আবার যেই প্রতিযোগিতা শেষে ফিরে আসেন তার কাছে , তখনি হয়ে ওঠেন স্নেহশীল  মা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

বিউফিট: নারীদের ফিটনেস নিশ্চিত করছে

আজকাল অনেক নারী তাদের শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে জিমে যান। কিন্তু নারীদের অফিস ও সংসারের ব্যস্থতা সামলে অনেক সময়ই জিমের স্কে্জুলের সঙ্গে মিল রেখে যাওয়া সম্ভব হয় না। এই সমস্যার সমাধানে নারীদের জন্য ফ্লেক্সিবল স্কেজ্যুলের ধারণা নিয়ে জিম পরিচালন করছে বিশেষ একটি জিম।

বিউফিট শুধুমাত্র নারীদের জন্য পরিচালিত একটি জিম। এই জিমের প্রতিষ্ঠাতাও একজন উদ্যোগী নারী। ২০১৯ সালে এই জিম প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোগী নারী সুন নিং। তিনি আগে ইন্টারনেট জায়ান্ট পাইতুতে কাজ করতেন।

নিজে একটি বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করায় তিনি কর্মজীবী নারীদের ফিটনেস সমস্যাটি বুঝতে পারেন। তার কাছে মনে হয়, একজন কর্মজীবী নারীকে শুধু অফিস নয়, বরং ঘরসংসারও সামলাতে হয়। এই দুই কঠিন ক্ষেত্র সামলিয়ে নিজের ফিটনেসের জন্য তিনি যখন একটু সময় পান তখন জিমে যান। কিন্তু ওই সময় তো জিম ইন্সট্রাকটরের সময়ের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। এজন্য তিনি বেইজিংয়ে এমন একটি জিম খোলেন যেখানে নারীরা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে এসেও ইন্ট্রাকটরের নির্দেশনা পাবেন।

এই জিমে নিয়মিত আসেন কুই ফাং নামে একজন নারী যিনি দুই সন্তানের মা এবং একটি ল ফার্মের অংশীদার। তিনি মনে করেন শুধুমাত্র নারীদের জন্য হওয়ায় তিনি এই জিমে আসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ এখানে পোশাক কেমন, খোলামেলা কিনা, দেখতে কেমন লাগছে ইত্যাদি নিয়ে অস্বসস্তিতে ভুগতে হয় না। পাশাপাশি অন্য নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। কখনও কখনও তারা আড্ডা দিতে পারেন এবং নিজেদের সমস্যাগুলো শেয়ারও করতে পারেন। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করার পর তার শারীরিক কিছু সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে।

৪১ বছর বয়সী সুন মনে করেন নারীদের ফিটনেস ধরে রাখতে জিমের বিকল্প নেই। তার প্রতিষ্ঠান এরমধ্যেই কয়েকটা শাখা খুলেছে। তার জিমে আসা নারীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম,  হোসনে মোবারক সৌরভ

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল