স্বর্গের মতো শহর হাংচৌ-২
2023-10-11 17:02:00

গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আপনাদেরকে জানিয়েছি, ১৯তম এশিয়ান গেমস উপলক্ষ্যে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌ এসেছি আমি ও রুবি। দুদিন কাজের পর ২৩ তারিখে উদ্বোধনের দিন এসে যায়। সেদিন আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পাইনি। তাই হাংচৌর বৈশিষ্টময় পশ্চিম হ্রদে কিছু লাইভ শো ও ভিডিও শুটিং করতে যাই আমরা। সাংবাদিক গ্রাম থেকে একটি বিশেষ বাস সার্ভিস রয়েছে, যেটিকে সাংস্কৃতিক বাস লাইন বলা হয়। এ বাসে চড়ে হাংচৌয়ের কিছু দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়। আমরা দুজন সেদিন ওই বাসে করে পশ্চিম হ্রদে যাই। বাস থেকে নেমে আসার পর আমরা স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞেস করি পশ্চিম হ্রদ কোথায়। তাদের কথা মতো চলে আমরা পরিচিত একটি জায়গায় পৌঁছে যাই। পরিচিত বলছি কেন? কয়েক বছর আগে আমরা দুজন হাংচৌ এসেছিলাম এবং দুই দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় পশ্চিম হ্রদের কাছে একটি হোটেলে ছিলাম এক রাত। আমরা এবার আবার সেই হোটেলের কাছাকাছি চলে এসেছি। সেকারণে আমি ‘পরিচিত জায়গা’ কথাটি বলেছি। ব্যাপার হলো পশ্চিম হ্রদ বড় একটি জায়গা, যার আয়তন ৬ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। এক দিক থেকে অন্য দিকে যেতে চাইলে শাটল বাসে করে যেতে হবে। যেহেতু গতবার আমরা দুজন পশ্চিম হ্রদের এই দিকে অনুষ্ঠান করেছিলাম তাই এবার অন্য দিকে পদ্মফুল দেখতে চাই। কীভাবে শাটল বাসে করে যাওয়া যায় - স্থানীয়দেরকে সেটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, ঠিক সেই মুহুর্তে কয়েকজন ভারতীর সঙ্গে দেখা হয়। শুরুতে তাদেরকে বাংলাদেশি মনে করেছিলাম, তাই বাংলা ভাষায় শুভেচ্ছা জানাই। তারাও উত্তর দেন। পরে জানতে পারি তারাও এবার এশিয়ান গেমস কাভার করতে এসেছেন এবং তারা সবাই ভারতীয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলা ভাষা বলতে পারেন; কেউ কেউ তামিল ও হিন্দি বলেন। তারা এখানে নৌকায় করে পশ্চিম হ্রদ ভ্রমণ করতে চান। তাই আমাদেরকে টিকিট কেনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। তাদের সঙ্গে আলাপের পর আমরা আবার নিজের কাজে নেমে পড়ি। আমরা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, ওইদিন এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কারণে শহরের কয়েকটি এলাকায় সাময়িকভাবে পরিবহনের ওপর বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিম হ্রদের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে মেরামত কাজ চলছে। তাই ওইদিন কোন শাটল বাস ও নৌকা সেবা ছিল না। পরে আমি নিউজে দেখি যে, ওইদিন সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নেতা পশ্চিম হ্রাদে এসেছিলেন। তাই আমরা আমাদের পরিকল্পনা কিছুটা পরিবর্তন করি। কেন আমি পদ্ম ফুলের পুকুর দেখতে চাই? আগেই আমি ও রুবি আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা ঠিক করেছি। আমি এবার এশিয়ান গেমসের তিনটি মাস্কট নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করতে চাই।

চীনের থাং রাজবংশের কবি বাই চু ই একবার বলেছিলেন, ইয়াংজি নদীর দক্ষিণে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হাংচৌ; আর তার এ কথার ভিত্তিতে জন্ম হয়েছে এবারের এশিয়ান গেমসের তিনটি মাস্কট।

তিনটি মাস্কটের নাম হলো ছং ছং, চেন চেন ও লিয়ান লিয়ান। এরা হাংচৌয়ের তিনটি বিশ্ব অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।

লিয়ান লিয়ান হাংচৌয়ের জন্ম সিহু বা পশ্চিম হ্রদে। এটি চীনের বিশ্ব অবৈষয়িক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত একমাত্র হ্রদ। লিয়ান মানে পদ্মফুল। পদ্মফুল চীনে বিশুদ্ধ ও মহত্ত্বের প্রতীক। পাশাপাশি লিয়ান মানে সংযুক্ত। পদ্মপাতার মতো সবুজ রঙের লিয়ান লিয়ান সবুজ জীবন ও স্মার্ট জীবনের প্রতিনিধি।

বেইজিং থেকে হাংচৌ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে একটি মহাখাল, যা চীনের ৪৬তম বিশ্ব অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মহাখালের হাংচৌ অংশে কুংচেন নামে একটি সেতু আছে, যেটা এখানকার প্রতীকী স্থাপনা। কুংচেন সেতুর নাম থেকে এসেছে মাস্কট চেন চেনের নাম। ৪০০ বছর আগে মহাখাল ছিল মানুষের যাতায়াতের সেতু আর এখন তা এশিয়া ও বিশ্বকে সংযুক্তকারী মনের সেতুতে পরিণত হয়েছে।

ছং ছং মানে জেড। লিয়াং চু নামে একটি প্রাচীন রাজবংশের ধ্বংসাবশেষে আবিষ্কৃত সুন্দর জেডের নাম থেকে ছং ছং তার নাম পেয়েছে। ৪-৫ হাজার বছর আগে স্থানীয়রা জেড দিয়ে পুজো করত। লিয়াংচু ধ্বংসাবশেষও চীনের ‘প্রথম নগর’ হিসেবে পরিচিত এবং এখানে রয়েছে বিশ্বের প্রথম বাঁধ। এ মাস্কট হলুদ জমিতে ফলনের প্রতীক। তাই ছং ছং হলুদ রঙের একটি রোবট।

হ্যাঁ, এ মাস্কটগুলো তিনটি রোবটও বটে। তারা প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক বিজ্ঞানের মিশ্রণের প্রতিনিধিত্ব করছে। হাংচৌ যেমন ঐতিহ্যবাহী একটি শহর, তেমনি চীনের ইন্টারনেট শহর ও ভবিষ্যতমুখী শহরও।

৮০০ বছরের আগে, ইতালির পরিব্রাজক মার্কো পোলো লিখেছিলেন, হাংচৌ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও আড়ম্বরপূর্ণ শহর। আর প্রাচীনকাল থেকে হাংচৌ মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের একটি জায়গা। এখানে আসলে আপনারা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন।

তিনটি মাস্কট ও তিনটি বিশ্ব অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। তাই মাস্কটগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে তিনটি জায়গায় যেতে হবে। মাস্কট লিয়ান লিয়ানকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা পশ্চিম হ্রদে এসেছি। লিয়ান লিয়ান পদ্মফুলের প্রতীক, তাই আমরা পদ্মফুলের পুকুরে যেতে চেয়েছিলাম। ওই দিন বৃষ্টিও ছিল। শাটল বাস না থাকার কারণে কাছাকাছি কোনও একটি জায়গায় শুটিং করতে হবে। সৌভাগ্যের বিষয়, অদূরে একটি জায়গায় আমরা একটি পদ্ম ফুলের পুকুর খুঁজে পাই। যদিও সেটি তেমন বড় নয়, তবে শুটিংয়ের জন্য যথেষ্ট। আমার ভিডিওয়ের প্রথম অংশের শুটিং শেষ করে আমরা লাইভ অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছিলাম। তখন রুবি পরামর্শ দেন, যদি লাইভে কয়েকজন পর্যটকের সাক্ষাত্কার নিতে পারি তাহলে ভাল হবে। তাই আমরা কয়েকজন পর্যটককে সাক্ষাত্কার দেওয়ার অনুরোধ জানাই। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী আমাদের অনুরোধে সাড়া দেন। তারা আমাকে জানান, তারা প্রতিবেশী চিয়াং সু প্রদেশ থেকে হাংচৌ এশিয়ান গেমস দেখতে এসেছেন। তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে ম্যাচ দেখতে এসেছেন। আমি জানতে চাই তারা কোন কোন ম্যাচ দেখবেন। মজার ব্যাপার হলো, তারা ফুটবল ম্যাচ দেখবেন এবং সেটি চীন ও বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলের ম্যাচ। বলতে হবে এটা সত্যিই এক ধরনের ভাগ্য। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করি ফুটবল ছাড়া কী কী ম্যাচ দেখতে চান তারা। উত্তরে জানান, ই-স্পোর্টস। এবার এশিয়ান গেমসে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি ইভেন্ট। ই-স্পোর্টস সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আসলে আমিও এ বিষয়ে খুব আগ্রহী। আমি নিজেও মোবাইল গেম্স খেলি। কখনও ভাবিনি এটিও এক ধরনের ক্রীড়া হতে পারে, বিশেষ করে এশিয়ান গেমসের আনুষ্ঠানিক ইভেন্ট। আপনারা হয়ত জানতে চাইবেন, কী কী কম্পিউটার গেমস বা মোবাইল গেমস এতে রয়েছে? আসলে এমন বিতর্ক দীর্ঘসময় ধরে চীন, এমনকি বিশ্বব্যাপী রয়েছে। হাংচৌ এশিয়ান গেমসই প্রথমবারের মতো ই-স্পোর্টস আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ৭টি পদক দেওয়া হয়।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর ই-স্পোর্টসের সব প্রতিযোগিতা শেষ হয়। এবার DOTA2, FIFA online4,Arena of Valor,League of Legendsসহ ৭ ধরনের গেমসের প্রতিযোগিতার মধ্যে চীন ৫টিতে পদক অর্জন করেছে।

ওই দুজন শিক্ষার্থী আমাকে জানান, এশিয়ান গেমসের সব টিকেটের মধ্যে ই-স্পোর্টসের টিকেট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং টিকেট কিনতে চাইলে লটারিতে জিততে হবে। এটাই এবারের এশিয়ান গেমসের একমাত্র ইভেন্ট, যার টিকেট কেনার জন্য লটারিতে অংশ নিতে হলো। টিকেটের দামও অন্য ম্যাচের চেয়ে বেশি। শুনেছি সর্বোচ্চ ১ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত ওঠে টিকেটের দাম।

গতানুগতিক ক্রীড়ার সঙ্গে তুলনা করলে ই-স্পোর্টসের ইতিহাস তেমন দীর্ঘ না। ই-স্পোর্টসের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২০ বছর সময় পার হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, তবে এবারের এশিয়ান গেমসে ই-স্পোর্টস আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া ইভেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কোনও সন্দেহ নেই, গেল কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দ্রুত প্রসারমান ক্রীড়া হলো ই-স্পোর্টস। যেমন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীনের ই-স্পোর্টস বাজারের আকার ১৫ হাজার কোটি ইউয়ানেরও বেশি। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনের ই-স্পোর্টস খাতে আয় ছিল ৭ হাজার ৬শ’ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। চীনে যারা কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস খেলে তাদের সংখ্যা ৪৮ কোটি ৭০ লাখ।

২০২০ সালের শেষ দিকে, এশিয়া অলিম্পিক পরিষদের ২৯তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ই-স্পোর্টসকে আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া হিসেবে হাংচৌ এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এমন একটি আইটেম অবশ্যই হাংচৌ এশিয়ান গেমসের ওপর মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং আরও বেশি দর্শক, বিশেষ করে যুবকদের আকর্ষণ করেছে। এশিয়ায় ই-স্পোর্টস একটি ক্রীড়া হিসেবে ব্যাপক স্বীকৃত পেয়েছে।

গত জুলাই মাসে ঘোষণা করা হয় যে, ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় জাপান এশিয়ান গেমসেও ই-স্পোর্টসকে আনুষ্ঠানিক ইভেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা হবে এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ই-স্পোর্টস এশিয়া কাপ।

বিতর্কিত একটি ক্রীড়া থেকে স্বীকৃতি অর্জন পর্যন্ত, ই-স্পোর্টসের যাত্রা ছিল দীর্ঘ। এশিয়ান গেমসে ই-স্পোর্টসের অন্তর্ভূক্তি একদিকে এ প্রতিযোগিতার মান উন্নত করেছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব বাড়িয়েছে। এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে ই-স্পোর্টস সম্পর্কে মানুষের ধারণাও পরিবর্তন হতে পারে। যদিও ই-স্পোর্টস দেখতে গতানুগতিক ক্রীড়ার মতো নয়, তবে এতেও একইভাবে প্রতিযোগিতামূলক চেতনা প্রতিফলিত হয়।

ই-স্পোর্টসকে আর কেবল খেলা বা বিনোদন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে না; এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে এটিকে পেশাদার ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি এশিয়ান গেমসের ইতিবাচক প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি।

কয়েক দিন পর আমি Arena of Valor এ গেমসের ফাইনালে দেখতে যাই। চীনা দল এ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতে। এটি এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে প্রথম ই-স্পোর্টসের স্বর্ণপদক। সে অন্য কথা। ওই দিন পশ্চিম হ্রদের কথায় ফিরছি। দুজন শিক্ষার্থী ও আরও দুজন নারীসহ মোট ছয়জন একসাথে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধন নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করি। আমাদেরকে দেখে চারপাশের মানুষেরাও ভীড় জমান। সবাই স্বেচ্ছায় আমাদের ক্যামেরার মাধ্যমে হাংচৌ এশিয়ান গেমসের ব্যাপারে তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আমিও খুব মুগ্ধ হই। এটি কোনও সেটের দৃশ্য নয়। সবাই আন্তরিকভাবে এশিয়ান গেমসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। হ্যাঁ, এ মহান ইভেন্টের জন্য হাংচৌ সরকার ও বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে প্রস্তুতিমূলক কাজ করে এসেছে। সফলভাবে লাইভ অনুষ্ঠান শেষ করি আমরা। ততক্ষণে বিকেল তিনটা বেজে গেছে। তখনও আমরা দুপুরের খাবার খাইনি। আমার বেশ খিদেও লেগেছে। লাইভ ও ভিডিও করে হাঁটতে হাঁটতে আমরা বাস থেকে নামার জায়গা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি স্থানে পৌঁছাই। আমার পায়ে একটু ব্যথা লাগছিল। তাই আর বাসের দিকে ফিরে যেতে পারি না। তবে পরিবহনের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে কাছে ট্যাক্সিও পাচ্ছিলাম না। আমরা দুজন যেখানে ছিলাম সেখানে দুটি শেয়ার্ড বাইক খুঁজে পাই। তাই আমরা বাইকে চড়ে দুপুরের খাবার খেতে যাই। এটিও অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা। কারণ বেইজিংয়ের বাইরে আমিও খুব কম বাইক চালিয়েছি। লাঞ্চ খাবার পর আমি সাংবাদিক গ্রামে ফিরে যাই এবং রুবি তার ছোট বোনকে দেখতে যান। রুবির বোন হাংচৌতে বাস করেন। তবে আসার পর আমরা এত ব্যস্ত ছিলাম যে, তাদের দেখার সুযোগ হয়নি। আমি গ্রামে ফেরার একটু পরেই রুবি আমাকে ফোন দেন। আমাদের গ্রামের পাশে ছিয়ান থাং নামে একটি নদী আছে। এ নদী হাংচৌ শহরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। রুবি জানান, তার ছোট বোন তাকে বলেছে, আমাদের গ্রামের ওই পাশে একটি চত্বরে প্রতিদিন রাতে দু বার লাইট শো হয়। এশিয়ান গেমস উপলক্ষ্যে সে লাইট শোর থিমও পরিবর্তন করা হয়েছে। এশিয়ান গেমস সংস্করণের লাইট শো দারুণ সুন্দর। যদি আমার আগ্রহ থাকে তাহলে ওখানে দেখা হবে কারণ রুবিও ওই দিকে যাচ্ছিলেন। তার কথা শুনে আমিও যেতে চাই তবে ম্যাপে খুলে দেখি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে সন্ধ্যা ৬ থেকে ১০ টা পর্যন্ত সাবওয়ে বন্ধ থাকবে। তার মানে আমি বাইরে যেতে পারছি না। আমি এ তথ্য রুবিকে জানাই এবং তাকে তাড়াতাড়ি গ্রামে ফিরে আসতে বলি। পরে জানতে পারি, ওই দিন লাইট শো দেখতে হাজারেরও বেশি মানুষ ওখানে গিয়েছিল। এমনকি কেউ কেউ সকাল বেলা থেকে ওখানে অপেক্ষা করছিল। সাবওয়ে বন্ধ হবার কারণে রুবিও ট্যাক্সিতে করে সাংবাদিক গ্রামের কাছে একটি জায়গায় আসেন; তারপর পুলিশের সাহায্যে সাংবাদিক গ্রামের শাটল বাস খুঁজে বের করেন। 

আমরা দুজন টিভিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করি। ব্যস্ত ও মজার একটি দিন শেষ হয়। পরের দিন আমার মাস্কট ভিডিওর দ্বিতীয় অংশের শুটিং করতে মহাখালে যাওয়ার কথা। ওখানে কী কী ঘটেছে? আমাদের এশিয়ান গেমসের যাত্রা কেমন ছিল? জানাবো আগামী অনুষ্ঠানে। সঙ্গে থাকুন। (শিশির/রহমান/রুবি)