এবারের পর্বে রয়েছে
১. বিশেষ জাতের উদ্ভিদ সংরক্ষণ করছে চীন
২. অ্যাভোকাডো চাষে ভাগ্য বদলেছে কৃষকদের
৩. চীনে রপ্তানি হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের দুধ
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
বিশেষ জাতের উদ্ভিদ সংরক্ষণ করছে চীন
অনেকের আছে অপরিচিত অ্যালিয়াম উদ্ভিদ। শুনতে একটু অন্যরকম মনে হলেও, এটি মূলত বিশেষ প্রজাতির এক ধরনের উদ্ভিদ। এই জাতের উপর গবেষণার জন্য চীন-উজবেকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্লোবাল অ্যালিয়াম গার্ডেন। পুরো কাজটি তত্বাবধান করছে চীনের কুনমিং ইনস্টিটিউট অফ বোটানি এবং উজবেকিস্তানের বিজ্ঞান একাডেমি।
পার্পেল রঙের এই ফুলগুলো সাধারণ কোন ফুল নয় বরং বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদ, যার নাম অ্যালিয়াম। বিজ্ঞানীদের মতে, পিয়াজ ও রসুন প্রজাতিও অ্যালিয়াম জাতের অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি নতুন দুই প্রজাতির অ্যালিয়ামের দেখা পাওয়া গেছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে।
পাঁচ বছর আগে উজবেকিস্তান ও চীনে যৌথভাবে শুরু হয় এলিয়াম গবেষণা। উজবেকিস্তানের বিজ্ঞান একাডেমি এবং চীনের কুনমিং ইনস্টিটিউট অফ বোটানি এলিয়াম গার্ডেনে বীজ সংগ্রহ, সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে চায়না-উজবেকিস্তান গ্লোবাল অ্যালিয়াম গার্ডেনের তাসখন্দ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৯ সালে আর ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয় কুনমিং সেন্টার।
প্রায় আধা হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত উজবেকিস্তান গ্লোবাল অ্যালিয়াম গার্ডেনে ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির অ্যালিয়াম উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয় এবং অ্যালিয়ামের এই প্রজাতিগুলি চীন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। উদ্ভিদবিদ্যা ইনস্টিটিউটের প্রধান জিওভিদ্দিন ইউসুভ বলেন, ভিন্ন আবহাওয়ার কারণে চীনের তুলনায় উজবেকিস্তানে চীনা অ্যালিয়াম বেশ লম্বা হয়েছে।
"বিরল ও স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব ভাল ফলাফল পেয়েছে । আমদের এই সফলতা একটি প্রেস্টিজিয়াস জার্নালে প্রকাশ করেছি। এই বছর, আমরা এই ভলিউমের দুটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছি। যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং চারিদিকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” ss
ডঃ ইউসুভের মতে, সহযোগিতা গভীর হওয়ার সাথে সাথে তাদের গবেষণার পরিধিও বাড়ছে। এখন তরুণ গবেষকরা আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তারা তাদের চীনা সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তার প্রত্যাশা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য কাজ করা গবেষকরা ভবিষ্যতে এই খাতে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবে । এরকম একজন জুনিয়র গবেষক কারিমভ ববু। তিনি জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।
কারিমভ ববুর, জুনিয়র গবেষক, ল্যাবরেটরি অফ মলিকুলার ফাইলোজনি অ্যান্ড বায়োজিওগ্রাফি
"এই ল্যাবটি পিএইচডি লেভেলে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রথম ধাপ এবং এর পরে, আমরা চীনে যেতে চাই এবং আণবিক জীববিদ্যার জ্ঞান অর্জন করতে চাই। এই গবেষণার কাজ করে আমরা আরো কিছুর প্রত্যাশা করছি।“
অ্যালিয়ামের বাইরেও, উচ্চ শোভাময় ও ঔষধি গাছপালা সংগ্রহ ও সুরক্ষার কাজও চলছে এখানে। শীঘ্রই, এই বাগানে আরও টিউলিপ, আইরিস এবং ফক্সটেইল লিলি বা এরমেরাস পাওয়া যাবে। তাসখন্দ বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক সোডিকজন আবদিনাজারভ বলেন,
"অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে, প্রতিটি উদ্ভিদের শিলালিপিসহ প্লেটগুলো কীভাবে সঠিকভাবে স্থাপন করা যায় সে বিষয়টি আমি কুনমিংয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শনের সময় শিখেছি। লিচিয়াং বোটানিক্যাল গার্ডেনে, আমি পৃথক উদ্ভিদ নার্সারি দেখেছি যেগুলো বিভিন্নভাবে সংগঠিত। এখন আমরা আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনে উদ্ভিদের জন্য একই ধরনের নার্সারি তৈরি করার পরিকল্পনা করছি এবং এইভাবে বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির বংশবিস্তার ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছি।"
বিশ্বজুড়ে ৬০০’র বেশি প্রজাতির অ্যালিয়াম উদ্ভিদ রয়েছে। দুই দেশের যৌথ গবেষণায় খাদ্য ও চিকিৎসা খাতে দারুণ কিছু বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।
প্রতিবেদন: এইচএম সৌরভ
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
অ্যাভোকাডো চাষে ভাগ্য বদলেছে কৃষকদের
পূর্ব আফ্রিকান দেশ উগান্ডায় বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বাণিজ্যিক চাষ করা হচ্ছে অ্যাভোকাডো। জন মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পাঁচ বছরের মধ্যে এক মিলিয়ন একরের বেশি অ্যাভোকাডো গাছ চাষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে দেশটি।
অ্যাভোকাডো পুষ্টিতে ভরপুর এবং ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি দেহকে সোডিয়াম, সুগার ও কোলস্টেরল মুক্ত রাখে। তাইতো বিশ্বব্যাপী দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ফল। আর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এই ফল চাষে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে এদেশের কৃষকরা।
দেশটির ন্যাশনাল এগ্রিকালচার অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে গ্রামাঞ্চলে পাঁচটিরও বেশি বাণিজ্যিক অ্যাভোকাডো খামার তৈরি করা হয়েছে।
গেল বছর বিশ্বব্যাপী আভাকাডো ফলের বাজারের মূল্য ছিল ১৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী সাত বছরে বার্ষিক ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, উগান্ডা সরকার এখন চারা গাছের খরচে দিচ্ছে বিশেষ ভর্তুকি।
গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করার পাশাপাশি, অ্যাভোকাডো থেকে রান্নার তেল এবং চুলের চিকিত্সা পণ্যও তৈরি করছেন উগান্ডার উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে কেনিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম অ্যাভোকাডো উৎপাদনকারী অঞ্চল। এই দেশকে অনুসরণ করে এই ফল চাষে বিশ্বব্যাপী বাজার তৈরি করতে চায় উগান্ডা ।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
মাছ চাষেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে চীন
সামুদ্রিক শিল্পে এখন ফাইভ জি যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে দেশটি। তাই সমুদ্রে মাছধরা জালে কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা তা আন্ডার ওয়াটার রোবট জানিয়ে দিতে পারছে। চীনের মেরিটাইম কৃষি এখন স্মার্ট ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশ লাভের মুখ দেখছে।
পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের নিংদ্য সিটির সানতু টাউনে সামুদ্রিক মৎস্যচাষে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
আন্ডার ওয়াটার বা ডুবুরি রোবটগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে জালের ভিতর মাছের পরিস্থিতি। এই জালগুলোর ভিতরে মাছ রেখে তার চাষ করা হয়। এ ধরনের সামুদ্রিক খামারের সুবিধা হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিতরেই মাছ প্রতিপালন করা যায়। এরকম খামারের ভিতরে ফাইভজি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে খামার দেখাশোনার কাজটা কন্ট্রোলরুমে বসে করা সম্ভব। সেজন্য সারাদিন খামারে ছোটাছুটির প্রয়োজন নেই। এমনকি নিজের স্মার্ট মোবাইল ফোন থেকেও খামারের অবস্থা পরীক্ষা করা যায়। পরিস্থিতিও দেখা যায়।
এ ধরনের স্মার্ট সামুদ্রিক খামারের মাধ্যমে মৎস্যচাষীরা বেশ লাভের মুখ দেখছেন। এক্ষেত্রে লোকবলও আগের তুলনায় অনেক কম লাগছে। সামুদ্রিক মাছ চাষের মাধ্যমে চীনের মেরিটাইম ইকোনমি বা সামুদ্রিক অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের হুইচৌ সিটি। এখানে সামুদ্রিক তেল উত্তোলনের অফশোর প্লাটফর্ম আছে।
শানতোং প্রদেশের ছিংতাও সিটি। এখানে হাইইয়ান ইলেকট্রনিকস কোম্পানির কারখানায় তৈরি হচ্ছে মানুষ চালক লাগে না এমন নৌকা।
চীনের মেরিটাইম সম্পদ ও সামুদ্রিক কৃষিতে ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সামুদ্রিক সম্পদের আরও বেশি ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী