সম্প্রতি শেষ হয়েছে হাংচৌ এশিয়ান গেমস। এশিয়া জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায়; অভিন্ন আদর্শ, ঐক্য, বন্ধুত্ব ও অগ্রগতির বাসনা প্রকাশ করতে চায়। হাংচৌ এশিয়ান গেমস যেন ছিল সেই বাসনা পূরণের একটি হাতিয়ার। চীনও এই প্লাটফর্মকে যথাসাধ্য কার্যকর করার প্রয়াস চালিয়েছে এবং এশিয়ান গেমসকে সফল করার প্রতিশ্রুত পূরণ করেছে।
হাংচৌ এশিয়ান গেমস হল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের পর চীনে সফলভাবে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ও সর্বোচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রীড়া ইভেন্ট। খেলাধুলার নামে এ যেন দ্বিমুখী যাত্রা। অলিম্পিক কাউন্সিল অফ এশিয়ার সকল ৪৫ সদস্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ১২ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তা, ও মিডিয়াকর্মী এ সময় হাংচৌ উপস্থিত ছিলেন। হাংচৌ এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনেক বিদেশী নেতা চীনে আসেন। গেমসের মূল্যায়ন করার সময় প্রতিটি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে ‘খুবই সন্তুষ্ট’ টার্মটি ঘন ঘন উঠে এসেছে।
চ্যচিয়াং প্রদেশ ও সংশ্লিষ্ট শহরগুলো মহামারীর কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং একটি ‘সহজ, নিরাপদ এবং চমত্কার’ প্রতিযোগিতার চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে। আর তাই এশিয়ান গেমস সফল হয় ও সকলের প্রশংসা কুড়ায়।
এবাএর এশিয়ান গেমস ছিল কার্বন-নিরপেক্ষ এশিয়ান গেমস। চ্যচিয়াং-এর সকল মানুষের অংশগ্রহণে, ‘সবুজ’ হয়ে ওঠে হাংচৌ এশিয়ান গেমসের প্রতীক।
এবারের গেমস ছিল ‘স্মার্ট এশিয়ান গেমস’। এতে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্ট আরও নির্ভুল ও ন্যায্যতাপূর্ণ হয়েছে; দর্শকদের অংশগ্রহণ ছিল আরও উষ্ণ ও সুবিধাজনক। গেমসে ইলেকট্রনিক পরিচয় নিবন্ধন কার্ড থেকে শুরু করে ‘এশিয়ান গেমস ভিলেজ অন দা ক্লাউড’, ভেন্যুতে ভাষা অনুবাদনের মেশিন থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রেফারি পর্যন্ত, নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ সারা বিশ্ব থেকে আসা অতিথিদের সম্পূর্ণরূপে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অভিজ্ঞতার সুযোগ দেয়।
এবারের এশিয়ান গেমস ছিল সহজ। যেমন, ভেন্যুগুলো আগের পুরানো স্টেডিয়ামগুলোকে পুনর্নিমাণ করে বা মেরামত করে তৈরি করা হয়। ৫৬টি প্রতিযোগিতার ভেন্যুগুলোর মধ্যে ৪৪টি পুনর্নিমাণের মাধ্যমে আবারও ব্যবহৃত হয়েছে, বা অস্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছে এবং মাত্র ১২টি নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। বেশিরভাগ ভেন্যু এশিয়ান গেমস শুরুর আগে তাদের পরবর্তী ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে।
এই হাংচৌ এশিয়ান গেমস এশিয়া আন্তর্জাতিক অলিম্পিকের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে নতুন অবদান রেখেছে। গেমসে এশিয়ান বৈশিষ্ট্যের অনেক প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্ট ছিল। খেলাধুলা ও সংস্কৃতিকে একে অপরের পরিপূরক করার জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করেছে এই গেমস। বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রীড়া, মার্শাল আর্ট, স্কোয়াশ, ক্রিকেট, কাবাডি, ড্রাগন বোট, এবং সফটবল অলিম্পিকের ইভেন্ট নয়। কিন্তু এশিয়ান গেমসে এগুলো স্থান পেয়েছে।
১৯৫১ সালে প্রথম এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হয়। তখন শুধুমাত্র ১১টি প্রতিনিধিদল এবং পাঁচ শ জনের মতো ক্রীড়াবিদ তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর হাংচৌ এশিয়ান গেমস, ৪৫টি প্রতিনিধিদল এবং ১২ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অঙশগ্রহণ করেন। এই গেমস যেন ঐক্য ও অগ্রগতির প্রতীকে পরিণত হয়।
বৈশ্বিক সংরক্ষণবাদ, একতরফাবাদ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পটভূমিতে, ই এশিয়ান গেমস চীনের উন্মুক্ত ও সহনশীল মনোভাবকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করেছে,ক্রীড়ার চেতনায় এশিয়ায় ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছে, এবং এশিয়ার উন্নয়নের আস্থা বাড়িছে। (শুয়েই/আলিম)