সি চিন পিংয়ের সঙ্গে চাক শুমারের দেখা ও প্রসঙ্গকথা
2023-10-10 15:17:59

অক্টোবর ১০: গতকাল (সোমবার) বিকালে চীন সফররত মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন।

সাক্ষাতে সি চিন পিং বলেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক হলো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। দু’দেশের সম্পর্ক মানবজাতির ভবিষ্যত ও ভাগ্য নির্ধারণ করে। তিনি বলেন,

(রেকর্ড)

“চীন-মার্কিন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে। দু’দেশের সম্পর্ক অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু এখনও এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে পরিবর্তন হচ্ছে, যুগও পরিবর্তন হচ্ছে, তবে দু’দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহাসিক যুক্তি বদলায়নি। দু’দেশের জনগণের যোগাযোগ ও সহযোগিতার মূল আশাও পরিবর্তন হয়নি। চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের সাধারণ প্রত্যাশারও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। নতুন ঐতিহাসিক সময়ে দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে উন্নত করার জন্য আমি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পাস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার প্রস্তাব করছি।”

সি চিন পিং বলেন, প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব সময়ের প্রবণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটি কোনো দেশের নিজস্ব সমস্যা ও বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে পারে না। চীন বরাবরই মনে করে, দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ মতভেদের চেয়ে অনেক বেশি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য একে অপরের প্রতি চ্যালেঞ্জের পরিবর্তে সুযোগ বটে। ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’ অনিবার্য নয়, বিশাল পৃথিবী চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজ নিজ উন্নয়ন ও অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গভীরভাবে একীভূত হলে, দু’পক্ষ একে অপরের উন্নয়ন থেকে উপকৃত হতে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মাহামারীর পর পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হট ইস্যু সমাধানে দু’দেশের সহযোগিতা ও সমঝোতা আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে, বড় দেশ হিসেবে, প্রধান দেশের মনন, দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করতে হবে। ইতিহাস, জনগণ ও বিশ্বের  প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবের সাথে ভালোভাবে দু’দেশের সম্পর্ক মোকাবিলা করতে হবে, যাতে মানবসমাজের উন্নয়ন ও বিশ্বের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে অবদান রাখা যায়। 

সি চিন পিং বলেন, চীনের সভ্যতা ৫ হাজার বছরেরও বেশি সময়ের প্রাচীন। চীন বরাবরই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলে, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহযোগিতা ও যোগাযোগের শান্তির ধারণাকে মেনে চলে। চীন অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ও সমাজের স্থায়ী স্থিতিশীলতার দু’টি অলৌকিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। চীন পরম দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করেছে এবং সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তুলেছে। এর মূল কারণ হলো, চীন নিজের পরিস্থিতি ও জনগণের আকাঙ্খার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি উন্নয়নের পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে। চীন অব্যাহতভাবে চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক পথে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের কাজ চালিয়ে যাবে। চীন দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলা অব্যাহত রাখবে এবং বিভিন্ন দেশকে সাথে নিয়ে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলবে। মার্কিন সিনেটের সদস্যদেরকে চীনের ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে ভালো করে জানার আহ্বান জানান সি চিন পিং। তিনি দু’দেশের আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, সংলাপ ও বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির আশাও প্রকাশ করেন।

জবাবে চাক শুমার বলেন, সুন্দর চীন সফরে এসে তাঁর ভালো লাগছে। এবারের সফরের মাধ্যমে তিনি চীনের উন্নয়নের চালিকাশক্তি ও সুপ্তশক্তি আরও ভালোভাবে অনুভব করতে পেরেছেন। তিনি দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে নিজের মতামত ও প্রস্তাবও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দু’দেশের সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন শুধু দু’দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, বরং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য জরুরি। চীনের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মার্কিন জনগণের জন্য অনুকূল। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সংঘর্ষ চায় না এবং চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাও চায় না।

শুমার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে উন্মুক্তকরণ, আন্তরিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় সংলাপ ও যোগাযোগ জোরদার করতে ইচ্ছুক। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার এবং জলবায়ুর পরিবর্তন, মাদক পাচার দমন এবং আঞ্চলিক সংঘর্ষ সমাধানের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। (ছাই/আলিম)