* নিজস্ব প্রযুক্তিতে সমুদ্র তলদেশের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি করলো চীন
* ৭৬টি নতুন ক্ষীণ তরঙ্গ আবিষ্কার করলো চীনের ফাস্ট টেলিস্কোপ
* বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের সংখ্যায় শীর্ষে চীন
নিজস্ব প্রযুক্তিতে সমুদ্র তলদেশের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি করলো চীন
দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো গভীর সমুদ্র তলদেশের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র বা স্ট্র্যাটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার ম্যাপ তৈরি করেছে চীন। এ মানচিত্রটি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য করবে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই মানচিত্রটি সমুদ্রতলের ৩ হাজার ৫০০ মিটার গভীর পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কাজে ব্যবহৃত হয়েছে ইতোমধ্যেই।
এই মানচিত্রের মধ্য দিয়ে গভীর সমুদ্র-জরিপ এবং ম্যাপিং প্রযুক্তিতে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রতিফলিত হয়েছে। ম্যাপিংয়ের জন্য ‘হাইজিং’ সিস্টেম নামের অনুসন্ধান সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। ‘হাইজিং’ সিস্টেম হলো সাবমেরিন তার ব্যবহার করে একটি সামুদ্রিক ভূমিকম্পন অনুসন্ধান ও উপাত্ত সংগ্রহ সরঞ্জাম।
ছয় মিটার দীর্ঘ এই মানচিত্রটিতে সমুদ্রতলের ভূতত্ত্বকে বিভিন্ন রঙের রেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এতে নদীর গতিপথ ও ভূতাত্ত্বিক চাপসহ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কেও তথ্য উঠে এসেছে।
ম্যাপিং করতে চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কর্পোরেশনের (সিএনওওসি) মালিকানাধীন একটি বড় ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানকারী জাহাজ ‘হাইয়াং শিয়উ ৭২০’ ব্যবহার করা হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধানকারী জাহাজ ‘হাইয়াং শিয়উ ৭২০’ হাইজিং সিস্টেমে ১০টি সাবমেরিন কেবল ফেলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায়।
সিসমিক তরঙ্গগুলো পানির মধ্যে দিয়ে শাব্দিক শক্তি প্রেরণ করে, যা একটি হাইড্রোফোনের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীতে হাইড্রোফোন এটিকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করলে তা ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান সিস্টেমে ফেরত আসে। সমুদ্রের নীচে কেবলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, একে অপরের মধ্যে দূরত্ব পরিমাপ, সামঞ্জস্য রাখা এবং অনুসন্ধান কার্যক্রমে জট বা সংঘর্ষ এড়াতে কেবলগুলোর মধ্যে কিছু ডিভাইসও স্থাপন করা হয়েছে।
সিএনওওসি’র হাইজিং ইকুইপমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী রুয়ান ফুমিং বলেন, “বিদেশি সরঞ্জামের সঙ্গে তুলনা করলে হাইজিং সিস্টেম থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলো অনেক বেশি নিখুঁত, যা ৩ হাজার মিটার গভীর পানির মধ্য দিয়ে গিয়ে ১০ হাজার মিটার সমুদ্র তলদেশের প্রতিটি স্তরের জটিল ভূতাত্ত্বিক কাঠামোকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে।”
চীন হাইড্রোফোন তৈরি করার প্রযুক্তি বেশ ভালোভাবেই আয়ত্ত করেছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ হাইড্রোফোনটিতে অতি উচ্চ সংবেদনশীলতা রয়েছে, যা প্রায় ১০ হাজার মিটার গভীর সমুদ্র তলদেশ থেকে প্রতিফলিত অস্পষ্ট বা ক্ষীণ সংকেতও সনাক্ত করতে সক্ষম।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
৭৬টি নতুন ক্ষীণ তরঙ্গ আবিষ্কার করলো চীনের ফাস্ট টেলিস্কোপ
মহাকাশে ৭৬টি নতুন ক্ষীণ তরঙ্গ বা ফেইন্ট পালসার আবিষ্কার করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই তরঙ্গগুলোর বিশেষত্ব হলো এরা ঘূর্ণনের সময় মাঝে মাঝে তরঙ্গ বিকিরণ করে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেতার দুরবিন ‘ফাইভ হানেড্রেড-মিটার অ্যাপারচার স্পেরিক্যাল টেলিস্কোপ’ (ফাস্ট) ব্যবহার করে এটি আবিষ্কার করা হয়েছে।
সম্প্রতি চীনের গবেষণা জার্নাল ‘রিসার্চ ইন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে’ নতুন আবিস্কৃত নতুন ক্ষীণ তরঙ্গ বা ফেইন্ট পালসার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা বর্তমানে জানা ক্ষীণতম তরঙ্গগুলোর একটি গ্রুপসহ ৭৬টি নতুন ক্ষীণ তরঙ্গ বা ফেইন্ট পালসার আবিষ্কার করেছেন। ফাইভ হানেড্রেড-মিটার অ্যাপারচার স্পেরিক্যাল টেলিস্কোপ (ফাস্ট) বা ‘চায়না স্কাই আই’ ব্যবহার করে আবিস্কৃত এই তরঙ্গগুলোর বিশেষত্ব হলো এরা ঘূর্ণনের সময় মাঝে মাঝে তরঙ্গ বিকিরণ করে। এ কারণে এই তরঙ্গগুলো ‘রোটেটিং রেডিও ট্রানজিয়েন্ট সোর্স (আরআরএটি) বা ঘূর্ণায়মান দূরবর্তী ক্ষণস্থায়ী উৎস হিসেবে পরিচিত।
সাধারণ পালসার অনুসন্ধান সিস্টেমের মাধ্যমে আরআরএটি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। তবে অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোমের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ ডেটার ভিত্তিতে পালস-বাই-পালস চিহ্নিত করে এগুলোকে খুঁজে বের করা যায়। এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম আরআরএটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপর বিশ্বজুড়ে রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ১৬০টিরও বেশি আরআরএটি সনাক্ত করা হয়েছে। চীনের বিজ্ঞান একাডেমির অধীন ‘জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত মানমন্দিরের’ একটি গবেষণা দল ২০২০ সাল থেকে রেকর্ড করা ফাস্ট গ্যালাকটিক পালসারের স্ন্যাপশট সার্ভে ডেটা ব্যবহার করে একটি নতুন কার্যকরী একক তরঙ্গ অনুসন্ধানের পাইপলাইন তৈরি করেছে। পাশাপাশি তারা পদ্ধতিগতভাবেও একক তরঙ্গ অনুসন্ধান করেছেন।
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রথমসারির গবেষণা বিজ্ঞানী হ্যান চিনলিন বলেন, নতুন পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত ৭৬টি আরআরএটির মধ্যে টেলিস্কোপ ফাস্টের জরিপ থেকে আবিষ্কৃত পালসারের সংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়, মাঝে মাঝে বিকিরণকারী এই ধরনের আরও পালসার রয়েছে। আরআরএটি’র ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলো আরও ভালো করে বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবিষ্কৃত ৫৯টি আরআরএটি পর্যবেক্ষণ করতে ফাস্ট ব্যবহার করেছিলেন। এ গবেষণায় তারা দেখেছে, আরআরএটিগুলোর কোনোটিই একটি আদর্শ আরআরএটি-বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে না।
হ্যান চিনলিন বলেন, “মিল্কিওয়েতে মৃত নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ এবং তাদের বিকিরণ বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য এ ধরনের গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে।”
বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের আকর্ষণীয় পালসারগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য ফাস্টের মতো উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও টেলিস্কোপগুলো সেরা সরঞ্জাম।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের সংখ্যায় শীর্ষে চীন
‘হট পেপার’ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের সাইটেশনের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছেছে চীন। মূলত যেসব গবেষণাপত্র গত দুই বছরে প্রকাশিত হয়েছে কিংবা গত দুই মাসে ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলোকে হট পেপার বলা হয়। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনফরমেশন অব চায়না থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বছরের জুলাই পর্যন্ত, বিশ্বের মোট সাইটেশনের ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৯২৯টি হট পেপার প্রকাশ করেছে চীন। এটা দেশটিকে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থানে পৌছে দিয়েছে। চীনে প্রতি বছর ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে সাইটেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ১ হাজার ৫৯২টি হট পেপার প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়।
দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনফরমেশন অব চায়না থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, চীনের অনেক সাইটেশন গবেষণা বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে স্থান পাওয়া উচিত।
প্রতিবেদনে, নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণায় ২০১৩ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত শীর্ষ এক শতাংশের মধ্যে স্থান পেয়েছে এমন সাইটেশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বা হাইলি সাইটেড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গত এক দশকে গবেষণা সাইটেশনের মোট সংখ্যার প্রেক্ষিতেই বিশ্বের মধ্যে ছয়টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। ক্ষেত্রগুলো হল কৃষি বিজ্ঞান, রসায়ন, কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল প্রযুক্তি, পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিত।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক চাও চিউন বলেন, “বিশ্বব্যাপী গবেষণা ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার সঙ্গে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায় হিসেবে মৌলিক গবেষণাকে আরও শক্তিশালী করা অপরিহার্য। বৈজ্ঞানিক এ গবেষণাপত্রগুলো মৌলিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলকে নির্দেশ করে এবং উন্নত মানের একাডেমিক ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য গবেষকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।”
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী