এআইআইবি কেন এতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে
2023-10-09 10:23:33

গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুদিনব্যাপী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) পরিচালনা পরিষদের অষ্টম বার্ষিক সভা মিসরের শার্ম আল-শেখে শেষ হয়। এবারের সভায় এল সালভাদর, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাঞ্জানিয়ার এ সংস্থায় যোগ দেওয়ার আবেদন অনুমোদিত হয়। ফলে এআইআইবি’র সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ১০৯-এ।

২০১৬ সালে চালু হওয়া পর এআইআইবি সদস্য সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকটি বিশ্ব ব্যাংকের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। এআইআইবি কেন এতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে? হয়তো তার লক্ষ্য, ফলপ্রসু প্রকল্প এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

সংস্থাটি সবসময় বহুপক্ষবাদ চর্চার মধ্য দিয়ে যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও সমন্বিত অর্জনের মৌলিক নীতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ও উচ্চমানের ব্যবস্থাপনায় অবিচল থাকে, যার ফলে দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া বাস্তব কার্যক্রম ও ফলপ্রসূ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ প্রতিষ্ঠার ধারণা অনুশীলন করেছে সংস্থাটি। এর সদস্যরা প্রধানত উন্নয়নশীল দেশ। পাশাপাশি উন্নত অর্থনৈতিক গোষ্ঠীও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এখানে। বৈশিষ্টপূর্ণ সুযোগ-সুবিধার কল্যাণে এআইআইবি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা এবং উত্তর-দক্ষিণ সহযোগিতা বেগবান করার সেতু ও সংযোগস্থলে পরিণত হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও তত্ত্বাবধানে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের সাধারণ চর্চা অনুসারে সুসম্পূর্ণ পরিচালনা পরিষদ, পরিচালকমণ্ডলী ও ব্যবস্থাপনা – এই তিনটি পর্যায়ে প্রশাসন কাঠামো স্থাপন করার মাধ্যমে স্বচ্ছ, প্রকাশ্য, স্বাধীন ও জবাবদিহিতামূলক নীতি অনুযায়ী কার্যকর তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহিতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া এআইআইবি অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করেছে। সংস্থার প্রেসিডেন্ট চিন লিছুন জানান, বর্তমানে এআইআইবি বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বৃহত্তম সহ-অর্থায়ন অংশীদার। সংস্থাটি ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (ইবিআরডি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি)সহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহ-অর্থায়ন সহযোগিতা চালাচ্ছে এবং আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক (এএফডিবি), কেএফডাব্লিউসহ অনেক আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এআইআইবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল এশীয় দেশগুলোর ও আঞ্চলিক অবকাঠামো নির্মাণ বেগবান করা। কিন্তু সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটি আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্যদের উন্নয়ন-চাহিদাও বিবেচনা করছে। স্বচ্ছ ও উচ্চফলপ্রসু পরিচালনা পদ্ধতির কারণে আরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ এ ব্যাংককে স্বাগত জানিয়েছে।

মিসরের আরব বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামুদ্রিক পরিবহন একাডেমির অর্থনীতিবিদ করিম ওমদা মনে করেন, এআইআইবি কোনও রাজনৈতিক শর্ত ছাড়া এবং স্বল্প সুদে মিসরের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক সহায়তা দেয়, যাতে অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন বেগবান করা যায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা যায়।

এ পর্যন্ত এআইআইবি মোট ২৩৫টি প্রকল্পের জন্য মোট ৪৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে ৩৬টি সদস্য দেশ ও অঞ্চল উপকৃত হয়েছে। এ অর্থায়ন তাদের পরিবহন, জ্বালানি, শহুর উন্নয়ন, পানি সম্পদসহ বিভিন্ন খাতের অবকাঠামো নির্মাণ এবং গণস্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করেছে।

‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে টেকসই প্রবৃদ্ধি’ ছিল এবারের বার্ষিক সভার প্রতিপাদ্য। সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এআইআইবি’র ‘জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা’ শুরু করার ঘোষণা। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এ সংস্থার একটি মাইলফলক। পরবর্তী বার্ষিক সভা উজবেজিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, ২০২৪ সালের বার্ষিক সভায় বিভিন্ন পক্ষ সবুজ উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।

সংস্থার প্রেসিডেন্ট চিন লিছুন বলেন, এআইআইবি অন্যান্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে হাতে হাত রেখে আরও সুন্দর আগামী প্রতিষ্ঠা করবে। (প্রেমা/রহমান)