‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণের উদ্যোগ উত্থাপনের পর গত দশ বছরে পাহাড় ও নদী অতিক্রম করে স্থলবেষ্টিত লাওসে বাস্তবায়িত হয়েছে চীন-লাওস রেলপথ। পাশাপাশি এ রেলপথ অনেক লাও যুবককে তাদের স্বপ্নময় জীবনের মঞ্চে পা রাখতে সাহায্য করেছে।
“লাওস-চীন রেলপথ আমার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সাহায্য করছে।” কথাগুলো বলছিলেন লাওস-চীন রেলওয়ে লিমিটেডের লুয়াং প্রাবাং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী ২৪ বছর বয়সী কায়াফাস। তাঁর বাসা দূরবর্তী সায়াবৌরি প্রদেশে। সায়াবৌরি থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। কেবল একটি নদী এ এলাকাকে থাইল্যান্ড থেকে আলাদা করেছে। কায়াফাসের অনেক বন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর থাইল্যান্ডে চাকরি করতে গেছেন। কিন্তু তিনি থাইল্যান্ডে যেতে চান না। কারণ তাঁর ভিন্ন স্বপ্ন ছিল।
কায়াফাস বলেন, “দশ বছর আগে অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান লাওসে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এসেছে। সে সময় আমি চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লাওস-চীন রেলপথে চাকরি পাওয়া ছিল আমার ছাত্রাবস্থার লক্ষ্য।”
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চীন-লাওস রেলপথের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে কায়াফাস সুফ্যানুভং (Souphanouvong) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রাচীন নগর লুয়াং প্রাবাংয়ে অবস্থিত যেখান দিয়ে চলে গেছে চীন-লাওস রেলপথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যাতায়াতের সময় নির্মাতাদের দেখে কায়াফাসের আগ্রহ জন্মে তাদের সঙ্গে কাজ করার। তিনি বলেন, “চীনে অধ্যয়ন করার সুযোগ পেয়ে আমি বিনা দ্বিধায় নাম তালিকাভুক্তি করি এবং রেলপথ প্রকল্প বিষয় বাছাই করি। আমি সবসময় প্রকল্প নিয়ে ভাবি, কিন্তু লাওসে জরুরি পেশার স্নাতকের সংখ্যা খুবই কম।”
২০১৮ সালে কায়াফাস শাংহাই ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ্যয়ন করতে আসেন। কিন্তু শুরুর দিকে তার চীনা ভাষা ভাল ছিল না। তাই প্রথম বছরের ছুটিতে তিনি চীনে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
দিনের পর দিন, রাতের পর রাতের চেষ্টা বৃথা যায়নি। তিনি ভাষার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ২০২১ সালে লাওসে ফিরে গিয়ে চীন-লাওস রেলপথে কাজ করার সুযোগ পান। তিনি বলেন, তখনকার জ্ঞান এখনকার বাস্তব চাকরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কায়াফাস জানান, বইয়ের জ্ঞান ও চাকরিতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মধ্যে দূরত্ব আছে। কিন্তু তিনি চীনা কর্মীদের কাছ থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন। চীনা সহকর্মীরা সহজ পদ্ধতিতে তাকে শিখান এবং প্রত্যেক চীনা কর্মীকে তিনি শিক্ষকের মতো সম্মান করেন।
তিনি বলেন, লাওস-চীন রেলপথ দেশটির জনগণের যাত্রাকে আরও আরামদায়ক করেছে। তিনি যখন গ্রামবাসীদের এই সুবিধাজনক ট্রেনে চড়তে দেখেন, তখন তার খুব আনন্দ লাগে এবং তিনি গর্ববোধ করেন। এই রেলপথের কারণে রেলস্টেশনের নিকটবর্তী এলাকারও উন্নয়ন হয়েছে। অনেক মানুষ নতুন জীবিকা খুঁজে পেয়েছেন।
স্বপ্নের কোনও সীমা নেই। কায়াফাসের চূড়ান্ত স্বপ্ন হলো যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে তিনি ও তার সহপাঠীদের রেলপথ খাতের বিশেষজ্ঞ হওয়া, যাতে লাওস-চীন রেলপথটি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা এবং চালু রাখা যায়। (প্রেমা/রহমান)