দেহঘড়ি পর্ব-০৩৯
2023-10-08 16:15:10

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

হাঁটু-ব্যথা দূর হয় টিসিএমে

হাঁটু হলো মানবদেহের সবচেয়ে বড় অস্থিসন্ধি। হাঁটুতে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে ভোগে সব বয়সের মানুষ। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। হাঁটু টিবিয়া বা শিনের হাড় এবং ফিমার বা উরুর হাড়ের মধ্যে প্রধান বিন্দু হিসাবে কাজ করে এবং নড়াচড়া ও ওজন বহন করার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ভীষণ। হাঁটুতে একাধিক লিগামেন্ট ও টেন্ডন থাকে, যা অস্থিসন্ধিকে সমর্থন দেয়।

পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থায় মনে করা হয়, লিগামেন্ট বা তরুণাস্থির ছিঁড়ে যাওয়া বা আঘাতের ফলে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। বাত, গেঁটেবাত ও সংক্রমণের মতো রোগের কারণেও এটা হতে পারে।

দুর্ঘটনাজনিত কারণ ছাড়া হাঁটুতে ব্যথা হলে চিরাচরিত চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএমে মনে করা হয়, কিডনি বা লিভারে ‘ছি’ ও রক্তের স্থবিরতা ও ভারসাম্যহীনতার কারণে এটা হতে পারে। টিসিএম তত্ত্ব মতে, হাঁটু এমন একটি অস্থিসন্ধি, যেখানে থাকে প্রচুর ‘ছি’ বা মূল শক্তি ও রক্ত। এ কারণে হাঁটুকে ‘ছি’ ও রক্ত সঞ্চালনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ‘ছি’ আসলে দুটি শক্তির সমন্বয় – ঠান্ডাশক্তি বা ‘ইয়িন’ এবং তাপশক্তি বা ‘ইয়াং’।

ধরন: হাঁটু-ব্যথার সাধারণ ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস বা বাত, টেন্ডোনাইটিস, মেনিস্কাস টিয়ার এবং বারসাইটিস।

লক্ষণ: হাঁটু-ব্যথা হলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাঁটা, বসা বা সিঁড়ি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে অসুবিধা বোধ করে এবং তাদের চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ রোগী আঙুল দিয়ে চাপ দিলে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিন্দুতে ব্যথা অনুভব করে। কিছু রোগী হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে ফোলাভাব লক্ষ্য করতে পারে আবার কেউ কেউ শরীরের নিচের অংশে ঠান্ডা অনুভব করতে পারে।

যদি রাতে হাঁটুর ব্যথার উপসর্গগুলো বাড়ে, তাহলে সাধারণ সেটি হয় কিডনি ও লিভারে ইয়িনের ঘাটতির কারণে। ইয়িনের ঘাটতিজনিত হাঁটু-ব্যথার অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে দুপুর ও রাতে ঘাম, অবিরাম তৃষ্ণা, ত্বকের শুষ্কতা এবং চুল ভেঙে যাওয়া। অন্যদিকে যদি কম তাপমাত্রায় হাঁটু-ব্যথা তীব্র হয় কিন্তু বেশি তাপমাত্রায় স্বস্তি হয়, তাহলে সেটি ইয়াংয়ের ঘাটতির কারণে হয়।

টিসিএম চিকিৎসা: হাঁটু-ব্যথার টিসিএম চিকিৎসা একটি সামগ্রিক চিকিত্সা। এ চিকিৎসায় হাঁটু-ব্যথা উপশম করার জন্য ঠান্ডাশক্তি ‘ইয়িন’ ও তাপশক্তি ‘ইয়াং’য়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে ‘ছি’ প্রবাহ ঠিক করা এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাময়ের জন্য হাঁটুকে সচল করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। হাঁটু-ব্যথার টিসিএম প্রোটোকলের লক্ষ্য থাকে সঠিকভাবে মূল কারণ নির্ণয় করা, ব্যথা উপশম করা এবং হাঁটুর গতিশীলতা বাড়ানো। এ সমস্যার টিসিএম চিকিৎসায় কয়েকটি কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করা হয়। এগুলো হলো ভেষজ ওষুধ, আকুপাংচার, মক্সিবাসশন, কাপিং, মালিশ, ইত্যাদি।

চিকিৎসার ধাপ: টিসিএম চিকিৎসার প্রথম ধাপে, চিকিৎসকরা ব্যথার উপসর্গগুলো বিশ্লেষণের উদ্দেশে রোগীর সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং তারপর সে উপসর্গের ভিত্তিতে একটি চিকিৎসা প্রটোকল তৈরি করেন। দ্বিতীয় ধাপে, ব্যথার মাত্রা পরিমাপ করার জন্য একটি পরিবাহী যন্ত্র ব্যবহার করে একটি পরীক্ষা চালানো হয়। তৃতীয় ধাপে, টিসিএম অনুশীলনকারীরা চিকিৎসা প্রটোকল, বিশেষ করে ওষুধ ও আকুপাংচার প্রয়োগ করতে শুরু করেন। এবং চতুর্থ ধাপে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ফিজিওথেরাপি, কাপিং থেরাপি এবং অন্যান্য থেরাপি দেওয়া হয়।

হাঁটু-ব্যথার টিসিএম চিকিৎসার লক্ষ্য কেবল ব্যথা উপশম ন। এর লক্ষ্য হাঁটুর ব্যথা কমানোর পাশাপাশি সামগ্রিক শরীরিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনা।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

শাংহাইয়ের অন্যতম হাসপাতাল সিনোইউনাইটেড হেলথ

সিনোইউনাইটেড হেলথ চীনের বাণিজ্যিক নগরী শাংহাইয়ে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতাল। নগরীর শীর্ষস্থানীয় এ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল একদল চিকিৎসকের হাতে এবং ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। বর্তমানে এ হাসপাতালের অধীনে শাংহাইতে তৈরি হয়েছে ৬টি ক্লিনিকও। সিনোইউনাইটেড হেলথের চিকিৎসাকর্মীরা ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, চীনা, জাপানি ও মালয়সহ নানা ভাষায় রোগীর সঙ্গে কথা বলতে এবং তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।

যেসব রোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এই হাসপাতালে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, গাউট, ব্রঙ্কাইটিস, পরিপাক সমস্যা, চর্মরোগ, ত্বকের রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগ।

সিনোইউনাইটেড হেলথের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের নির্বাচিত করা হয় চীন ও চীনের বাইরে থেকে। তাদেরকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। সিনোইউনাইটেড হেলথ সম্পূর্ণ চিকিৎসক-চালিত একটি হাসপাতাল এবং এই বৈশিষ্টই এ প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যসব হাসপাতাল থেকে স্বাতন্ত্র দিয়েছে।

এই হাসপাতালে চীনা রোগীদের যেমন চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, তেমনি দেওয়া হয় প্রবাসী ও বিদেশি নাগরিকদেরও। সেসব রোগী চীন বা আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিমার আওতায় আছেন, সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিমা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে তাদের চিকিৎসা বিল সংগ্রহ করে সিনোইউনাইটেড হেলথ। চিকিৎসা বিমার বাইরে থাকা যেসব রোগী নিজস্ব ব্যয়ে চিকিৎসা করাতে চান তারা সেবা নিতে পারেন এখান থেকে।

এ হাসপাতালের অধীনে রয়েছে অনেকগুলো চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। এগুলোর মধ্যে অন্যতম পরিপাক রোগ কেন্দ্র, হৃদরোগ কেন্দ্র, এন্ডোক্রাইনোলজি, মেটাবলিজম ও থাইরয়েড কেন্দ্র, অর্থোপেডিকস, স্পোর্টস মেডিসিন ও পুনর্বাসন মেডিসিন কেন্দ্র, নারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পুরুষ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চর্মরোগ কেন্দ্র, চক্ষুরোগবিদ্যা ও অপটোমেট্রি কেন্দ্র, এবং সার্জারি কেন্দ্র।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এ হাসপাতালের লক্ষ্য হলো কঠোরভাবে চিকিৎসা অনুশীলনের নির্দেশিকা মেনে চলা, চিকিৎসায় সর্বশেষ প্রযুক্তি আনা এবং রোগীর ব্যক্তিগত চাহিদাকে সম্মান করার মধ্য দিয়ে চীনের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী হিসাবে আবির্ভূত হওয়া।

 

#ভেষজের গুণ

তেজপাতা কেবল মশলা নয়, ভেষজও

তেজপাতা সাধারণত মশলা হিসাবে ব্যবহৃত হয় স্যুপ ও মাংসের খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য। তবে এটি কেবল মশলা নয়, উত্তম স্বাস্থ্যগত গুণসম্পন্ন ভেষজও।

তেজপাতা পরিবারে অনেক প্রকার আছে, তবে প্রায় সবগুলোরই রয়েছে একই রকম স্বাদ ও পুষ্টিগুণ। তেজপাতা ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে ভারত পর্যন্ত বিশ্বের সর্বত্র জন্মায়।

তেজপাতা ফাইবার বা আঁশ, ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে তবে এতে ক্যালোরি পরিমাণ থাকে খুব সামান্য। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এটি। কারণ এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি’র একটি ভালো উৎস।

হজমের ক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী তেজপাতা। এটি চায়ের মতো করে খেলে পেট খারাপের সমস্যা দূর হয়। এ চা খুব সুগন্ধযুক্ত হয়, যা সাইনাস বা নাক বন্ধ সারাতে সাহায্য করতে পারে।

টাইপ-টু ডায়াবেটিস ঝুঁকির কারণগুলো হ্রাস করে তেজপতা। কয়েকটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, তেজপাতার ক্যাপসুল বা তেজপাতা থেকে তৈরি চা পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে পারে।

ভিটামিনের পাশাপাশি তেজপাতা ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের ভালো উৎস। এক টেবিল চামচ তেজপাতায় থাকে ৫ দশমিক ৫ ক্যালোরি, শূন্য দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, শূন্য দশমিক ১ গ্রাম চর্বি এবং ১ দশমিক ৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।