একান্ত সাক্ষাত্কারে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল প্রচণ্ড
2023-10-07 15:46:52

অক্টোবর ৭: ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর প্রথম সফর ছিল চীনে। সেসময় তিনি বেইজিং অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ১৫ বছর পর, তিনি তৃতীয়বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন এবং হাংচৌ এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চীনে আসেন। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে প্রচণ্ড বলেন, আমি হাংচৌ এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সম্মান পেয়েছি এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে জনাব প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নেপাল এবার হাংচৌ এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে দুই শতাধিক ক্রীড়াবিদ পাঠিয়েছে। এটি আমাদের ও নেপালের এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

১৯৫৫ সালে চীন ও নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির নানা পরিবর্তনের সামনে দুই  দেশ সর্বদা একে অপরকে সম্মান করেছে, একে অপরকে ঐক্যবদ্ধ ও সাহায্য করেছে এবং উভয়ের জয়ের ফলাফলের জন্য সহযোগিতা করেছে। যা বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের উদাহরণ তৈরি করেছে।

 

২০১৭ সালে, চীন ও নেপাল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অধীনে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহতভাবে ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করেছে।

২৩ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জনাব প্রচণ্ড বলেন, আমাদের এই বৈঠকে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ বৃদ্ধি, নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাহিদা এবং কীভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায়- তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে, আন্তঃসংযোগ-সম্পর্কিত বিষয়বস্তুতে আলোচনা করা হচ্ছে। একই সময় আমরা বরাবরের মতো, নতুন যুগে ও নতুন প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গঠন নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া, আমাদের আলোচনায় নেপালের পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দারিদ্র্যমোচনের বিষয়েও কথা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। এ আলোচনা খুবই ইতিবাচক ছিল।

 

তিনি বলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে নেপাল-চীন সম্পর্ক নিয়ে অনেকবার বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট সি এক মহান দূরদর্শী নেতা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে এবং পরিপক্ব হচ্ছে। আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতন্ত্রের একটি নতুন মডেল, অর্থাত্ চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র নির্মাণে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। চীনের অভিজ্ঞতা বিশ্বজুড়ে কমিউনিস্ট পার্টির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেইসাথে যারা উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার চায়- তারা সবাই চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবে। বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, নেপালের রাজনৈতিক অবস্থান এবং নেপাল-চীন সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে তার অবস্থান দৃঢ় থাকবে।

 

প্রচণ্ড আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যে উদ্যোগগুলি পেশ করেছেন তাতে অনেক গুরুত্ব দিই। অংশীদার হিসেবে, আমরা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রস্তাবিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি এবং সক্রিয়ভাবে তা বাস্তবায়ন করি। এখন, প্রেসিডেন্ট সি বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা তাতে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি এবং একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়- তা নিয়ে আলোচনা করছি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার তৃতীয় মেয়াদে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমরা এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। আমি বিশ্বাস করি ২৫ সেপ্টেম্বর নেপাল-চীন যৌথ বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নেওয়া হবে।

 

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)