অক্টোবর ৬: দায়িত্বগ্রহণের মাত্র নয় মাস পর, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি পদচ্যুত হলেন। স্থানীয় সময় ৩ অক্টোবর রিপাবলিকাননিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে হাউস সদস্যরা ম্যাকার্থিকে অফিস থেকে অপসারণের জন্য ২১৬-২১০ ভোটে একটি প্রস্তাব পাস করে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, আমেরিকার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন; বিশৃঙ্খলায় প্রতিনিধি পরিষদ ও রিপাবলিকান পার্টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্রে দুটি রাজনৈতিক দলের লড়াই দেশটির রাজনীতিতে দিন দিন অশান্তি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন ইতিহাসে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে অপসারণের ঘটনা এটাই প্রথম। ম্যাককার্থি হলেন হাউসের প্রথম স্পিকার যাকে অপসারণ করা হল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অর্থবছর প্রতিবছরের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দুই দলের মধ্যে লড়াই আরও বেড়ে যায়। ডেমোক্র্যাটিক-নিয়ন্ত্রিত সিনেট ও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস পৃথক পৃথকভাবে অস্থায়ী অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব করে। কিন্তু কোনোটিই পাস হয়নি। রিপাবলিকান রক্ষণশীলরা কোনো সাময়িক আপস গ্রহণ না করার কথা বলে। স্থানীয় সময় গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ মুহূর্তে হাউসের স্পিকার হিসাবে ম্যাককার্থি ডেমোক্র্যাটদের সাথে একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং একটি অস্থায়ী বরাদ্দ বিল পাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি, বিলটিতে ফেডারেল ব্যয়কে ব্যাপকভাবে হ্রাস ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি সরাসরি তার সাথে রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের বিরোধকে তীব্রতর করে তোলে। স্থানীয় সময় ২ অক্টোবর রাতে চরম ডানপন্থি রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ম্যাট গায়েটস হাউস স্পিকারকে অপসারণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাককার্থি ডেমোক্রেটিক পার্টির সেবা করছেন’।
প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী সদস্যরা স্পিকারকে দুটি আইনসভা কার্যদিবসের মধ্যে ভোটের সময় নির্ধারণ করতে বলতে পারেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে অপসারণের জন্য শুধুমাত্র সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। আট জন ডানপন্থি রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ম্যাককার্থিকে কার্যত অফিস থেকে অপসারণ করেন। বিশ্লেষকরা বলেন, মার্কিন রাজনীতিতে পার্টিগুলোর মধ্যে স্বার্থের লড়াই সবসময় লেগেই আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষপাতিত্ব ক্রমশ উগ্র থেকে উগ্রতর হয়ে উঠেছে। এমনকি, অনেক পর্যবেক্ষক একে ‘গৃহযুদ্ধ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
রয়টার্স’র খবরে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে যদিও ম্যাককার্থি ডেমোক্র্যাটদের সাথে অস্থায়ী বরাদ্দ বিল নিয়ে কাজ করেন, তবুও অনেক ডেমোক্র্যাট শেষ পর্যন্ত তার অপসারণের পক্ষে থাকেন। এদিকে, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে উপদলবাদ ভোটে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান রাজনীতিতে ম্যাককার্থি ‘গিরগিটি’ নামে পরিচিত। এর অর্থ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে মনোনিবেশ করা এবং যথেষ্ট দৃঢ় না হওয়া। গত জানুয়ারিতে তিনি ১৫ দফা ভোটের পর এবং রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের অনেক বড় ছাড় দেয়ার পর প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। এটি ১৬৪ বছরের মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ইতিহাসে দীর্ঘতম নির্বাচন।
মার্কিন পন্ডিত ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা বলেন, মার্কিন ব্যবস্থার স্পষ্ট সমস্যা রয়েছে। অথচ এটা সংস্কার করা যাবে না। পক্ষপাতিত্বের কারণে কয়েক জন অতি-রক্ষণশীল আইনপ্রণেতা প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের পছন্দকে প্রভাবিত করতে পারেন। এটি মার্কিন রাজনীতির বর্তমান প্যাথলজির একটি লক্ষণ। যখন মার্কিন রাজনীতি গুটিকয়েকের স্বার্থের জন্য কাজ করে ও মার্কিন গণতন্ত্রের অবক্ষয় ‘গেম অফ থ্রোনস’-এ পরিণত হয়, তখন প্রশ্ন জাগে: মার্কিন রাজনীতিবিদদের ‘গণতন্ত্র’ এখনও কতোটা বিশ্বাসযোগ্য আছে? (ছাই/আলিম)