পূর্বপুরুষদের আদর্শ ও আগে আক্রমণ না করার ধারণা
2023-10-06 19:48:15

মিং থাইজু জু ইউয়ান জাং ছিলেন মিং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা-সম্রাট। ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দে, জু ইউয়ান জাং নানচিংয়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন এবং সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার দেশের নাম "দা মিং" এবং তিনি ইতিহাসে "মিং থাই জু" নামে পরিচিত। তিনি মঙ্গোলিয়ান ইউয়ান রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন।

তখন আন্তর্জাতিক পরিবেশও পরিবর্তিত হচ্ছিল। প্রাচ্য তখন ধীরে ধীরে সামন্ততান্ত্রিক পথে অগ্রসর হচ্ছেল এবং পশ্চিম বিশ্বের একটি বড় পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করেছিল। মিং রাজবংশ (১৪-১৭ শতাব্দী) এমন এক যুগে পড়েছিল যখন পাশ্চাত্য বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। রেনেসাঁ, ভৌগোলিক আবিষ্কার, ধর্মীয় সংস্কার, ইত্যাদি সবই ঘটেছিল সেই সময়কালে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাও পশ্চিমা দেশগুলিতে একের পর এক অঙ্কুরিত হয় এবং পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ঔপনিবেশিক যুগ শুরু করে।

জটিল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশে, মিং থাই জু "হংউ শাসন" শুরু করেছিলেন। মিং রাজবংশের প্রথম দিকে, জাতীয় শক্তি জবরদস্ত ছিল। মিং থাই জু ইউয়ান আক্রমন ও সামরিক শক্তির কূটনীতি পরিত্যাগ করেন এবং মিং রাজবংশের বৈদেশিক নীতির দুটি মূল নীতি প্রতিষ্ঠা করেন: একটি হল শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক নীতি  অনুসরণ করা এবং অন্যটি কঠোরভাবে সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা। তখন অন্যান্য দেশগুলো মিং রাজবংশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ পায়।

মিং থাই জু স্পষ্টভাবে অন্যান্য রাজ্যের স্বাধীনতা ও বৈধ অধিকার বুঝতে পেরেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে, তিনি তাদের প্রতি একটি "উদার ও কল্যাণকর" দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন; অর্থনৈতিকভাবে, তিনি "শ্রদ্ধা নিবেদনের বিনিময়ে আরও বেশি উপকার দেওয়ার” নীতি গ্রহণ করেন। মিং রাজবংশের বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিকতা দেখানোর জন্য, শ্রদ্ধা নিবেদন দলের আনা পণ্যগুলো প্রায়শই উচ্চ মূল্যে ক্রয় করা হতো এবং কখনও দাম এমনকি পণ্যের স্বাভাবিক মূল্যের ১০ গুণ পর্যন্ত পৌঁছাতো। জাতিগত সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি এই ধারণাটি সামনে রেখেছিলেন যে, "হান জাতি ও অন্যান্য জাতির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই; উপনাম ভিন্ন হলেও আমরা একই পরিবারের সদস্য।" তিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ধারণার বিরোধিতা করেন এবং উন্মুক্ত ও সহনশীল মানসিকতার সাথে চীনা জাতিকে পরিচালিত করেন।

অযৌক্তিক যুদ্ধ ও নির্বিচার যুদ্ধের বিরোধিতা করার এবং যুদ্ধে সতর্কতার মিং থাই জু-এর কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার পেছনে গভীর ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। মিং রাজবংশের প্রতিষ্ঠার পর, কূটনৈতিক পরিস্থিতি একটি অভূতপূর্ব সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের জন্য, তিনি অভ্যন্তরীণভাবে যুক্তিসঙ্গত ও আইনগত রাষ্ট্র-শাসন কৌশল গ্রহণ করেছিলেন এবং বাহ্যিকভাবে তিনি কনফুসীয় দানশীলতা, ন্যায্যতা, শিষ্টাচার, প্রজ্ঞা ও বিশ্বস্ততা পররাষ্ট্রনীতির পথপ্রদর্শক নীতি হিসাবে মেনে চলেছিলেন। তিনি অন্যান্য দেশ "আক্রমণ না করার" ধারণাটি সামনে রেখেছিলেন।

ইউয়ান রাজবংশের ক্রমাগত সামরিকবাদ অবশেষে বিশাল ইউয়ান রাজবংশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিল। মিং থাই জু ব্যক্তিগতভাবে এই ইতিহাসটি অনুভব করেছিলেন এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি "মিং থাই জু-এর রেকর্ডস"-এ ভবিষ্যত প্রজন্মকে বারবার সতর্ক করেছেন: "রাজাদের শাসন ভূখণ্ডের আকারের ওপর নির্ভর করে না, মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রশাসক নৈতিকতা গড়ে তোলেন কি না এবং জনগণের শান্তি নিশ্চিত করেন কি না। তাই অন্য দেশ আক্রমণ ও দখলের সামরিক পদক্ষেপ নিষিদ্ধ করা এবং প্রতিরক্ষামূলক সামরিক কৌশল বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।"

মিং থাই জু তার শাসনামলে এই ধারণার ওপর জোর দিতে থাকেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের জন্য লোভী না হওয়া এবং দুর্বল দেশগুলোকে আক্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেন তিনি। মিং থাই জু ব্যক্তিগতভাবে "হুয়াং মিং পূর্বপুরুষের নির্দেশাবলী" সংকলনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

তত্কালীন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে, মিং থাই জু জাতীয় কৌশলগত উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ করেছিলেন: চীন একটি বিশাল দেশ, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে পাহাড়, সমুদ্র বা একে অপরের সংলগ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন। কিছু ছোট দেশ প্রত্যন্ত কোণে অবস্থিত। যদি সৈন্যদের অন্য দেশ দখলে পাঠানো হয়, তবে দখলকৃত জমি দেশে সরবরাহ করা যাবে না। আর পরাধীন প্রজারা কখনও আপন হয় না। অন্য দেশ যদি আমাদের সীমান্তে হয়রানি করতে আসে, তাহলে এটি তাদের জন্য বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত হবে না। কারণ, চীন তখন ন্যায়নীতির ভিত্তিতে জাতীয় শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে। অন্য দেশ যদি যুদ্ধে উসকানি না দেয়, চীন তাদের আক্রমণ করবে না।”

মিং থাই জু "সম্রাট মিং রাজবংশের পূর্বপুরুষ নির্দেশাবলী"-তে কোরিয়া, জাপান, সুমাত্রা ও জাভাসহ ১৫টি দেশকে "আক্রমণ না করার” তালিকায় অনুর্ভুক্ত করেন। তিনি শান্তিপূর্ণ কূটনীতির ধারণা মেনে চলতেন। "আক্রমণ না করার" ধারণাটি হল জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে, শান্তিপূর্ণ কূটনীতি, যা নৈতিক কূটনীতি। এটি ক্ষমতার রাজনীতি ছিল না, বা এটি শান্তির অন্ধ অনুসরণও ছিল না। এটি সামগ্রিক প্যাটার্ন হিসাবে "মহৎ সম্প্রীতি"-র মৌলিক চিন্তাধারা। এটি আন্তর্জাতিক বিনিময়ের সমসাময়িক চীনের ধারণাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)