চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাং চৌতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯তম এশিয়ান গেমস। আমি যেখানে আছি তা এবারের এশিয়ান গেমসের অন্যতম স্টেডিয়াম। এটি ই-স্পোর্টস কেন্দ্র। আপনি ঠিকই শুনেছেন, এখানে অনুষ্ঠিত হয় ই-স্পোর্টসের নানা প্রতিযোগিতা। সহজ করে বললে, কম্পিউটার ও মোবাইল গেমস প্রতিযোগিতা আনুষ্ঠানিক ইভেন্ট হিসেবে এবারের এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আপনারা হয়ত জানতে চান, কি কি কম্পিউটার গেমস বা মোবাইল গেমস এতে রয়েছে? আসলে এমন বিতর্ক দীর্ঘসময় ধরে চীন এমনকি বিশ্বে রয়েছে; আর হাং চৌ এশিয়ান গেমস প্রথমবার ই-স্পোর্টস আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ৭টি পদক দেওয়া হবে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর ই-স্পোর্টসের সব প্রতিযোগিতা শেষ হয়। এবার DOTA2, FIFA online4,Arena of Valor,League of Legends সহ ৭ ধরনের গেমসের প্রতিযোগিতার মধ্যে চীন ....টি পদক অর্জন করেছে। হাংচৌ এশিয়া গেমস দেখতে আসা কয়েকজন যুব দর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আমকে জানিয়েছে যে, এশিয়ান গেমসের সব টিকিটের মধ্যে ই-স্পোর্টসের টিকিট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং টিকিট কিনতে চাইলে শুরুতে লটারিতে জয়ী হতে হবে। এটাই এবারের এশিয়া গেমসের একমাত্র ইভেন্ট যে তার টিকিট কেনার জন্য লটারি করতে হলো।
ঐতিহাসিক ক্রীড়ার তুলনায় ই-স্পোর্টসের ইতিহাস খুব বেশি না। ই-স্পোর্টসের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২০ বছর সময় পার হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে তবে এবারের এশিয়া গেমসে ই-স্পোর্টস আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া ইভেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কোন সন্দেহ নেই, গেল কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দ্রুত উন্নত হওয়া ক্রীড়া হলো ই-স্পোর্টস। যেমন পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের ই-স্পোর্টস বাজারের মূল্য ১৫ হাজার কোটি ইউয়ানের বেশি। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনের ই-স্পোর্টস খাতে আয় ছিল ৭৬০০ কোটি ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৭৪ শতাংশ বেশি। চীনে যারা কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস খেলে তাদের সংখ্যা ৪৮.৭ কোটি।
২০২০ সালের শেষ দিকে, এশিয়া অলিম্পিক পরিষদের ২৯তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ই-স্পোর্টসকে হাংচৌ এশিয়া গেমসের আনুষ্ঠানিক গেমস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রভাবিত এমন একটি আইটেম এশিয়া গেমসে অবশ্যই হাং চৌ এশিয়া গেমসের ওপর মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং আরও বেশি দর্শক বিশেষ করে যুবকদের আকর্ষণ করেছে। এশিয়ায় ই-স্পোর্টস একটি ক্রীড়া হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।
গত জুলাই মাসে ঘোষণা করা হয় যে, ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত জাপান এশিয়া গেমসেও ই-স্পোর্টস অব্যাহত আনুষ্ঠানিক ইভেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা হবে এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ই-স্পোর্টস এশিয়া কাপ।
বিতর্ক থেকে স্বীকৃতি পর্যন্ত, ই-স্পোর্টসের দীর্ঘ একটি যাত্রা হয়েছে। এশিয়া গেমসে ই-স্পোর্টসের যোগদান একদিকে এ প্রতিযোগিতার মান উন্নত করেছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বাড়িয়ে দিয়েছে। এশিয়া গেমসের মাধ্যমে ই-স্পোর্টস সম্পর্কে মানুষের ধারণাও পরিবর্তন হতে পারে। যদিও ই-স্পোর্টস দেখতে ঐতিহ্যিক ক্রীড়ার মতো নয়। তবে তারা একইভাবে প্রতিযোগিতামূলক চেতনা প্রতিফলন করে।
এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে ই-স্পোর্টসকে আর শুধু খেলা বা বিনোদন হিসাবে বিবেচনা করা হয় না বরং পেশাদার ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটি এশিয়ান গেমসের ইতিবাচক প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি।
(শিশির/তৌহিদ)