১. বাংলাদেশের নারীরা পরিশ্রমী: পলিন গান,
২. মিয়াও নারীদের এমব্রয়ডারি চমক জাগাচ্ছে মিলানে
৩. নারীর শক্তিকে জাগিয়ে তোলা
৪. চায়নিজ স্টাইল
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
বাংলাদেশের নারীরা পরিশ্রমী: পলিন গান,
পহেলা অক্টোবর উদযাপিত হয় চীনের জাতীয় দিবস। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন নতুন যাত্রা শুরু করে। চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও সেতুং বলেছিলেন ‘চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারীরা’। তিনি রাষ্ট্রীয় জীবনে, আইনে, সংবিধানে এবং দেশগঠনে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা, সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি তাদের সকল কর্মকান্ডে নারী-পুরুষ সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চীনে সামাজিক জীবনে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং জেন্ডার বৈষম্য বিলোপে কাজ করে চলেছে অল চায়না উইমেন ফেডারেশন।
অল চায়না উইমেন ফেডারেশনের সদস্য পলিন গান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আছেন। প্রবাসী চীনাদের সংগঠন ওভারসিজ চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের স্থায়ী অনারারি প্রেসিডেন্টও তিনি। তার সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়, বাংলাদেশের নারীদের চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বিষয়ে।
বাংলাদেশে অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের মতো নারীরাও কাজ করছেন। পলিন গান বাংলাদেশের নারীদের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ। তিনি আকাশ ছুঁতে চাইকে বলেন,
‘বাংলাদেশে নারীর সংখ্যা অনেক। আমার কারখানায় অনেক নারী কর্মী পরিচালনার পদে কাজ করছেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশি নারীদের ওপর আমাদের নজর দেওয়া উচিত এবং গুরুত্বারোপ করা উচিত। তারা অনেক পরিশ্রমী। এখন সমাজ উন্নত হচ্ছে, নারী শুধু চাকরিই করে না, বরং পরিবারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে এসে আমি দেখতে পাচ্ছি যে, নারীর মর্যাদা বাড়ছে। আমি আশা করি, বাংলাদেশে চীনের সব প্রতিষ্ঠান, ওভারসিজ চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সব সদস্য প্রতিষ্ঠান বেশি বেশি বাংলাদেশি নারীদেরকে পরিচালনা পদে নিয়োগ করবে, যাতে বাংলাদেশি নারীরা বিভিন্ন খাতে নিজের ভূমিকা পালন করতে পারে।’
পলিন গান আশা করেন বাংলাদেশি নারীরা আরও বেশি সুযোগ পাবেন এবং নিজের দেশ গঠনে আরও বেশি অবদান রাখবেন। তিনি বাংলাদেশী ও চীনা নারীদের এগিয়ে যাওয়াকে অভিনন্দন জানান।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শান্তা মারিয়া
মিয়াও নারীদের এমব্রয়ডারি চমক জাগাচ্ছে মিলানে
চীনের ৫৬ জাতির অন্যতম হলো মিয়াও জাতি। এই জাতির নারীদের রয়েছে বিশেষ এমব্রয়ডারি শিল্প। আবহমান কাল ধরে মিয়াও নারীরা এমব্রয়ডারির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের জাতির কাহিনী ও ঐতিহ্য। সম্প্রতি ইউরোপেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে মিয়াও জাতির নারীদের এই এমব্রয়ডারি।
মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর নারীদের তৈরি এমব্রয়ডারি , মিয়াও এমব্রয়ডারি হিসেবে সমধিক পরিচিত। চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই এমব্রয়ডারি সম্প্রতি ইউরোপে ইতালির মিলান ফ্যাশন উইকে ঝড় তুলেছে।
মিয়াও এমব্রয়ডারির মাধ্যমে নারীরা তাদের জাতির কাহিনী, নানা রকম লোকজ বিশ্বাস, পৌরাণিক প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন। ড্রাগন, ফিনিক্স, মাছ, ফুল ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় বিশেষ নকশী কাজের মাধ্যমে । পরিবারের প্রবীণ নারীদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্মের নারীরা এই এমব্রয়ডারি শিখে নেন।
মিলানে চীনের কনসুলেট জেনারেল, কুইচোও প্রাদেশিক সরকার যৌথভাবে মিলান ফ্যাশন উইকের মধ্যে একদিন মিয়াও এমব্রয়ডারি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। একটি ফ্যাশন প্যারেডে অংশ নেন নামী দামী মডেলরা। সেখানে ঐতিহ্যবাহী এমব্রয়ডারি ব্যবহার করে আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক প্রদর্শন করা হয়। আধুনিক ওভারকোট, স্কার্ট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় মিয়াও সূচিকর্ম।
প্রদর্শনী এবং বিশেষ ফ্যাশন প্যারেড দুটোই দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে। নারীদের হাতের এই নকশা মুগ্ধ করে শিল্পবোদ্ধা ও ফ্যাশনপ্রেমীদের। ইউরোপের এই বিখ্যাত ফ্যাশন উইকে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নারীদের কারুশিল্পের জন্য নতুন বাজার উন্মোচনও করা হয়।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
নারীর শক্তিকে জাগিয়ে তোলা
১৯তম এশিয়ান গেমস চলছে। বিভিন্ন দেশের নারীরা তাদের ক্রীড়া শৈলীতে উজ্বল করছেন দেশের মুখ। অতীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সমাজে মনে করা হতো, খেলাধুলা বা স্পোর্টস শুধুমাত্র পুরুষের। নারীদেরকে খেলাধুলায় সেভাবে এগিয়ে যেতে দেয়া হতো না। নারীরাও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতেন। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। নারীর ভিতরে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
কিশোরী-তরুণীদের ভিতরে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা এবং তাদের জীবনের পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে এক বিশাল কর্মসূচি রয়েছে চীনে। ‘বাউন্ডলেস গার্লস প্রজেক্ট’ নামে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো টিনএজ মেয়েদেরকে খেলাধুলায় উৎসাহ দেয়া এবং জেন্ডার সচেতনতামূলক শিক্ষা দেয়া।
এর আওতায় গেল গ্রীষ্মে মেয়েদের জন্য সামার ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। ইয়ুননান প্রদেশের ডালি শহরে ২২টি স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সামার ক্যাম্পে বিভিন্ন রকম খেলাধুলাসহ গান, নাচ, ছবিআঁকা ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জেন্ডার সচেতনতামূলক শিক্ষা দিয়ে তার ভিতরের আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলা হয়।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী ভলেনটিয়ার হয়ে আসেন এই মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে। এমনি একজন ভলেনটিয়ার ইয়ে থিংথিং। তিনি চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিশোর বয়সে তিনি নিজেই ছিলেন লাজুক প্রকৃতির। আত্মবিশ্বাস কম ছিল। বাইরের লোকের সঙ্গে কিংবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে কথা বলতে পারতেন না। তবে এই ধরনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিয়ে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
২০১৯ সালের নারী দিবসে ৮ মার্চ এই প্রজেক্ট শুরু হয়। মাঝখানে কোভিড মহামারীর কারণে বন্ধ ছিল। স্পোর্টস পোশাক প্রস্তুতকারক নাইকি এটা প্রথম শুরু করে। এখন পর্যন্ত সারাদেশের ৭০০ প্রাইমারি স্কুলের এক লক্ষ ৬০ হাজার মেয়ে এখানে অংশ নিয়েছে। স্কুলের মেয়েরা ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছে। তারা স্থানীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিচ্ছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
চায়নিজ স্টাইল
চীনের ফ্যাশন জগতে নারীদের পোশাকে ও জীবনযাত্রায় এখন নতুন ট্রেন্ড হলো ‘চায়নিজ স্টাইল’ কথাটি। নারী ফ্যাশন ডিজাইনার ইয়াং ইংইং ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তার চায়নিজ স্টাইল ব্র্যান্ড ‘থুইয়ুয়ে’। বর্তমানে তিনি ফ্যাশন ডিজাইনে রীতিমতো আইকনে পরিণত হয়েছেন।
ছবি: ইয়াং ইংইং এর ডিজাইন করা পোশাকে মডেল
ইয়াং মনে করেন তরুণ প্রজন্মের চীনা নারীরা তাদের পোশাক ও লাইফস্টাইলে চীনা ঐতিহ্য, আরাম এবং ব্যস্ত জীবন ও পেশার সমন্বয় ঘটাতে চাচ্ছেন। একসময় তারা পাশ্চাত্যমুখী ছিলেন। কিন্তু এখন তারা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করছেন। কিন্তু তাই বলে যে তরুণীরা অতীতের ভারী পোশাক ও গৃহমুখী জীবনযাত্রায় ফেরত যাচ্ছেন তা মোটেই নয়।
ছবি: ইয়াং ইংইং এর ডিজাইন করা পোশাকে মডেল
তারা চাচ্ছেন প্রাচীন চায়নিজ কারুশিল্প তাদের আধুনিক পোশাকে ব্যবহার করতে। হয়তো পোশাকে থাকবে এমব্রয়ডারি, ফিতা, পোশাকের কাটিংয়ে থাকবে চীনা ঐতিহ্যের ছোঁয়া কিন্তু সেটা হতে হবে একজন ব্যস্ত পেশাজীবী নারীর আধুনিক পোশাকে যাতে তার চলাফেরার স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট না হয়।
ইয়াং ইংইং তার নিজস্ব ব্র্যান্ড থুইয়ুয়ে নিয়ে আধুনিক চীনা নারীর পছন্দের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। শুধু ইয়াং ইংইং নন, আরও অনেক নারী ফ্যাশন ডিজাইনার ‘চায়নিজ স্টাইল’ থিম নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। মধ্য শরৎ উৎসবের ও চীনের জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম, হোসনে মোবারক সৌরভ
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল