আঙুরের রাজ্য গড়েছে চীন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৮
2023-10-04 18:05:51

                                                 

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. আঙুরের রাজ্য গড়ে তুলেছে চীন 

২. প্রযুক্তির ব্যবহার গতির সঞ্চার করেছে কৃষি খাতে

৩. ক্রেফিশ চাষে সফল চীনের চাষীরা

 

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

আঙুরের রাজ্য গড়ে উঠেছে সিনচিয়াংয়ে


আঙুর পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়ায় মুশকিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনেও আঙুরের চাষ করা হয়। বিশেষ করে  সিনচিয়াংয়ে বড় পরিসরে এর চাষ করা হয়। আঙুর ছাড়াও অন্যান্য ফল উৎপাদনে বিখ্যাত এই অঞ্চল। এখানকার আবহাওয়া ও প্রকৃতি রসালো আঙুর উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী।

আঙুরের বাগান মানেই এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে সবার মধ্যে। তাইতো দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি তারাও আঙুর সংগ্রহ করেন। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে উত্তর পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের তুরপান সিটির আঙুর খামারগুলোতে।

সিনচিয়াং বিভিন্ন ধরনের আঙুরের জন্য বিখ্যাত। তুরপানে সম্প্রতি একটি  আঙুর প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় যেখানে নানা জাতের আঙুর দেখে দর্শকরা অনেক তথ্য জানতে পারেন। তুরপান ফরেস্ট অ্যান্ড গ্রাস ব্যুরোর কর্মকর্তা ওয়াং ছুনইয়ান জানিয়েছেন তার দারুণ অনুভূতির কথা।

                                      ছবি: ওয়াং ছুনইয়ান, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, তুরপান ফরেস্ট অ্যান্ড গ্রাস ব্যুরো

 

“এই জাতের আঙুরের নাম ফ্লেম গ্রেপ। এগুলো তুরপানের লাল পাহাড়ের মতোই উজ্জ্বল লাল রঙের। এগুলোর বীচি নেই। তাই এর আরেক নাম সিডলেস ফ্লেম।  এই পার্পেল কালার আঙুরের নাম পার্পেল প্ল্যানেট। এটি পুরো গোলাকারএর মাঝখানে সাদা দাগও রয়েছে। আকার আর রঙের জন্যই এর এমন নাম।“

প্রদর্শনীতে ২২০ ধরনের আঙুর প্রদর্শিত হয়। সবচেয়ে বড় আকারের আঙুরের নাম সিনইয়ু আর সবচেয়ে ছোটটির নাম সুয়োসুয়ো।

চীনের ২০ শতাংশ আঙুর উৎপাদন হয় তুরপানে।  এবছর ৩৬ হাজার হেকটর জমি থেকে ১.৪ মিলিয়ন টন আঙুর পাওয়া যাচ্ছে। তুরপানে আঙুর বাগানের ঐতিহ্য দুই হাজার বছরের পুরনো। ৫৫০ জাতের আঙুর পাওয়া যায় এখানে।

সিনচিয়াংয়ের আপেলও খুব বিখ্যাত। বিশেষ করে আকসু প্রিফেকচারের টক-মিষ্টি রসালো আপেলের রয়েছে বিশেষ কদর। আকসুর ৩৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আপেল বাগান রয়েছে।

আকসু প্রিফেকচারের আওয়াত কাউন্টিতে আপেল খামারে এখন আপেল তোলা হচ্ছে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে পাকা আপেল। তারিম অববাহিকায় অবস্থিত আওয়াতে সূর্যের আলো প্রচুর। দিন ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্যও অনেক বেশি। এখানকার আপেল যেমন মিষ্টি তেমনি রসালো। হালকা টক স্বাদের জন্য এর কদর আরও বেশি।

সারাদেশেই চাহিদা রয়েছে এখানকার আপেলের। আপেল সংগ্রহ শেষ হলে তা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

আকসুর ওয়েনসু কাউন্টিতে ৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে আপেল বাগান রয়েছে। ৫ হাজার একর জমিতে আগে পাকে এমন জাতের আপেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে ভালে মুনাফা হচ্ছে কৃষকদের।

 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: এইচআরএস অভি

 

প্রযুক্তির ব্যবহার গতির সঞ্চার করেছে কৃষি খাতে

আধুনিক প্রযুক্তি সহজ করেছে মানুষের জীবনযাপন। বিশেষ করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার গতির সঞ্চার করেছে কৃষি খাতে। বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। সম্প্রতি চীনের হ্যনান প্রদেশে আয়োজন করা হয় চায়না গ্রেইন ট্রেডিং কনফারেন্স। এতে বিভিন্ন শস্য প্রদর্শনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারি সবার সামনে তুলে ধরা হয়।

কৃষিক্ষেত্রে চীনের আবিষ্কার প্রতিনিয়ত তাক লাগিয়ে দিচ্ছে পুরো বিশ্বকে। কৃষি উন্নয়ন ভাবনা ছড়িয়ে দিতে নানা রকম প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে দেশটি। সম্প্রতি হ্যনান প্রদেশের রাজধানী চেংচৌতে আয়োজন করা হয় চায়না গ্রেইন ট্রেডিং কনফারেন্স।

৩ দিনের এই সম্মেলনে অংশ নেয় আড়াই হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শানতুং প্রদেশ-ভিত্তিক প্রযুক্তি ফার্ম ‘পাওচিয়া ইন্টেলিজেন্ট’ এমন একটি রোবট ডিজাইন করেছে যেটি বিভিন্ন পণ্য আনলোড করার ক্ষেত্রে কারখানায় সহযোগিতা করতে পারে।

‘পাওচিয়া ইন্টেলিজেন্ট’র একজন প্রযুক্তি কর্মকর্তা ছাও সিয়ানরেন এই রোবটটির নানা দিক তুলে ধরেন।

                                     ছবি: ছাও সিয়ানরেন, প্রযুক্তি কর্মকর্তা

"এই রোবটটি ১৮০ কেজি পর্যন্ত পণ্য আনা-নেয়া করতে পারে। পণ্য প্যাকেজিংও করতে পারে এটি। এই রোবট একাই ৬ জন শ্রমিকের কাজ করে। এভাবে কায়িক শ্রম থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছে রোবটগুলো আর সহজ করেছে কারখানার জটিল সব কাজ"

আনহুই প্রদেশভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি ‘কাও থুরে’ এমন একটি মেশিন তৈরি করেছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন আঙ্গিকে ধানের বিশ্লেষণধর্মী ছবি দেখা যায়। এই মেশিন একটি ধানের ২০ ধরনের ছবি প্রদর্শন করতে পারে।

এই সম্মেলনে ৫৫ বিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের প্রায় ১৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য ও তেলজাতীয় পণ্য বেচাকেনা হয়েছে। প্রদর্শিত হয় দেড় হাজারের অধিক কৃষি যন্ত্রপাতি।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

ক্রেফিশ চাষে সফল চীনের চাষীরা

একদম চিংড়ি মাছের মতো দেখতে ক্রেফিশ। চীনজুড়েই খুব জনপ্রিয় এই মাছ এবং ব্যাপক পরিসরে এর চাষ করা হয়। এই ক্রেফিশ চাষ করে ভালোই লাভবান হচ্ছে চাষীরা। সম্প্রতি এই ক্রেফিশের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

চীনের ক্রেফিশের রাজধানী নামে খ্যাত পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের সুই কাউন্টি। এখানে প্রতিবছরই ব্যাপক পরিসরে চাষ করা হয় চিংড়ি প্রজাতির এই মাছ।

সম্প্রতি এই কাউন্টিতে নতুন জাতের ক্রেফিশ উদ্ভাবন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই চীনা গবেষকরা। কাউন্টির নামে নতুন উদ্ভাবিত জাতের নামকরণ করেছেন সুই রেড ওয়ান।  

সাধারণ জাতের ক্রেফিশ ও নতুন উদ্ভাবিত জাতের ক্রেফিশ দেখতে অনেকটা আলাদা। তুলনামূলক লাল বর্ণের ক্রেফিশটিই সুই রেড ওয়ান। এই ক্রেফিশের আকার সাধারণ জাতের ক্রেফিশের চেয়ে অনেকটা বড়। ৪০ দিন বয়সের একটি সাধারণ ক্রেফিশ লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে অন্যদিকে সুই ক্রেফিশ লম্বায় ২০ সেন্টিমিটার। এছাড়া এই নতুন জাতটি সাধারণ জাতের মাছের তুলনায় অনেকটা আক্রমণাত্মক।

প্রায় অর্ধশত বছর ধরে এই কাউন্টির কৃষকরা চাষ করেন এই ক্রেফিশ। কখনো অল্প পরিসরে আবার কখনো ধানের সাথে সমন্বিত ভাবে চাষ করা হয় এই মাছ। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এই মাছ চাষ করছেন কেউ কেউ।

এছাড়া সাধারণ প্রজাতির চেয়ে খুব অল্প দিনে বড় হয় এই  সুই রেড ওয়ান ।

২০১২ সাল থেকেই নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছিলেন গবেষকরা। সেজন্য চীনের বিভিন্ন প্রদেশে চাষকৃত বড় আকারের ক্রেফিশ সংগ্রহ করেন তারা। এক দশকেরও বেশি সময় পর কৃষকদের আয় বাড়াতে ক্রেফিশের এই নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন এই চীনা গবেষকরা।

চীনের কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এই জাতের ক্রেফিশ বানিজ্যিকভাবে চাষ করবেন কৃষক্রা। ফলে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের সব জায়গায় দেখা এই মাছের তৈরি মজাদার সব খাবার।

 

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী