‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. মূল ভূখণ্ডের সাথে ম্যাকাও শিক্ষার্থীদের বিনিময় বাড়াতে হয়ে গেল চাকরি মেলা
চীনের মূলভূখণ্ড এবং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও এর মধ্যে বিনিময় বাড়াতে একটি চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়।
মূলভূখণ্ডে পড়াশোনা করা ম্যাকাওয়ের শিক্ষার্থী এবং ম্যাকাওয়ে পড়াশোনা করা মূলভূখণ্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত এই মেলায় ২ শতাধিক অনলাইন কোম্পানি এবং ২৮টি সরাসরি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করে। ২ হাজারের বেশি নিয়োগ অফার করা হয় চাকরি প্রার্থীর জন্য।
এতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ব্যক্তি পর্যায়ে উন্নয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ এই ধরণের উদ্যোগ।
ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের স্থানীয় সরকার বিভাগসূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে এমন আরো বেশ কয়েকটি চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মেলা থেকে দেড় হাজারের বেশি প্রার্থীকে চাকরি দেয়া হয়েছে। ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দেয়া হয়।
প্রতিবেদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : মাহমুদ হাশিম
২. ছুটির দিনগুলোতে ফিটনেসে গুরুত্ব দিচ্ছেন চীনের তরুণরা
একটা সময় পর্যন্ত চীনের তরুণরা ছুটির দিনগুলোতে ঘোরাঘুরি আর বিভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নিতেই বেশি ব্যস্ত থাকলেও বর্তমানে আধুনিক চীনের তরুণরা হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্য সচেতন। তারা ছুটির দিনগুলোতে ফিটনেসকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন কার্যক্রমে।
ছেংতু ইউনিভার্সিটি গেমস এবং হাংচৌ এশিয়াড গেমসসহ একাধিক ক্রীড়া ইভেন্ট চীনের মানুষকে ফিটনেসে গুরুত্ব দিতে আরও বেশি উৎসাহী করে তুলেছে। মধ্য শরৎ উৎসব এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে পাওয়া আট দিনের লম্বা ছুটিতে তরুণ অবকাশ যাপনকারীদের মধ্যেও এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বর্তমানে যেহেতু তরুণ প্রজন্ম স্বাস্থ্যের প্রতি বেশ মনোযোগী। তাই পর্যটনকেন্দ্রগুলোও তরুণ পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ‘স্পোর্টস প্লাস ট্যুরিজম’ ধারণাকে আরও ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। সম্প্রতি চিলিন শহরের একটি লেক রিসোর্ট পর্যটকদের জন্য ফ্রিসবি, হাইকিং, টেনিস প্রতিযোগিতা এবং সাঁতারের মতো ২০টিরও বেশি ক্রীড়া কার্যক্রমের আয়োজন করে।
আধুনিকীকরণের চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর মধ্যে একটি এই যুগের জনগণের স্বাস্থ্য। এ জন্য দেশব্যাপী ফিটনেসকে একটি জাতীয় কৌশল হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি জাতীয় ফিটনেস প্রচারাভিযানকে আরও এগিয়ে নিতে, ক্রীড়া ভেন্যু এবং পাবলিক ফিটনেস সুবিধার নির্মাণ বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় ক্রীড়া ভেন্যুগুলোর উপর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চীনে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন। ইতোমধ্যে, চীনজুড়ে ৪২ লাখেরও বেশি ক্রীড়া ভেন্যু রয়েছে। যা দেশটির ৩৭০ কোটি বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
৩. পর্যটন ফটোগ্রাফিতে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে
পর্যটন ফটোগ্রাফি বা ভ্রমণ ফটোগ্রাফি। গত কয়েক বছরে চীনে এই পেশা তরুণদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানের এই প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে নানা অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলতে পারদর্শি এই ফটোগ্রাফাররা।
পর্যটন ফটোগ্রাফিক পরিষেবাগুলো দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের রিসর্ট বা অবকাশ কেন্দ্রে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইয়ুননান, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের একটি শীর্ষ পর্যটন গন্তব্য, প্রদেশ জুড়ে অনেক দর্শনীয় স্থানে ফটোগ্রাফিক পরিষেবার জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখা যায়।
চীনে বিয়ের ফটোগ্রাফি বা প্রি-ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও খুব বেড়েছে। ফটোগ্রাফাররা তরুণ দম্পতিদের বিয়ের পোশাকে বিভিন্নভাবে ছবি তুলতে উৎসাহিত করে থাকেন।
ইয়ুননানের শাংগ্রিলার তরুণ ফটোগ্রাফার ছাং রোংশেং। পড়াশোনা শেষ করেই এই পেশা বেছে নিয়েছেন শখের বসে। এখন তিনি শখকে লালন করে ভবিষ্যতে নতুন কিছু করতে চান এই পেশায়।
"আমি প্রতিদিন সাত থেকে আটটি অর্ডার নিয়ে কাজ করি, এতে মাসিক আয় প্রায় ১৫ হাজার ইউয়ান বা ২ হাজার ১৭৩ মার্কিন ডলার।
ছাংয়ের মতো এমন আরেক তরুণ ফটোগ্রাফার হৌ শিশেং। "সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের অর্ডারের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তাদের মতো এমন অনেক তরুণ আছেন যারা এই পেশাতে কাজ করতে আগ্রহবোধ করছেন।
শাংগ্রি-লা ছাড়াও, অন্যান্য পর্যটন হটস্পট যেমন লিচিয়াং এবং তালিতেও ভ্রমণ ফটোগ্রাফি পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে।
ফটো স্টুডিওগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং পরিষেবা আপগ্রেডিংয়ের মাধ্যমে উদীয়মান বাজারের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে। এ জন্য স্টুডিওগুলো অতিরিক্ত কর্মীও নিয়োগ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইয়ুননানের পর্যটকদের মধ্যে বিয়ের ছবি, প্রতিকৃতি এবং পারিবারিক ছবি হল সবচেয়ে জনপ্রিয় পছন্দ। অনেক ভোক্তা ফটোগ্রাফারদের পেশাগত দক্ষতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। কিছু স্টুডিও গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের পোশাকও সরবরাহ করে।
চীনে সব মিলিয়ে পর্যটনখাতে ফটোগ্রাফির বেশ প্রভাব পড়েছে। বাণ্যিকভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবেদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : মাহমুদ হাশিম
৪. নবম সিওয়াইএ ইয়ুথ সেইলিং লীগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
চীনের হেবেই প্রদেশের ছিনহুয়াংতাও শহরে সম্প্রতি ‘নবম সিওয়াইএ ইয়ুথ সেইলিং লীগের’ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বছরের বার্ষিক গ্র্যান্ড ফাইনালের এই লেগে চীনের ২৮টি ক্লাবের ২৪৬ জন প্রতিযোগী অংশ নেন।
‘নবম সিওয়াইএ ইয়ুথ সেইলিং লীগের’ ফাইনাল প্রতিযোগিতাটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন চীনের সাধারণ মানুষ মধ্য-শরৎ উৎসব এবং জাতীয় দিবসের ছুটি উপভোগ করছিলেন। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, জুনিয়র নাবিকরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া দলীয় কুচকাওয়াজের মাধ্যমে মাতৃভূমির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্মান জানান।
এতে অংশ গ্রহণের জন্য প্রতিটি নাবিককে কমপক্ষে দুটি ‘সিওয়াইএ’ লীগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে কিংবা ‘কোসা স্মল সেইলর’ পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ ২০০ এর মধ্যে সমাপ্ত করতে হয়।
চায়না সেইলিং অ্যান্ড উইন্ডসার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান চাং সিয়াওতোং বলেন, “চীনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের যুব সেইলিং ইভেন্টগুলোর একটি হলো সিওয়াইএ সেইলিং লীগ এবং এটি তরুণ নাবিকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।”
বেইজিং সেইলিং সেন্টারের ১২ বছর বয়সী নাবিক লিউ ছে- এর দীর্ঘদিনের সেইলিং রেসের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি এ প্রতিযোগিতায় তরুণ নাবিকদের প্রতিনিধি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “প্রায় পাঁচ বছর আগে আমি এই সমুদ্র সৈকতে প্রথম নৌকার সংস্পর্শে আসি। তারপর থেকে আমি একজন নাবিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। পালতোলা নৌকা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। শুধু নৌযান চালানোর দক্ষতার ক্ষেত্রেই নয়, মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও এটি সাহায্য করেছে।”
পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিযোগিতায় পাঁচটি ক্যাটাগরি এবং পনেরটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার
সম্পাদক : মাহমুদ হাশিম
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী