স্বর্গের মতো শহর হাংচৌ
2023-10-04 18:24:49

গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে আমার ১৩ দিনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে বেইজিংয়ে ফিরে আসার দু সপ্তাহ পর আমি আবার নতুন যাত্রা শুরু করি। এবার আমি যাই চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌ। হাংচৌয়ের কথা যখন আসে, মনে পড়ে যায় একটি প্রবাদ, যা চীনে এত জনপ্রিয় ও প্রচলিত যে সবাই মুখস্ত বলতে পারে। প্রবাদটি হলো স্বর্গ যদি আকাশে থাকে, তাহলে পৃথিবীতে হাংচৌ ও সুচৌ শহর দুটি আমাদের স্বর্গ। ইতিহাসে হাংচৌ ৭ বারের মতো চীনের রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল। হাজার বছরের প্রাচীন এ নগরে রয়েছে যেমন সুন্দর ঐতিহ্য ও ইতিহাস তেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ। কারণ হাংচৌ একটি পার্কের শহরও। তাই হাংচৌ যাবার সুযোগের কথা শুনে আমার অনেক ভাল লাগে।

আসলে তিব্বতের ওই যাত্রা পরিকল্পিত সময় থেকে বেশ কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ের জন্য অন্তর্মঙ্গোলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর পরই অন্তর্মঙ্গোলিয়া যাত্রার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই আমি ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসি। ঠিক ওই সময় আমার সহকর্মী রুবি আমাকে বলেন যে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হবে। যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে আমরা দুজন এই ক্রীড়া মহোৎসব কভার করতে হাংচৌ যেতে পারি। একথা শুনে আমি ভাবি, কেন যাব না, অবশ্যই যাব। তাই আমরা দুজন নিবন্ধনের জন্য সব তথ্য জমা দিই। অলিম্পিকের পর বৃহত্তম ক্রীড়া আয়োজন হিসেবে এশিয়ান গেমস উপলক্ষ্যে নানা দেশের ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তা ও সাংবাদিক হাংচৌয়ে আসবেন। তাই এর ব্যবস্থাপনা ও সেবা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল একটি কাজ। এবারের হাংচৌর আয়োজন আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেটি পরের কথা।

যাই হোক, আমাদের যাবার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সাধারণত আমরা যখন বেইজিংয়ের বাইরে কোনও অ্যাসাইনমেন্টে যাই, তখন অনলাইনে সেখানকার স্থানীয় হোটেল বুক করি। তবে এবার আমরা হাংচৌ এশিয়ান গেমসের ‘সাংবাদিক গ্রামে’ থাকবো। হাংচৌ এশিয়ান গেমসে উপলক্ষ্যে নতুন তিনটি কমিউনিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো হলো ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক ও প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের গ্রাম। এশিয়ান গেমসের পর এসব বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হবে। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমস আয়োজন করা হয়েছিল। সেটি ছিল চীনের কোনও শহরে আয়োজিত প্রথম এশিয়ান গেমস। সে ক্রীড়া আয়োজনের পর বেইজিংয়ের এশিয়ান গেমস ভিলেজও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চল এখনও বেইজিংয়ের একটি উন্নত ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বড় একটি গেমস আয়োজনে ব্যয়ও অনেক। তাই গেমসের সব স্থাপনা যদি আবার ব্যবহার করা যায়, সেটাও একধরনের সাশ্রয়।

হাংচৌ এশিয়ান গেমস ২৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবং এর আগে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে নানা ইভেন্টের প্রথম দফা প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। আমরা বুলেট ট্রেনে চড়ে ২১ সেপ্টেম্বর বেইজিং থেকে হাংচৌয়ে যাই। সবচেয়ে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেনে গেলে সাড়ে ৪ ঘন্টার মতো সময় লাগে। এটা আসলে বিমানে যাওয়ার চেয়েও কম সময়। কারণ বিমানবন্দরের তুলনায় ট্রেন স্টেশন আমাদের কাছে। তাই ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। একুশ সেপ্টেম্বর সকালে ১১টার দিকে আমি ও রুবি বেইজিং থেকে হাংচৌয়ের উদ্দেশে রওনা হই। এর আগে আমি বেশ কয়েকবার হাংচৌয়ে গিয়েছি। প্রথম বার আমি স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প প্রকল্পের আওতায় হাংচৌ গিয়েছিলাম। তখন খুব ছোট ছিলাম। তারপর আমি নানা কাজে ৩ বার হাংচৌ গিয়েছি। শহরটি আমার বেশ ভাল লাগে। আমি ও রুবি মহামারির আগে একবার হাংচৌ যাই অ্যাসাইনমেন্টে। ওই সময় আমরা মাত্র ২ দিন হাংচৌয়ে ছিলাম আর এবার আমরা ওখানে থাকবো ৯ দিন। ভাবি হাংচৌ শহর ভালভাবে ঘুরে দেখার সুযোগ হবে এবার।

যাবার দিন হাংচৌয়ে বৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি ছাতা নিয়ে যাইনি। কারণ এমন বড় অনুষ্ঠান কভার করতে গেলে সাধারণত আয়োজকদের পক্ষ থেকে সব সাংবাদিককে একটি করে মিডিয়া ব্যাগ দেওয়া হয়। এতে ছাতা, কলম, কাগজ - এমন জিনিস থাকে। তবে হাংচৌ আসার পর আমরা শুনি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ এবারের এশিয়ান গেমসের প্রধান সম্প্রচারক। তাই আমাদের জন্য আলাদাভাবে একটি মিডিয়া ব্যাগ রাখা হয়েছে। তবে আমরা হাংচৌ পোছানোর পর সেখানে যেতে বিকেল ৬টা পার হয়ে যায়। ততক্ষণে আমাদের সংস্থার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা মিডিয়া ব্যাগ পাই না। বৃষ্টি অবশ্য খুব বেশি সময় থাকে না। আমরা ট্রেন স্টেশন থেকে নামার পর বিশেষ চ্যানেলের মাধ্যমে বাস খুঁজে পাই। এশিয়ান গেমসের সব নিবন্ধিত সাংবাদিকের জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে ভিলেজে যাবার জন্য। বিমানবন্দর ও ট্রেন স্টেশনে এমন সেবা দেওয়া হয়। গেমস চলাকালে ভিলেজ বন্ধ লুপের ব্যবস্থাপনায় থাকে। তার মানে বাইরের মানুষ ভিলেজে প্রবেশ করতে পারে না আর আমরাও যদি বাইরে যেতে চাই, তাহলে শাটল বাসে করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় যেতে হয় তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সি বা সিটি বাসে করে গন্তব্যে যেতে হয়। তাই ট্রেন স্টেশনে যদি সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত বাস না থাকে, তাহলে তারা ভিলেজ পৌঁছাতে পারেন না। ট্রেন স্টেশন ভিলেজ থেকে বেশি দূরে না। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আমরা ভিলেজে পৌঁছে যাই। শুরুতে আমাদের একটি করে বিশেষ ‘সাংবাদিক কার্ড’ পাই। এ কার্ডে আমাদের সব তথ্য রয়েছে এবং প্রতিবার সিকিউরিটি চেকের সময় মেশিনগুলো আমাদের কার্ড স্ক্যান করে এবং মনিটরে আমাদের তথ্য প্রদর্শিত হয়। সিকিউরিটি চেকের পর আমরা ভিলেজে ঢুকি। এটি বিশাল এক কমিউনিটি; সুপার মার্কেট, ডাইনিং, দোকান সবকিছু আছে এখানে। আমি ও রুবি একই বাড়িতে থাকি। এখানে দুটো বেডরুম আছে। এটি হোটেল নয়; নিজের বাড়ির মতো। ওয়াশিং মেশিনও আছে। প্রতিটি বিছানায় রাখা আছে একটি ব্যাগ। আমি খুলে দেখি এতে রয়েছে টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, সাবান ইত্যাদি। ‘গ্রিন’ এবার এশিয়ান গেমসের মূল ধারণার মধ্যে অন্যতম। তাই আয়োজকরা খড়সহ নানা উপাদান দিয়ে টুথব্রাশ ও কাপ তৈরি করেছে। তাছাড়া, আমরা যদি এখানে অবস্থানের সময় তোয়াল ও বিছানার চাদর পরিবর্তন না করি, তাহলে বিশেষ কুপন পাই এবং সে কুপনের বিনিময়ে ছোট উপহার নিতে পারি। আসলে ভিলেজে আসার পরই এবারের এশিয়ান গেমস আয়োজনে ‘গ্রিন’ চেতনা সম্পর্কে ধারণা পাই। রুম দেখার পর আমরা ডাইনিং দেখতে যাই। তিনটি ভিলেজ ও প্রধান মিডিয়া সেন্টারে ডাইনিং রয়েছে। ভিলেজে বিনামূল্যে নাস্তা পরিবেশন করা হয় এবং বাকি সময়ে প্রতিবার ২০ ইউয়ান দিয়ে বুফে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বুফেতে চীন, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরো-এশিয়াসহ নানা অঞ্চলের খাবার রাখা হয়। অবশ্য হালকা খাবারও থাকে। আমরা ওখানে রাতের খাবার খাই এবং প্রধান মিডিয়া সেন্টার দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

প্রধান মিডিয়া সেন্টার সাংবাদিকের জন্য একটি পরিষেবা কেন্দ্রের মতো। সেখানে সাংবাদিকের জন্য ইন্টারনেট ও ছোট অফিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এশিয়ান গেমস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এখানে পাওয়া যায়। প্রধান মিডিয়া সেন্টারটিকে বলা হয় ‘এমএমসি’। ভিলেজ থেকে এমএমসিতে যেতে শাটল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা রয়েছে, যেটা প্রায় ২৪ ঘন্টার মতো চালু থাকে। তার মানে যে কোনও সময় আমরা ভিলেজ থেকে এমএমসিতে যেতে পারি এবং ওখান থেকে ফিরতে পারি। যাহোক, শাটল বাসে করে ১০ মিনিটের মধ্যে এমএমসিতে পৌঁছে যাই আমরা। বিশাল একটি জায়গা। হাংচৌ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র এখন এমএমসি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি সময় এটি আন্তর্জাতিক মেলা বা প্রদর্শনীর জায়গা। এশিয়ার নানা দেশের সাংবাদিকরা এখানে জড়ো হয়েছেন। এমএমসিতে বাংলাদেশ থেকে আসা দুজন সাংবাদিকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তারা খুব ব্যস্ত ছিলেন তখন। কারণ ওইদিন বাংলাদেশ ও ভারতের পুরুষ দলের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচ ছিল। তারা সে সম্পর্কিত সংবাদ লিখছিলেন। পরের দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একটি প্রতিযোগিতা হবে। আমরা এমএমসি ও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পারি, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলটি পদক লাভের ব্যাপারে খুব আশাবাদী। তাই আমরা ২২ তারিখে তাদের প্রথম ম্যাচ দেখার সিদ্ধান্ত নিই। এমএমসিতে কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা ফিরে যাই।

দ্বিতীয় দিন আমরা ক্রিকেট প্রতিযোগিতা দেখতে যাই। এমএমসি থেকে আমরা শাটল বাসে করে নানা প্রতিযোগিতার স্টেডিয়াম যেতে পারি। তবে ব্যাপার হলো আমরা সে বাসের সময়সূচি জানি না। পরে জানতে পরি, বিকেলে ২টায় একটি বাস আছে। তবে মাত্র দু মিনিটের মতো দেরি হওয়া আমরা সেটি ধরতে পারি না। পরে বাস ছাড়বে ৩টায়। কোনও উপায় থাকে না; আমাদের আরও এক ঘন্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়। অবশ্য আমরা সিটি বাস বা সাবওয়ে চড়ে ভেন্যুতে যেতে পারি, তবে চেক করে দেখেছি সেভাবে যেতে দেড় ঘন্টা লাগবে এবং সাবওয়ে খুঁজে পেতেও সময় লাগবে। তাছাড়া, বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্রিকেট স্টেডিয়াম চেচিয়াং শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের পিংফেং ক্যাম্পাসে অবস্থিত। ক্রিকেট চীনে তেমন জনপ্রিয় ক্রীড়া নয়। তাই ক্রিকেট মাঠও ছিল না। তবে এবার এশিয়ান গেমসের কারণে নতুন একটি ক্রিকেট মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। গেমসের পরে এই মাঠ স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর খেলার মাঠ হিসেবে কাজে লাগবে।

পঞ্চাশ মিনিটের গাড়ি যাত্রা শেষে ৪টার দিকে আমরা স্টেডিয়ামে পৌঁছাই। তখনও ম্যাচ শুরু হয়নি। ২টায় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা ছিল। স্টেডিয়ামের স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সাড়ে ৪টার মধ্যে যদি বৃষ্টি না থামে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী দুটি দলের মধ্যে এশিয়া র‌্যাংকিংয়ে উপরে থাকা দলটি সেমিফাইনালে চলে যাবে। ওই দিন বাংলাদেশ ও চীনের হংকংয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার কথা ছিল এবং র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দল উপরে ছিল। ৪টার মধ্যে বৃষ্টি শেষ থামে না। ফলে ম্যাচটি ভেসে যায়। বাংলাদেশের জন্য সেটা একটি ভাল খবর। সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশকে সেমিফাইনাল পর্বের জন্য নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়। জীবনে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এসে, আমার আসলে কিছুই দেখা হয় না। তবে সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠে যায়।

ম্যাচের পর নিয়ম অনুযায়ী সব ক্রীড়াবিদকে সাক্ষাত্কার এলাকায় যেতে হয়। সেখানে সব সাংবাদিক থাকেন এবং সাক্ষাত্কার নিতে পারেন। সাক্ষাৎকারের জন্য কেবল এখানেই সুযোগ পাওয়া যায়। অবশ্য কোনও ক্রীড়াবিদ চাইলে সাক্ষাত্কার নাও দিতে পারেন। এশিয়ান গেমসের ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা খুব কঠোর। সাংবাদিক কার্ড দিয়ে যেমন ক্রীড়াবিদদের গ্রাম বা প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের গ্রামে ঢোকা যায় না, তেমনি তারাও সাংবাদিক গ্রামে আসতে পারে না। তাই ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, সাক্ষাত্কার এলাকায় যেতে হয়।

রুবি ও আমি সেখানে যাই এবং বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য অপেক্ষা করি। তবে তারা সাক্ষাত্কার দিতে চান না। সৌভাগ্য যে, দলের ম্যানেজার জনাব তৌহিদ মাহমুদ আমাদের বাংলা কথা বলা শুনে থামেন এবং আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তারপর তিনি দলের আধিনায়ক নিগার সুলতানাকে নিয়ে এসে সাক্ষাৎকার দেন। এর আগে আমি কখনও এমনভাবে সাক্ষাত্কার নিয়ে নেইনি। আমি এদিন এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। তখন থেকে নারী দলের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। পরবর্তী কয়েক দিন তাদের নিয়ে আমার অসাধারণ স্মৃতি তৈরি হয়।

সাক্ষাত্কার নেওয়ার পর আমরা সাংবাদিক গ্রামে ফিরে যাই। যাবার পথে ফোন দিয়ে নিউজ এডিট করি। যদিও সাংবাদিক হিসেবে অনেক বছর ধরে কাজ করে আসছি, তবে এবার আমি প্রথমবারের মতো সাংবাদিকের মতো কাজ করি। মানে আগে আমরা বেশিরভাগ সময় সংবাদ অনুবাদের কাজ করেছি। সংবাদ অনুবাদের কাজটি সময়ের সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতা নয়। সে কাজে সুন্দরভাবে খবর চীনা ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবার সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। সময় মতো সুন্দর একটি নিউজ ও ভিডিও বানাতে হবে। কারণ যদি পরের দিন আমরা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সেমিফাইনলে যাবার খবর প্রকাশ করি, তাহলে তার কোনও অর্থ হবে না। সাক্ষাত্কারের ভিডিও ফোন দিয়েই ধারণ ও সম্পাদনা করি এবং সময়মতো আমাদের ওয়াইসাইটে প্রকাশ করি। সেদিনের কাজ এ পর্যন্ত।

তেইশ সেপ্টেম্বর হাংচৌ এশিয়ান গেমস উদ্বোধন হয়। তবে আমরা দুজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাইনি। আমরা ভাবি এদিন আমরা বরং হাংচৌয়ের বৈশিষ্টপূর্ণ পশ্চিম হ্রদে যাই আর সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধন উদযাপন করি। হাংচৌ আসার তৃতীয় দিনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। এটি অসাধারণ এক ব্যাপার। কারণ এখানে এ সময় সাধারণত বৃষ্টি হয়না। তবে এ বছর টানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হয়। আমার ছাতা নেই। কারণ মিডিয়া ব্যাগে এবার ছাতা ছিল না। বৃষ্টি তেমন ভারী ছিল না। তাই একটু ভিজলেও শুটিং চালিয়ে যেতে পারি। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা ওই দিনের কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে কিছুটা কষ্টের কারণ হয়। আগামী অনুষ্ঠানে আমরা উদ্বোধন দিনে কী কী করেছি এবং কী কী ঘটেছে সেগুলো নিয়ে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। আমাদের সঙ্গে থাকবেন আশা করি।