বিজ্ঞানবিশ্ব ৩৮তম পর্ব
2023-10-02 17:18:45

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩৮তম পর্বে যা থাকছে:

* ক্রীড়াবিদদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা মসৃন করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

* আন্তর্জাতিক শিল্প মেলায় প্রাধান্য পেলো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি

* চীনের তৈরি যাত্রীবাহী বিমানের অভাবনীয় সাফল্য  

 

 

ক্রীড়াবিদদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা মসৃন করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

চীনে চলমান হাংচৌ এশিয়ান গেমসে আসা ক্রীড়াবিদ ও দর্শকদের চমৎকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে। চালকবিহীন বাস থেকে শুরু করে শুল্ক ছাড়পত্রে আধুনিক প্রযুক্তি – এ সবই মুগ্ধ করেছে পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে আসা ক্রীড়াবিদ ও দর্শকদের।

 

চলতি বছরের জুলাই মাসে চেচিয়াং প্রদেশের শাওসিং শহরে সর্বপ্রথম চালকবিহীন বাস সেবা চালু হয়। পাঁচ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই বাস সেবা। 

বাসটি যেই আটটি পয়েন্টে থামে সেগুলোর মধ্যে এশিয়ান গেমসের বেসবল ও সফটবলের ভেন্যুও রয়েছে। কিউআর কোড স্ক্যান করে ভ্রমণ তথ্য পূরণের মাধ্যমে বিনামূল্যে এই বাসে চড়া যায়। 

চালকবিহীন বাসটি তার র‍্যুট ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শন করে এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও চালক ছাড়াই ড্রাইভিং চালিয়ে যেতে পারে। বাসটিতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ডিটেকশন প্রযুক্তি একে সঠিক পথে পরিচালনা করে যেনো যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। 

চালকবিহীন মিনিবাস প্রজেক্টটির পরিচালক শেন চেনলিন বলেন, বাসটি তার চারদিক দেখতে সক্ষম।

তিনি বলেন, “গাড়িটিতে ১২টি আলট্রাসোনিক রাডার এবং ১০টি ভিজ্যুয়াল ক্যামেরা আছে। এটি ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সব দেখতে পারে এবং এর কোনো ব্লাইন্ড স্পট নেই। ২০০ মিটারের মধ্যে রাস্তায় চলমান যে কোনও ঘটনা এটি শনাক্ত করতে পারে।” 

এছাড়াও বাসটিতে রয়েছে বুদ্ধিমান ইন্টারঅ্যাকশন সিস্টেম। এসি অন করতে বা সংগীত বাজাতে শুধু মুখে বললেই বাসটি তা বুঝতে পারে। সাথে সাথে এসি চালু হয়ে যায় বা সংগীত বেজে উঠে।

এশিয়ান গেমসের গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করেছে হাংচৌ কর্তৃপক্ষ, যা ট্রাফিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজে আসছে। লেনগুলো খালি থাকলে সাধারণ গাড়িও সেখানে চলতে পারে। ভ্রমণের সময় কমাতে হাংচৌয়ের পরিবহন কর্তৃপক্ষ এশিয়ান গেমসের গাড়িগুলোর গতি ও ভ্রমণ পথ সব সময় পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজিটাল ট্রাফিক সাইন পরিবর্তন করে দেয়। 

পাশাপাশি হাংচৌতে পা রাখামাত্র বিদেশি ক্রীড়াবিদদের শহরে আগমনকে নির্ঝঞ্জাট ও সহজ করতেও আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছে হাংচৌ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কাস্টমস ছাড়পত্রের প্রক্রিয়াকে বেগবান করেছে। ঝামেলা ছাড়াই আধুনিক গেট দিয়ে একে একে প্রবেশ করছেন বিদেশি ক্রীড়াবিদরা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদেশি ক্রীড়াবিদ ও দর্শকদের ঝামেলামুক্ত ও মসৃণ অভিজ্ঞতা দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।  

হাংচৌ সিয়াওশান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট কাস্টমসের এক কর্মী তু কাংচি বলেন, “কাস্টমসের ছাড়পত্র, প্রবেশ পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের জন্য শুধু একটি আধুনিক গেট বসানো হয়েছে। এই একটি গেটেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্পর্শ ছাড়াই তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাতের বহন করা লাগেজের পরীক্ষা এবং কাস্টমসের ছাড়পত্রের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।”

বিদেশি অতিথিদের ঝামেলাহীন ও মসৃণ ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা দিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিদেশ থেকে আগত ক্রীড়াবিদ ও দর্শকরা।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

চীনের তৈরি যাত্রীবাহী বিমানের অভাবনীয় সাফল্য

 

শেষ হলো চীনের তৈরি যাত্রীবাহী বিমানের এক প্রদর্শনী। উত্তর-পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত সিনচিয়াং অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয় মাসব্যাপী সি৯১৯ এবং এআরজে২১ বিমানের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে জেটগুলো অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে।

সিনচিয়াংয়ের জটিল প্রকৃতি, বৈচিত্র্যময় জলবায়ু, দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং আদর্শ বিমানবন্দরের কারণে জেটগুলো পরীক্ষার জন্য এ অঞ্চলটিকে বেছে নেওয়া হয়।

সি৯১৯ এবং এআরজে২১ বিমানের কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য গত ২৪ আগস্ট থেকে প্রদর্শনী ফ্লাইট পরিচালনা করে কমার্সিয়াল এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন অব চায়না (কোম্যাক)।

বিমানগুলো ফ্লাইটরুট ও সিনচিয়াংয়ের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পেরেছে উল্লেখ করে কোম্যাক পাইলট নিয়্য ফ্যই বলেন, “প্রদর্শনীতে সি৯১৯ বিমানটি নয়টি বিমানবন্দর এবং ৪১টি ফ্লাইট রুট কভার করে। এ সময় উরুমুছি বিমানবন্দরকে বেইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোট ফ্লাইটের সময় ছিল ৬৪ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট। প্রদর্শনী ফ্লাইট চলাকালীন সি৯১৯ বিমানটি বৃষ্টি, বরফ জমা ও ঝঞ্জাসহ বিভিন্ন বৈরি আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে গেছে।”

অন্যদিকে ম্যাসব্যাপী এ প্রদর্শনীতে এআরজে২১ বিমানটি উড্ডয়নের ১৮৪টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে এবং ফ্লাইটের মোট সময় ছিল ২৭৬ ঘন্টা।

কোম্যাকের শাংহাই এয়ারক্রাফ্ট কাস্টমার সার্ভিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক থুং ইয়ু বলেন, “সিনচিয়াংয়ে প্রদর্শনী ফ্লাইটগুলো চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছে। এটি সিনচিয়াংয়ে এআরজে২১ বিমান পরিচালনার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা আরও বাড়াবে এবং সিনচিয়াংয়ে এআরজে২১ বিমানের ফ্লাইট বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করবে।”

সি৯১৯ বিমান নির্মাণের প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। এরপর ২০১৭ সালে চীনের নিজের তৈরি বড় এ যাত্রীবাহী বিমানটি প্রথম সফল ফ্লাইট পরিচালনা করে। এখন পর্যন্ত, সি৯১৯ বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ১ হাজার ৬১টি অর্ডার পেয়েছে।

চীনের প্রথম আঞ্চলিক যাত্রীবাহী টার্বোফ্যান জেটলাইনার হলো এআরজে২১। বর্তমানে চীন ও চীনের বাইরে ১৩০টি শহরের ৩৭০টিরও বেশি বিমান রুটে শতাধিক এআরজে২১ জেটলাইনার ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

আন্তর্জাতিক শিল্প মেলায় প্রাধান্য পেলো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি

 

এ যেনো পরিবেশবান্ধব পণ্য দিয়ে সাজানো মেলা। সম্প্রতি চীনের শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৩তম চায়না ইন্টারন্যাশনাল শিল্প মেলায় এক হাজারেরও বেশি পরিবেশবান্ধব পণ্যের পসরা বসে। এবারের মেলায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও পণ্যকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

চায়না ইন্টারন্যাশনাল শিল্প মেলাকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বব্যাপী শিল্প উদ্ভাবন ও উন্নয়ন প্রদর্শনের প্লাটফর্ম। বিশ্বব্যাপী এখন চেষ্টা করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর। কেননা প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশও ঠিক রাখা জরুরি।  

আন্তর্জাতিক এই মেলার উদ্বোধনীর দিন শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সিন কুয়োপিন বলেন, চীন একটি আধুনিক শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।

উপমন্ত্রী বলেন, “শিল্প উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা খুবই জরুরি। শিল্প উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি আধুনিক শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে চীন।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের পাশাপাশি একটি চমৎকার ব্যবসার পরিবেশও তৈরি করতে বলেন সিন। 

এবারের মেলায় ৩০টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ২ হাজার ৮০০ প্রদর্শক অংশগ্রহণ করে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চীনের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদ্ভাবনী উন্নয়নে সহায়তা করবে এই মেলা। মেলাটিকে চীনের শিল্প খাতের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী ইভেন্টগুলোর একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

শাংহাইয়ের মেয়র কং চেং বলেন, উৎপাদন খাতের উন্নয়ন, বুদ্ধিমান ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উপর বিশেষ জোর দেবে শাংহাই। শিল্প উন্নয়নে সর্বশেষ সাফল্য প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী শিল্প ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে এই মেলা।

এবারের মেলায় স্টল স্থাপিত হয় ৩ লাখ বর্গমিটারজুড়ে। মেলায় মেশিনের মৌলিক উপকরণ থেকে শুরু করে ইন্টিগ্রেডেড সল্যুশন - সবই প্রদর্শন করা হয়। শুধুমাত্র বিশেষ রোবট প্রদর্শনের জন্যই ৫০ হাজার বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ ছিলো এবারের মেলায়। 

শাংহাইয়ে জাতীয় মানের তিনটি আধুনিক ফ্যাক্টরি, আটটি জাতীয় পর্যায়ের বুদ্ধিমান ফ্যাক্টরি এবং ১০০টি শহর পর্যায়ের আধুনিক ফ্যাক্টরি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ কোটি ইউয়ান বা তারও বেশি বাৎসরিক মুনাফা করা শাংহাইয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রোবট ডেনসিটি প্রতি ১০ হাজার মানুষে ২৬০টি রোবটে পৌঁছেছে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- শিয়াবুর রহমান

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী