‘প্রতিবেশী ধ্বংস মানে নিজের ধ্বংস’
2023-10-01 17:30:05

৬৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, জিন রাজ্য গুও রাজ্যে আক্রমণ করার জন্য সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল, কারণ গুও রাজ্যের সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছিল। কিন্তু জিন সেনাবাহিনীকে ইয়েলো নদীর উত্তর তীরে শিয়াইয়াং শহরে পৌঁছানোর জন্য ইউ রাজ্যের প্রাচীন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। এই কারণে, জিনের রাজা শিয়ান খুব চিন্তিত ছিলেন, কারণ ইউ এবং গুয়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। গুও রাজ্য আক্রমণ করলে, ইউ রাজ্য অনিবার্যভাবে উদ্ধারে আসবে এবং দুটি দেশ  ঘনিষ্ঠ সামরিক জোট গঠন করবে।

জিন রাজ্যের একজন কূটনীতিক শুন শি, ইউ, গুও এবং জিনের মধ্যে সম্পর্কের সার্বিক বিশ্লেষণের পরে, একটি সাহসী কৌশল প্রস্তাব করেছিলেন। সেটি হচ্ছে:  গুও রাজ্য আক্রমণ করার জন্য ইউ রাজ্যের পথ ব্যবহার করা। কারণ, জিন এবং ইউ-এর মধ্যে সম্পর্কও ভালো, গুও আক্রমণ করার জন্য ইউ থেকে প্রাচীন রাস্তাগুলো ধার করাও সম্ভব। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, ইউ রাজ্যের রাজা অর্থ ও স্বার্থের প্রতি লোভী ছিলেন এবং দুর্লভ ধন পছন্দ করতেন। অতএব, শুন শি-র মতে এই যুদ্ধে জয়ের চাবিকাঠি ছিল ইউর মনোভাব। শুন শি পরামর্শ দিলেন, ইউ-র প্রাচীন রাস্তাগুলো ব্যবহারের বিনিময়ে জিনের রাজা জিনে উত্পাদিত মূল্যবান ঘোড়া ও জেড ইউ-এর রাজাকে দেবেন।

জিনের রাজা দীর্ঘ সময়ের জন্য চিন্তা করেন এবং এই ধনগুলো দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। শুন শি জিনের রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: "যদি আমরা ইউ রাজ্য থেকে একটি রাস্তা ধার করি, আমরা ইউ রাজ্যে যে জিনিসগুলো রাখি তা আমাদের প্রাসাদের বাইরে গুদামে রাখার মতো হবে। ইউ রাজ্যটি কেবল অস্থায়ীভাবে আমাদের এই জিনিসগুলি রাখতে সাহায্য করবে। সময় এলে, ইউ রাজ্যটি ধ্বংস হয়ে যাবে, এই জিনিসগুলি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের হাতে ফিরে আসবে।" জিন রাজা বিশ্বাস করতেন যে, ইউ রাজ্যের রাজনীতিবিদ গং জি ছি ইউ অবশ্যই এই বিষয়ে বাধা দেবেন। শুন শি বিশ্লেষণ করেন: "প্রথমত, গং জি ছি একজন কাপুরুষ এবং রাজাকে নিজের প্রস্তাব শোনানোর সাহস নেই তার; দ্বিতীয়ত, তিনি ইউ রাজার সাথে বেড়ে উঠেছিলেন এবং ইউ রাজা তার খুব কাছের। তাই ইউ রাজার সামনে তার যথেষ্ট মর্যাদা ছিল না। তিনি উপদেশ দিলেও ইউ রাজা শুনবেন না।"

তাই জিনের রাজা শুন শিকে পাঠালেন। শুন শি ইউ রাজ্যে পৌঁছালেন এবং বললেন: "জি রাজ্য ইউ রাজ্য আক্রমণ করার সময় জিন রাজ্য প্রতিহত করতে সহায়তা করেছিল। এখন গুও রাজ্য কোনো আন্তর্জাতিক নৈতিকতা মেনে চলে না এবং জিন রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্ত আক্রমণ করে। অনুগ্রহ করে আমাদের আপনার দেশের একটি রাস্তা ব্যবহার করতে দিনি, যাতে আমরা গুও রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারি। আমরা যুদ্ধের ঘোড়া ও মূল্যবান পাথর দিয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।" জিন রাজা এতো উদার শুনে, ইউ রাজা আনন্দের সাথে জিনের উপহার গ্রহণ করেন এবং জিনের সাথে গুও রাজ্য আক্রমণ করতে ইচ্ছুক হন। একই বছরের গ্রীষ্মে, জিন এবং ইউ একসাথে গুও আক্রমণ করে এবং গুওর শিয়াইয়াং শহর দখল করে। গুও রাজ্য শিয়াইয়াং শহরকে হারালে, জিন রাজ্যের বিরুদ্ধে তার প্রতিরক্ষামূলক বাধা হারানোর সমতুল্য ছিল এবং দেশটি বিপদে পড়েছিল।

৬৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, জিন রাজ্য আবার ইউ রাজ্যের কাছে গুও রাজ্য আক্রমণ করার জন্য ইউ রাস্তা ব্যবহার করার অনুমতি চায়। ইউ রাজ্যের মন্ত্রী গং জি ছি তীব্র আপত্তি জানান। তিনি ইউ রাজাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন: "গুও রাজ্য ইউ রাজ্যের সীমানায় রয়েছে এবং ইউ রাজ্যের প্রতিবেশী। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান রয়েছে। একবার গুও রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেলে, ইউ রাজ্য অবশ্যই বিপড়ে পড়বে। ইউ রাজ্য এবং গুও রাজ্য যেন ঠোঁট ও দাঁতের মতো সম্পর্ক। যদি ঠোঁট অনুপস্থিত থাকে তবে দাঁতগুলো ঠান্ডায় উন্মোচিত হবে এবং অবশেষে তাদের কার্যকারিতা হারাবে।" কিন্তু ইউ রাজা একগুঁয়ে ছিলেন এবং জিন দূতের অনুরোধে রাজি হয় গেলেন। গং জি ছি ইউ রাজার কাজে অত্যন্ত হতাশ ছিলেন, তাই তিনি ইউ দেশ ছেড়ে চলে যান।

খ্রিস্টপূর্ব ৬৫৫ সালের শীতকালে জিন রাজ্য গুও রাজ্যকে ধ্বংস করে দেয়। জিন বাহিনী বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে এবং ইউ রাজ্য আক্রমণ করার সুযোগ নেয়। ইউ রাজা অদূরদর্শী ছিলেন এবং ভূ-রাজনীতি বুঝতেন না। তিনি বুঝতে পারেননি যে, দেশের স্থিতিশীল উন্নয়ন তার প্রতিবেশীদের সাথে সম্প্রীতি থেকে অবিচ্ছেদ্য। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সক্রিয়ভাবে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেননি। পরিবর্তে, তিনি জিনকে তার প্রতিবেশীদের আক্রমণ করতে সাহায্য করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেও জিন রাজার বন্দী হলেন। একজন বুদ্ধিমান রাজা সর্বদা তার প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করার এবং ভালো বিশ্বাস ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সর্বোত্তম চেষ্টা করবেন।

সমসাময়িক চীন তার কূটনৈতিক উন্নয়ন কাঠামো হিসাবে "বড় শক্তিগুলো চাবিকাঠি, প্রতিবেশী দেশগুলো অগ্রাধিকার, উন্নয়নশীল দেশগুলো ভিত্তি, এবং বহুপাক্ষিকতা গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ"-এর নীতি গ্রহণ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। "সম্পর্ক কাজে বা দূরে থাকার কারণে ভিন্ন হয় না, আমরা হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও প্রতিবেশী হতে পারি।" চীন তার প্রতিবেশীদের ভালো বন্ধু ও অংশীদার হতে চায়, প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বকে সুসংহত করতে চায়, পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতাকে গভীরতর করতে চায়, নিজের উন্নয়নের সুযোগ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শেয়ার করতে চায়। চীন দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচারের সঠিক ধারণাকে মেনে নিয়ে, সক্রিয়ভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে, নিজের ক্ষমতার মধ্যে সর্বোত্তম সহায়তা দিতে, এবং জয়-জয় নীতির ভিত্তিতে নতুন ধরণের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

 বিশ্বায়নের এ যুগ আন্তঃসংযোগের যুগ। কোনো দেশ এর বাইরে থাকতে পারে না। বন্ধ দরজার আড়ালে সমৃদ্ধির চেষ্টা অবৈজ্ঞানিক ও তা টেকসই নয়। নতুন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে হাত মেলানো সকল দেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।  (ইয়াং/আলিম/ছাই)