মিষ্টি তরমুজে মিষ্টি জীবনের স্বাদ
2023-09-30 10:30:36

বিস্তৃত কৃষিক্ষেতে ফল ও ফুলের সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে। ফল সংগ্রহ, পরিবহন ও গাড়িতে উঠানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন চীনের শেন ইয়াং সিন মিন শহরের লিয়াং শান জেলার পেই সি চিয়া চি গ্রামের অধিবাসীরা।

সিন মিন শহরের বৈশিষ্ট্যময় ফল হিসেবে লিয়াং শানের তরমুজ ‘সিয়াও লিয়াং শান তরমুজ হিসেবে’ খ্যাত। এ তরমুজ রসালো এবং এর বাইরের অংশ পাতলা বলে এটা খুব জনপ্রিয়। লিয়াং শান জেলা এ তরমুজ চাষের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের সুন্দর জীবন সৃষ্টি করেছে।

লিয়াং শান জেলা লিউ ও রাও ইয়াং নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত। এখানে পর্যাপ্ত পানি সম্পদ রয়েছে। দিন ও রাতে তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্যের কারণে এটা তরমুজ চাষের উপযোগী স্থান। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে লিয়াং শান জেলা ‘তরমুজের জন্মস্থল’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। চীনের ছিং রাজবংশের সময় থেকে গত দেড়শ’ বছর ধরে এখানে তরমুজ চাষ চলছে। এখানকার তরমুজ চীনের ভৌগোলিক দৃষ্টান্তমূলক কৃষিপণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

লিয়াং শান জেলার কৃষক সিয়াও ইয়ু হুয়া বলেন, “অতীতকালে তরমুজ চাষ করতে গেলে জলবায়ুর ওপর নির্ভর করতে হতো। গ্রিনহাউসে তরমুজ চাষ শুরুর পর থেকে এ খাত থেকে উপার্জন নিশ্চিত হয়েছে। গ্রিনহাউসের কারণে বায়ু, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি তরমুজের ক্ষতি পারে না। উপযোগী পানি এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে উত্পাদনের পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়।”

২০১৬ সালে সিয়াও ইয়ু হুয়া আগের ৫টি বাঁশের তৈরি গ্রিনহাউসের স্থলে ধাতু-নির্মিত গ্রিনহাউস নির্মাণ করেন, যার ফলে তার উপার্জন দ্বিগুণ হয়েছে।

বেই সি চিয়া চি গ্রামের অদূরে তা লিউ টুন গ্রামের অধিবাসী মেং চাও চিন ও শ্রমিকরা ধাতু দিয়ে গ্রিনহাউস তৈরি করছেন। মেং চাও চিন বলেন, “আমার ১০টারও বেশি গ্রিনহাউস আছে। বিভিন্ন গ্রিনহাউসে বিভিন্ন সময়ে চারা লাগানো হয়। এর ফলে নানা গ্রিনহাউসে তরমুজ পাকার সময়ও ভিন্ন হয়। বিভিন্ন সময় বাজারজাত করা গেলে উপার্জন বেশি হয়।”

লিয়াং শান জেলার ভাইস-গর্ভনর চু ওয়েই জানান, এ জেলায় চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০২১ সালের শরত্কালে গ্রিনহাউসের আওতাধীন জমি ২০৭ হেক্টর বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এ জেলায় কৃষিক্ষেতের আয়তন ১৮০০ হেক্টর, যার আওতায় রয়েছে ১৫টি গ্রাম।

চু ওয়েই বলেন, “আমাদের জেলায় প্রধানত তরমুজ ও খরমুজ চাষ করা হয়। এ কৃষির ফলে গ্রামে অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে। তরমুজের চারা উৎপাদন, কৃষিক্ষেত ব্যবস্থাপনা, ফল তোলা, বিক্রিসহ প্রতিটি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক জনশ্রম লাগে। এটা কৃষকদের উপার্জন বাড়ানোর পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।”

সিন মিন শহরের চিয়ান ছুন চাষ সমবায়ের তরমুজ-গ্রিনহাউসে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সবুজ পাতার মধ্যে লুকানো গোল বড় বড় তরমুজ উঁকি দিচ্ছে। সমবায়ের সদস্যরা সুশৃঙ্খলভাবে একটার পর একটা তরমুজ মাল পরিবহন গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। এ সব তরমুজ চীনের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে।

সমবায় পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াং চিয়ান ছুন বলেন, “গত ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমবায় ৪০ জনেরও বেশি গ্রামবাসীকে বার্ষিক ৩০-৪০ লাখ ইউয়ান উপার্জনে সাহায্য করেছে। বর্তমানে লিয়াং শান তরমুজের জন্য বিশেষ ভৌগোলিক চিহ্নের জন্য আবেদন করছে সমবায়।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিয়া শান জেলার সরকারের সমর্থনে জেলাটিতে কৃষক সমবায়, পারিবারিক ফার্মসহ নানা কৃষি গোষ্ঠি গড়ে তোলা হয়েছে। সে সব গোষ্ঠি সদস্যদেরকে একত্রে গ্রিনহাউস নির্মাণ, চারা উৎপাদন, চাষ ও বিক্রিসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে। তারা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে উন্নয়ন ও উপার্জন বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছেন।

চু ওয়েই বলেন, “বর্তমানে লিয়াং শান জেলায় রয়েছে ১৩৮টি পেশাদার কৃষক সমবায়। ১২০০টিও বেশি পরিবার সমবায়গুলোতে যোগ দিয়েছে, যা জেলার মোট পরিবারের ৩৪ শতাংশেরও বেশি। ২০২২ সালের শেষ দিক পর্যন্ত লিয়াং শান জেলার কৃষকদের বার্ষিক গড় আয় ছিল ২৫ হাজার ইউয়ান, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।”

বর্তমানে লিয়াং শান তরমুজ উত্তর-পূর্ব চীন থেকে বেইজিং, শাংহাই, থিয়ান চিন ও কুয়াং তোংসহ নানা নগরীর বাজারে উঠেছে। এটি শেন ইয়াং এমন কি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দৃষ্টান্তমূলক পণ্যে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত লিয়াং শান তরমুজ ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। (রুবি/রহমান)