পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে চিত্রকর
2023-09-29 19:59:34

সম্প্রতি ৫৬ বছর বয়সী পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওয়াং লিউ ইয়ু ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছেন। একটি সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত ওয়াং নিজের পছন্দের ছবি আঁকার শখ পূরণ করে চলেছেন।

ওয়াং লিউ ইয়ুন ছবি আঁকতে শুরু করেন ৫০ বছর বয়সের পর থেকে। অল্প কয়েক বছরে তার ছবি আঁকার মান অনেক উন্নত হয়েছে। তিনি ব্রাশ দিয়ে মনের দৃশ্য চিত্রে পরিণত করেন। তার বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বেইজিংয়ের দ্বিতীয় রিং রোডে অবস্থিত একটি অফিস ভবনের ১৫ তলায় নারীদের একটি বিশ্রামাগার আছে। খালি চোখে দেখলে সেটা খুব সাধারণ। তবে মনোযোগ দিয়ে দেখলে এ বিশ্রামাগারের একটি টুল রুমের পকেট ‘আর্ট স্টুডিও’র দৃশ্য যে কাউকে অবাক করে। মাত্র একজন থাকা যায় এমন একটি ছোট জায়গায় রাখা হয়েছে কয়েকটি রঙিন ছবি। এটিই ওয়াং লিউ ইয়ু’র আর্ট স্টুডিও। পরিচ্ছন্নতা কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি এখানে এসে ছবি অঙ্কনে মনোনিবেশ করেন। ওয়াং লিউ ইয়ুন সবসময় তার অফিসের কাজ শুরু হওয়ার আগে এক ঘন্টার মতো ছবি আঁকেন। তারপর পরিচ্ছন্নতা কাজ শেষ করার পর আবার ছবি আঁকতে বসেন। রাত ১০টা পর্যন্ত ছবি আঁকেন তিনি।

সহকর্মীদের চোখে ওয়াং লিউ ইয়ুন একজন শিল্পীই। তিনি তেমন উঁচু নয় এবং দেখতে অনেক শান্ত। মাথার পিছনে চুল গুচ্ছ করে বাঁধেন এবং কানের নিচে চুল খুব ছোট করে রাখেন। বেইজিংয়ে তার পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি ছবি আঁকা তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

চীনের হু নান প্রদেশের সিন হুয়া শহরের এক গ্রামে জন্ম ওয়াং লিউ ইয়ুনের। মধ্যবয়সে তিনি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। তবে সেসব চ্যালেঞ্জ তার মনকে দৃঢ় ও উন্মুক্ত করেছে।

ওয়াং লিউ ইয়ুন বলেন, “আমি সবকিছু খোলা মনে দেখি। উদাহরণ দিয়ে বলি - সবকিছু হারালেও কোনও সমস্যা বোধ করি না। আমার মনে হয়, প্রবাহমান পানির মতো সে সব আবার ফিরে আসবে।”

বেশ কয়েক বছরের কঠিন পরিস্থিতির কারণে ২০১৭ সালে ওয়াং লিউ ইয়ুনের হৃদরোগ আরও গুরুতর হয়। তিনি আর ভারি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারবেন না। ভবিষ্যত নিয়ে তাই তার চিন্তা ছিল। সেকারণে ফু চিয়ান প্রদেশে বিনাপয়সায় ছবি আঁকার সুযোগের খবর শুনে তিনি ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নেন।

একা ফু চিয়ান প্রদেশে গিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করেন ওয়াং লিউ ইয়ুন, যার কারণে তার নিজের জগতের দরজা খুলে যায়। বলিষ্ঠতা ও প্রতিভার জোরে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ইনডোর ছবি থেকে আউটডোরে ছবি আঁকতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ওয়াং লিউ ইয়ু সারা দিন প্রকৃতির মধ্যে ছবি আঁকেন। ছবি আঁকতে আঁকতে তিনি দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট ভুলে যান। কোনদিন পছন্দের দৃশ্য আঁকা শেষ করতে না পারলে সেটা যাতে ধরে রাখা যায়, সেজন্য তাকে একটি মোবাইল কিনে দিতে মেয়েকে অনুরোধ জানান ওয়াং লিউ ইয়ুন। এ মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে বাসায় ফিরে গিয়ে ছবির বাকি অংশ আঁকা শেষ করেন তিনি। 

ধীরে ধীরে ওয়াং লিউ ইয়ুনের ছবি আগের চেয়ে ভালো হতে থাকে। তিনি চিত্রকর জগতে খানিকটা খ্যাতি অর্জন করেছেন। বেশ কয়েকজন নেটিজেন উইচেকের মাধ্যমে তার ছবি কেনেন, যার কারণে তার জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে। ২০১৮ সালে ছবি আঁকার মান আরও উন্নত করতে তিনি শেন জেন শহরের তৈলচিত্রের গ্রামে যান।



ওয়াং লিউ ইয়ুনের আঁকা ছবিতে হাঁস-মুরগির খেলা, বুনো ফুল ফোটা এবং ঢেউয়ের খেলা দেখা যায়। এসব দৃশ্য সরলতা ও সতেজতা প্রকাশ করে।

ইন্টারনেটের কল্যাণে অধিকতর সংখ্যক মানুষ ওয়াং লিউ ইয়ুন সম্পর্কে জানতে পারছেন। কিছু কিছু লোক তার ছবি পছন্দ করেন এবং তার কাছ থেকে ছবি কেনেন। তাতে ওয়াং লিউ ইয়ুন খুব আনন্দিত। তবে ছবি আঁকা ছাড়া তার আরেকটি শখ আছে। তিনি লিখতে চান। ওয়াং লিউ ইয়ুন বলেন, “আমি বরাবরই একজন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখি।”

মাইক্রোব্লগের আকাউন্টে ওয়াং লিউ ইয়ুন এভাবে লিখেছেন, “বাতাস বারেবারে প্রবাহিত হয়ে আমার আত্মাকে খোদাই করে, এবং আমি বারেবারে আত্মাকে মেরামত করে আপনাকে আলোকিত করার জন্য প্রদীপ হওয়ার ভান করি।" ভবিষ্যতমুখী ওয়াং লিউ ইয়ুন খুব আশাবাদী মানুষ।

তার লেখা কবিতার কয়েকটি লাইনে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। “যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি জীবনে প্রেম ও আধ্যাত্মিকতার খোরাক পান, ততক্ষণ তিনি দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারেন; স্বপ্ন দেখা এবং অবিরাম সাধনার মাধ্যমে, মানুষ যতই সাধারণ হোক না কেন, তারা সাধারণের মধ্যে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করতে পারেন।”

(রুবি/রহমান)