আকাশ ছুঁতে চাই ৩৭
2023-09-28 19:15:27


                   

             

১. এশিয়ান গেমসের জয়ের সূচনা নারীর হাতে

২. নানী ও নাতনির হোম স্টে

৩. আমার শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হবে: ফু ইয়াওহুই

৪. মধ্য শরৎ উৎসব

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

এশিয়ান গেমসের জয়ের সূচনা নারীর হাতে

 

১৯তম এশিয়ান গেমসে চীনের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে নারীদের হাত ধরে।

 

 এশিয়ান গেমসের প্রথম স্বর্ণ চীনের ঘরে তুলেছেন নারীরা। চৌ চিয়াছি এবং ছিউ সিউপিং নারীদের লাইটওয়েট ডবল স্কাল রোয়িং ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেন। হালকা ওজনের নৌকায় দ্বৈত চালনা করে  ৭ মিনিট ৬.৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সহজেই তারা উজবেকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার রোয়ারদের পিছনে ফেলে প্রথম সোনাটি জেতেন।

এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়ান গেমসের প্রথম স্বর্ণ চীনের ঘরে উঠলো।

নারীদের দল ১০ মিটার এয়ার রাইফেলেও স্বর্ণ জয় করেছে।

মডার্ন পেনটাথলোন ইভেন্টে একুশ বছর বয়সী নারী চাং মিংইয়ু স্বর্ণ জয় করে নিজের স্থান ধরে রেখেছেন এবং প্যারিস অলিম্পিকের জন্যও ভরসা জাগিয়েছেন।

এদিকে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রথম পদকটিও এসেছে নারীদের হাত ধরেই।

এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সোমবার চীনের পিংফেং ক্যাম্পাস ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জেতে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।

এশিয়ান গেমসের এবারের আসরে বাংলাদেশের এটিই প্রথম পদক জয়।

 

 

নানী ও নাতনির হোম স্টে

 

চীনে এখন চলছে গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারা। এই ধারায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন গ্রামীণ উদ্যোগী নারীরা। আজ শুনবো চীনের ইয়ুননান প্রদেশের নাশি জাতিগোষ্ঠীর নারী হ্য সুইং এবং তার নাতনির গল্প। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন হোম স্টে যা পর্যটন শিল্পেও বড় অবদান রাখছে।

হ্য সুইং এর বয়স এখন ৯১ বছর। তিনি এখনও বেশ শক্তসমর্থ। তিনি সাফল্যের সঙ্গে একটি হোমস্টে চালাচ্ছেন। হ্য সুইং বাস করেন ইয়ুননান প্রদেশের এক পাহাড়ি এলাকায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উঁচুতে পর্বত চূড়ায়, ছিবিয়ে গ্রামে ।

চার বছর আগে হ্য সুইং তার বাড়িতে একটি হোম স্টে বা ছোট গেস্ট হাউজ খোলেন। এই কাজে তাকে সাহায্য করেন নাতনি হ্য ছিংমেই। এরপর থেকে তার বাড়িতে অতিথির অভাব হয়নি কখনও। দেশ বিদেশ থেকে এসেছেন পর্যটকরা। যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন তিনি।

হ্য সুইং নাশি জাতিগোষ্ঠীর নারী। অন্যদিকে তার প্রয়াত স্বামী ছিলেন তিব্বতি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। হ্য সুইংয়ের পরিবারে মোট আটটি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য আছেন। নাশি, লিসু ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন সুখী পরিবার।

ইয়ুননানের একটি পর্যটন শহর শাংরিলা। এখানে তিব্বতি জাতির অনেক মানুষ বাস করেন। এই শহরের কাছে দ্যচেন তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের ওয়েসি লিসু অটোনোমাস কাউন্টির থাছাং টাউনে এই ছিবিয়ে গ্রাম।

এখানে পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সহাবস্থান। এখানে ১০২টি হোম স্টে গড়ে উঠেছে নারীদের উদ্যোগে । গ্রামে আগত পর্যটকরা  যখন হ্য সুইংয়ের বাড়িতে আসেন তিনি গান গেয়ে তাদের স্বাগত জানান। তিনি গান গাইতে পছন্দ করেন। নব্বই বছরেও তার গানের কণ্ঠ চমৎকার। তিনি নাশি লোকজ সংগীত থেকে শুরু করে তিব্বতি বৌদ্ধ সংগীত-সবই জানেন।

তিনি স্মৃতিচারণ করেন আগের দারিদ্র্যপীড়িত জীবনের। সেখান থেকে কিভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে দারিদ্র্য দূর হয়ে সুদিন এসেছে সেকথা বলতে গিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হন তিনি।

তিনি কমিউনিস্ট ভাবধারার বিপ্লবী গান গাইতেও ভালোবাসেন। কয়েকদিন আগে বেইজিং থেকে কয়েকজন পর্যটক আসেন তিনি তাদের বেইজিংয়ে প্রচলিত বিপ্লবী গান শোনান।

হ্য সুইইংয়ের হোম স্টের নাম ‘গ্র্যান্ডমা’স হাউস’। কারণ এটা মূলত হ্য ছিংমেই এবং অন্য নাতি নাতনিরা মিলে তৈরি করেছে। হ্য ছিংমেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য এবং থাংচাং টাউনের সাংগঠনিক সম্পাদক।

২০১৫ সালে নানী ও নাতনিরা মিলে হোম স্টে গড়ে তোলেন। ইয়ুননানের সাংস্কৃতিক পর্যটনে ছিবিয়ে গ্রাম বেশ বড় ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ পর্যটনে এই গ্রামটিকে সফল হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

 

 

 

আমার শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হবে: ফু ইয়াওহুই

 

শিক্ষকতা পেশায় নারীর বিচরণ বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু শিক্ষায় নারী শিক্ষকরাই বেশি সফল।

 তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশ কঠিন। কারণবিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য অনেক বেশি ধৈর্য মমতা ও সহানুভূতির প্রয়োজন হয়। এই কঠিন কাজটিতে সফল হয়েছেন হাইনান প্রদেশের নারী ফু ইয়াওহুই । চলুন শুনি তার গল্প।

 

 

ফু ইয়াওহুই একজন আত্মবিশ্বাসী নারী। তিনি একজন শিক্ষিকা। কিন্তু অন্য দশজন শিক্ষকের সঙ্গে তার কিছুটা পার্থক্য আছে। তিনি একজন স্পেশাল টিচার।

 

 তিনি স্পেশাল এডুকেশন দানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের রাজধানী হাইখোওর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন ফু। এই স্কুলটি হলো স্পেশাল এডুকেশন স্কুল। এটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল। ২০০৪ সাল থেকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের কাজ করছেন ফু। সাধারণ স্কুলে শিক্ষকতার তুলনায় স্পেশাল স্কুলের শিক্ষকতা শতগুণে কঠিন।

 প্রতিটি শিক্ষার্থীর দিকে এখানে আলাদাভাবে মনোযোগ দিতে হয়। শুধু লেখাপড়াই নয় তাদের এমনকি কিভাবে খেতে হবে, চলতে হবে, কথা বলতে হবে এ সবকিছুই শেখাতে হয়। মায়ের মমতা ও ধৈর্য নিয়ে ফু তার শিক্ষার্থীদের যত্ন নেন। টিফিন টাইমে তাদের খাইয়ে দেয়া কিংবা কারও চুল বেঁধে দেয়ার মতো কাজও তাকে করতে হয় ধৈর্য সহকারে।

 

 বিশেষ সমস্যা মোকাবেলায় তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করেন, তাদের সহযোগিতা করেন।

ফু চান তার শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনির্ভরশীল হোক। এই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে চলেছেন।

 

মধ্য শরৎ উৎসব

চীনে এখন চলছে মধ্য শরৎ উৎসবের আমেজ। চীনা চান্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অষ্টম চান্দ্র মাসের ১৫তম দিবসে পূর্ণিমায়  এ উৎসব পালন করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর এ বছরের মধ্য শরৎ উৎসব। চীনা ভাষায় একে বলা হয় চোং ছিউ চিয়ে। ১ অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবস। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে এ বছর। এই দুই উৎসবকে ঘিরে এখন চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে ঘরে ঘরে সাজ সাজ রব।

মধ্য শরৎ উৎসবের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলো মুন কেক খাওয়া। পদ্মফুলের বীজের পেস্ট এবং অন্যান্য পুর দিয়ে মুনকেক তৈরি করেন নারীরা। গৃহসজ্জা করা হয় লণ্ঠন দিয়ে। আর হানফু পরা এবং সাজসজ্জার বিষয়টি তো আছেই।  মধ্য শরৎ উৎসবের আরেকটি অনুষঙ্গ হলো খরগোশের গল্প।

এই খরগোশের গল্প অনুসরণে এ সময় শিশুদের পোশাক ও খেলনায় খরগোশের প্রতিকৃতি দেখা যায়। নারীদের অলংকারেও চাঁদ ও খরগোশ প্রতীক লক্ষ্য করা যায়।

 

উৎসবের জন্য মুনকেক তৈরি, ঘরসাজানো,  আর কেনাকাটা চলছে এখন ঘরে ঘরে। অনেকে দোকান থেকে সুসজ্জিত মুনকেক কিনে উপহার দিচ্ছেন আত্মীয় পরিজনদের। আবার মুনকেক তৈরির কারখানায় চাকরি করেও জীবিকার সংস্থান হচ্ছে অনেক নারীর।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। মধ্য শরৎ উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া ও আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল