সেপ্টেম্বর ২৮: নবম নিশান বিশ্ব সভ্যতা ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল (বুধবার) শানতোং প্রদেশের ছুফুতে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা “গোটা মানবজাতির জন্য অভিন্ন মূল্যবোধ এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ - যৌথভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সভ্যতার বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষা জোরদার” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গভীর আলোচনা ও মতবিনিময় করেন।
তারা চীন-উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতার উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং গোটা মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধের প্রসারকে উচ্চ পর্যায়ের স্বীকৃতি দেন। তারা বলেন, চীনের ঐতিহ্যগত চিন্তাধারা ও সংস্কৃতিতে বৈদেশিক বিনিময় ও শাসনের সমৃদ্ধ জ্ঞান রয়েছে। এ সম্পর্কিত উদ্যোগ তথাকথিত ‘সর্বজনীন মূল্যবোধের’ সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এবং একের ভাগ্যের সাথে অন্যদের জড়িত থাকার সাধনাকে মূর্ত করে। এটা বিভিন্ন সভ্যতার সহনশীলতা ও সহাবস্থান এবং পারস্পরিক বিনিময় ও শিক্ষা জোরদার করার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা বাড়িয়েছে।
কিরগিজস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এদিল বাইসালভ বলেন, বিশ্ব বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। চীন-উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতার উদ্যোগ সময়োপযোগী, যা বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রচেষ্টার প্রসার এবং সার্বজনীন সমৃদ্ধি ও অভিন্ন নিরাপত্তা অর্জনের পথ নির্দেশ করে।
তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও আধুনিকীকরণে চীন ‘বিশ্ববিখ্যাত’ সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। কিরগিজস্তান ও চীন আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং চীনের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং আরও পারস্পরিক কল্যাণের সহযোগিতার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে কিরগিস্তান।
এবারের ফোরাম আয়োজন করা হয়েছে যে ছুফু নিশানে, যেটি কনফুসিয়াসের জন্মস্থান। অতিথিরা মনে করেন, কনফুসিয়াস-সূচিত কনফুসিয়াসবাদ এবং তার ভিত্তিতে বিকশিত কনফুসিয়াস মতবাদ কেবল চীনা সভ্যতার উপর গভীর প্রভাব ফেলেনি, বরং বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতির জন্য অনুপ্রেরণা ও রেফারেন্সও প্রদান করেছে।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা আবেওয়ার্দেনা এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেন, বহুসংস্কৃতিবাদ আজকের সমাজে সহাবস্থান করে। কনফুসিয়াস মতবাদকে প্রতিনিধিত্বকারী ঐতিহ্যবাহী চীনা চিন্তাধারা সম্প্রীতি ও পরোপকারিতার মূল্যবোধের উপর জোর দেয়, যা বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতাকে উন্নীত করতে সাহায্য করে। এটি সামাজিক শাসনের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখ এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সংলাপ ও বিনিময় চালানো এবং বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া গভীর করা হলো ঐতিহ্যগত চীনা চিন্তাধারার গভীর জ্ঞান।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত বলেন, বিশ্বে বহুমেরুতার ধারা এখন অপ্রতিরোধ্য। আধিপত্যবাদ ও একতরফা ক্রিয়াকলাপ বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর হুমকির সৃষ্টি করে। শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের বিষয়ে সকল দেশের ঐক্যমতে পৌঁছানো এবং অভিন্ন সম্প্রদায়ের বোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি শ্যাস বলেন, “আধিপত্যবাদ একটি সেকেলে ও বিপজ্জনক চিন্তাভাবনা।” নতুন বহুমেরুর বিশ্বে বিভিন্ন দেশ একে অপরের উপর আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরশীল এবং দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। ধারণার আদান-প্রদানকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং প্রাচীনদের জ্ঞান থেকে শিখা উচিত।
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের ডিন চেন লাই বলেন, মানবজাতির জন্য অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলতে সকল দেশের মানুষের ঐক্যমত্য এবং তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। গোটা মানবজাতির সাধারণ মূল্যবোধের প্রস্তাব মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ নির্মাণকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন যোগায়।
ছেন লাই আরও বলেন, “গোটা মানবজাতির সাধারণ মূল্যবোধগুলো ধীরে ধীরে কোনও কোনও দেশের বৈদেশিক নীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক জননীতির ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে। তাদের আবেদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার মূল্যবোধ ক্রমাগত জড়ো হচ্ছে।”
লিলি/রহমান