এবারের পর্বে রয়েছে
১. চীনের নজরকাড়া ফুলের বাজার
২. ফলন বাড়াচ্ছে নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি
৩. চীনে রপ্তানি হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের দুধ
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
চীনের নজরকাড়া ফুলের বাজার
যেকোন উৎসব আয়োজনে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠে ফুল। বিশেষ করে চীন জাতির মানুষের কাছে ফুলের অন্যরকম অর্থ রয়েছে। এ দেশে যেকোন আয়োজন ঘিরে প্রচুর ফুল প্রয়োজন হয়। এছাড়া উপহার হিসেবেও তাদের কাছে বিশেষ পছন্দ ফুল। চীনে উৎপাদিত ফুল এখন বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি ফুলের বাজার কুনমিং ফ্লাওয়ার অকশন সেন্টার। ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে অবস্থিত এই বাজারে সম্প্রতি ফুল বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুন।
যেকোন দিবসেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে এই ফুলের বাজার। চীনে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় ইউননান প্রদেশে।
এই প্রদেশেই অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম ফুল নিলামের পাইকারি বাজার কুনমিং ফ্লাওয়ার অকশন সেন্টার।
এই প্রদেশে ফুল উদপাদন ও বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে ।
এবার কুনমিং ফ্লাওয়ার অকশন সেন্টারে মোট লেনদেন হয়েছে ৫কোটি ৭০ লক্ষ ইউয়ানেরও বেশি। গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয়েছে ৯০ লাখ ইউয়ান এর মত। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।
একদিনে এই বাজারে প্রায় সোয়া কোটি ইউয়ানের ফুল বিক্রি হয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ ফুল বিক্রির রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
এবারের ফুল বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ফুলের মান। একই জাতের উন্নত মানের ফুলের দাম সাধারণ ফুলের তুলনায় ১০ গুন বেশি।
ফুল মার্কেটের একজন নিলামকারী নারী লি ছিয়ান জানিয়েছেন,
“এ এবং বি ক্যাটাগরির ছোট ফুলের দাম প্রতি কেজি ২০ ইউয়ান থেকে ৩৫ ইউয়ান। সে হিসেবে একটি সূর্যমুখী ফুলের দাম পড়ছে দেড় থেকে ২ ইউয়ানের মতো। চাহিদা বেশি থাকায় এগুলো ফুলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে।“
ফুলের বিক্রি ভালো হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত চীনের ফুল চাষীরা। তারা প্রত্যাশা করছেন, সামনের উৎসবগুলোতে ফুলের চাহিদা আরো বাড়বে।
শুধু চীনে নয় বিশ্বজুড়েই সমাদৃত এই দেশটির উৎপাদিত নানান রঙের ফুল।
প্রতিবেদন: এইচএম সৌরভ
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
ফলন বাড়াচ্ছে নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি
নিজ দেশের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে চীন। কম পরিমাণ জমিতে অধিক ফলন পেতে জমিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে নিত্য-নতুন পদ্ধতি। এর ফলে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা অন্যদিকে একই সময়ে চাষাবাদ করা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ফসল। সম্প্রতি চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় প্রয়োগ করা হয়েছে ইন্টারক্রপিং কালটিভেশন সিস্টেম।
প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের কৃষি ক্ষেত্র। দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক কৃষি পার্ক। সম্প্রতি পার্কটিতে সংযোজন করা হয়েছে ফসল কাটার নতুন পদ্ধতি।
ইনার মঙ্গোলিয়ার পায়ান্নুর সিটির উলানসুহাই ফ্রেশ লেকের পাশেই এই এগ্রিকালচার পার্কের অবস্থান, যেখানে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
এই কৃষিক্ষেত্রে এখন একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা। এই যেমন বসন্তের গোলমরিচ বা গমের সঙ্গে রোপন করা হচ্ছে সূর্যমুখী বীজ। ।
ইন্টারক্রপিং হচ্ছে এমন এক চাষাবাদ পদ্ধতি যেখানে একই সময়ে দুই বা তার বেশি ফসলের উৎপাদন করা যায়। কৃষিক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগের মূল লক্ষ্য হলো কম সময়ে অধিক ফসল ঘরে তোলা।
পায়ান্নুর সিটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পাই এনচি নতুন চাষাবাদ পদ্ধতির উপকারি দিক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই এলাকায় অন্য জমিতেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
পাই এনচি, পায়ান্নুর সিটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
"এক মু পরিমাণ জমি অর্থাৎ শুন্য দশমিক শুন্য ছয় হেক্টর জমিতে শুধু গম উৎপাদন করে একজন কৃষক আয় করেন ২০০ ইউয়ান। নতুন ইন্টারক্রপিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গমের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে পারবেন কৃষকরা। এতে আগের চেয়ে তাদের লাভ কয়েকগুণ বাড়বে।"
পেইতো নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমও ব্যবহার করছে এই এগ্রিকালচারাল পার্ক, যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ প্রক্রিয়ার কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে এখানে। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি।
নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় অন্য প্রদেশেও এর প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
চীনে রপ্তানি হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের দুধ
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুধ উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ নিউজিল্যান্ড। বিশ্বজুড়েই নানা দুগ্ধজাতীয় খাবার রপ্তানি করে থাকে দেশটি। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের গুড়ো দুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য দেশের মতো চীনেও রপ্তানি হচ্ছে এই গুড়ো দুধ। ফলে চীন ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কও হচ্ছে আরও উন্নত।
গরুর দুধ রপ্তানি করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের গুড়ো দুধ মানেই অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। বিশ্বের ২১৭ মিলিয়ন দুগ্ধবতী গাভীর ৬ মিলিয়নের মালিক নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুধ উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ নিউজিল্যান্ড এখন চীনের আমদানিকৃত দুগ্ধজাত পণ্যের বৃহত্তম উৎস। এই দেশটি থেকে বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার আমদানীতে আরও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করেছে চীন।
নিউজিল্যান্ডের ষাট মিলিয়ন দুগ্ধজাত গাভী থেকে উৎপাদিত দুধের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর খাবার গুড়া দুধ থেকে শুরু করে পনির, এমনকি হুইপড ক্রিম পর্যন্তও রপ্তানি করা হয় চীনে।
বিস্তৃত জায়গাজুড়ে নিউজিল্যান্ডের গ্রিন ভ্যালি ডেইরি ফার্ম। এই খামারে পারিবারিক মালিকানায় রয়েছে ৩ হাজার ৫০০টি গাভী। আর এই খামার থেকে উৎপাদিত দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করা হয় চীনের বিভিন্ন বাজারে।
এই খামারটি বিশ্বের সর্বোচ্চ উন্নতমানের গরুর খামারের একটি। এখানকার চারণভূমির রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। এছাড়া এই খামার থেকে খাঁটি দুধ প্রতিদিনের ফ্লাইটে রপ্তানি করা হয় চীন।
নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম দুগ্ধ রপ্তানিকারক কোম্পানি ফন্টেরা।এটি ৯ হাজার কৃষদের একটি সমবায়। এখান থেকে আয় হয় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দিন যত যাচ্ছে চীনে শিশুর জন্য তৈরি গুড়ো দুধের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গুঁড়ো দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে, যার বেশিরভাগই আমদানী করা হচ্ছে নিউজিল্যান্ড থেকে।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স চীন সফর করেন। থিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত সামার ডাভোস ফোরামে যোগ দেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী