‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩৭
2023-09-26 18:22:02

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে    

১। সিদান কালচারাল স্কোয়ার

২। চীনের পুয়ারের পুরাতন চা-বন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায়

৩। ঝর্ণাপ্রেমীদের পছন্দের গন্তব্য চীনের বাওথু স্প্রিং

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩৭তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১। সিদান কালচারাল স্কোয়ার

বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে শপিং এবং বেড়ানো দুটোর জন্য বেশ চমৎকার একটা স্থান সিদান কালচারাল স্কোয়ার। সিদান হলো বেইজিংয়ের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। এটি সিচাং জেলায় অবস্থিত। এখানে বড় বড় ব্র্যান্ড শপ, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পুরো এলাকার মাঝখানে রয়েছে বড় খোলা চত্বর।

বর্তমানে সিচাং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখানে একটি মিনি ফরেস্ট পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই ফরেস্ট পার্কে ঢোকার মুখেই রয়েছে চীনা স্টাইলের একটি বড় তোরণ। পার্কে সবুজ গাছ রঙিন ফুলের সমারোহ। এই ফরেস্ট পার্ক তিনটি অংশে বিভক্ত। পাইলোও স্কোয়ার, ট্রি জোন এবং ফ্লাওয়ার জোন।

এখানে নানা রকম উদ্ভিদ রয়েছে। শরৎ-হেমন্তকালে এই গাছগুলো লাল হলুদ নানা রকম রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। বিকেলে এখানকার খোলা চত্বরে রোলার স্কেট ও নানা রকম খেলায় মেতে ওঠে তরুণ তরুণীরা। এখানে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।সিদান কালচারাল স্কোয়ারের আশপাশে বেইজিং কনসার্ট হল রয়েছে যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে প্রায়ই।

সিদান শপিং মলগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো এদের অনেকগুলোই মাটির নিচে বা আন্ডার গ্রাউন্ডে। মাটির নিচে আলো ঝলমল বিশাল শপিংমলে দেশি-বিদেশি নামকরা সব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি সুপার মার্কেট তো আছেই সেইসঙ্গে একটু কমদামের দোকানও রয়েছে। সিদানে রয়েছে চীনের লোকজ শিল্পসামগ্রী বিক্রির বিশেষ দোকান, চায়ের দোকান এবং ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন বিক্রির দোকান। চায়ের দোকানে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন চা পাতা পাওয়া যায়।

 বিভিন্ন রকম ফুলের চা, ভেষজ চা, ইয়ুননান চা, জেসমিন টি, লোংচিং চা ইত্যাদি পাওয়া যায় এসব চায়ের দোকানে। সিদান কালচারাল স্কোয়ারের কাছেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট পাড়া। এখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী নানা রকম খাদ্য থেকে শুরু করে ফাস্টফুড পর্যন্ত সবই পাওয়া যায়। দিনের বেলার মতো রাতেও জমজমাট হয়ে ওঠে সিদান। চীনা রীতির তোরণটি যেমন আলো ঝলমলে তেমনি এর আশপাশের স্থানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ভবনগুলোও দৃষ্টিনন্দন। রাতে এই ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়।

এখানে নাইট মার্কেট এবং ওপেন রেস্টুরেন্টও রয়েছে। সন্ধ্যার পর বেইজিংবাসী এবং পর্যটকরা অনেকেই সিদানে আসেন একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম   

 

২। চীনের পুয়ারের পুরাতন চা-বন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায়

পুয়ারে চিংমাই পর্বতের পুরানো চা-বন।দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের অবস্থিত বিখ্যাত এই চা বনটি।সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে এই বন। 

 

 

সৌদি আরবের রিয়াদে ইউনেস্কোর বর্ধিত ৪৫তম অধিবেশনে, বিশ্বসংস্থাটির ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ঘোষিত তালিকায় উঠে এসেছে এই বনের নাম। এটি চীনের ৫৭তম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের গৌরব লাভ করেছে।

পুয়ারে এ খবর পৌঁছলে নেচে-গেয়ে আনন্দ উদযাপন করেন  সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। ইউননানের লাঙ্কাং লাহু স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির চিংমাই পর্বত এলাকা চায়ের অন্যতম আদি স্থান এবং বিশ্ব চা সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে এই পর্বত।

পাঁচটি বৃহৎ আকারের সুসংরক্ষিত পুরানো চা-বন, তাদের মধ্যে নয়টি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম রয়েছে যেখানকার বাসিন্দারা এখানকার চা-সংস্কৃতিকে রক্ষা করে চলেছে।

 

 

১০ম শতাব্দির দিকে পুলং জাতিগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষরা চিংমাই পর্বতে বসবাস শুরু করে, যেখানে তারা বন্য চা গাছ আবিষ্কার করে এবং এর ব্যবহার করতে শেখে। আর প্রতিবছরই দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসেন অনেক পর্যটক।

প্রতিবেদন- মাহমুদ হাশিম

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। ঝর্ণাপ্রেমীদের পছন্দের গন্তব্য চীনের বাওথু স্প্রিং

"এক হাজার ঝরনার শহর" নামে পরিচিত শানতোং প্রদেশের রাজধানী চিনান। এই শহরে রয়েছে  ১২শ’র বেশি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। এর মধ্যে বাওথু স্প্রিং শহরের ‘নেম কার্ড’ বা পরিচিতি হিসেবে গণ্য। এটি চিনানের তিনটি প্রধান ঝর্ণার একটি। অন্য দুইটি মাউন্ট ছিয়ানফো ও তামিং লেক। বাওথু স্প্রিংকে বিশ্বের প্রথম স্প্রিংও বলা হয়।

 

বাওতু স্প্রিং পার্কটি কোয়ানচেং স্কোয়ারের পশ্চিমে এবং উলংথান পার্কের দক্ষিণে অবস্থিত।  এর উত্তর গেটটি বাণিজ্যিক রোড "লংছুয়ান রোড"  জুড়ে বিস্তৃত। এই পার্ককে চিহ্নিত করা হয় স্প্রিংস দিয়ে। বাওথু বসন্ত হল জিনানের প্রতীক, বসন্ত শহর, যা জিনানের তিনটি প্রধান আকর্ষণের মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত এবং মাউন্ট কিয়ানফো এবং ডামিং লেক।

বাওতু স্প্রিং গত ২০ বছর ধরে ক্রমাগত প্রবাহিত হচ্ছে যা একটি রেকর্ড। সম্প্রতি এ তথ্য ঘোষণা করেছে চিনানের নগর ও গ্রামীণ জল বিষয়ক ব্যুরো। চিনানের নগর ও গ্রামীণ জল বিষয়ক ব্যুরোর গবেষক তিং তাইয়াও-এর মতে, চলতি বছরের আগস্টের শুরু থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বাওথু স্প্রিং-এর জলস্তর ২৯ মিটারের উপরে উঠেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, স্থানীয় সরকার জল পুনঃপূরণের মাধ্যমে ঝর্ণাটিকে রক্ষা করার জন্য এবং ঝর্ণার জল সরবরাহ এলাকায় ইকোলজিকাল পরিবেশ উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে জানান তিং ।

বাওথু স্প্রিং এর স্প্রিং পুলটি তিনটি আউটলেটের মাধ্যমে জল প্রবাহিত হয়।  স্প্রিং থেকে বেরিয়ে আসা জলের আয়তন প্রতি সেকন্ডে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬ কিউবিক মিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। আর সারা বছর এখানকার পানির তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত  স্থির থাকে।

বিখ্যাত এই বাওথু স্প্রিং এর চারপাশে ছড়িয়ে আছে আরও ৩০টিওর বেশি ঝর্ণা। বাওথু স্প্রিংও এর আশেপাশের এসব ঝর্ণা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে পর্যটকরা।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম 

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী