বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-09-25 17:26:48

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩৭তম পর্বে যা থাকছে:

*এশিয়ান গেমসের পুরনো স্মৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুললো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

*প্রাচীন চীনা পৌরাণিক কাহিনীকে বাস্তব রূপ দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি

*প্রবীণদের যত্নে আধুনিক সেবা শিল্প নিয়ে শেনচেনে প্রদর্শনী

 

 

এশিয়ান গেমসের পুরনো স্মৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুললো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

 

একের পর এক চমক দেখাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আগে যা সম্ভব ছিলো না, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এখন তা নিমিষেই করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। 

উনিশতম এশিয়ান গেমসে চীনা ক্রীড়াবিদের অনুপ্রাণিত করতে ১৯৭৪ সালের এশিয়ান গেমসের চীনা প্রতিনিধিদলের হারিয়ে যাওয়া মুহুর্তগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আবারো প্রাণবন্ত করে তুলেছে একটি চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি।

নতুন একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে ১৯তম এশিয়ান গেমসের অফিশিয়াল পার্টনার আলিবাবা ক্লাউড। এশিয়ার অলিম্পিক কাউন্সিলের অফিসিয়াল আর্কাইভের সাহায্যে আলিবাবা ক্লাউড প্রাণবন্ত করে তুলেছে এশিয়ান গেমসের পুরনো মুহূর্তগুলো।

এ প্রজেক্টের নাম ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এশিয়ান গেমস আর্কাইভের পুনরুদ্ধার’। এশিয়ান গেমসের পুরনো মুহূর্তগুলোকে পুনরায় জীবিত করে তুলতে পুরো বিশ্ব থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ডেভেলপারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এখানে।

আলিবাবা ক্লাউডের এলগরিদম ইঞ্জিনিয়ার হুয়াং চুন বলেন, তাঁরা এশিয়ান গেমসের কারিগরি বিষয়গুলোর বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন।

তিনি বলেন, “এখানকার অনেক ছবি-ভিডিও এবারই প্রথম সবার সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। পুনরুদ্ধারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে আমরা এশিয়ান গেমসের প্রদর্শনী হলে পরিপূর্ণ ফল প্রদর্শন করব।” 

আজ থেকে ৫০ বছর আগে চীন সর্বপ্রথম এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রায় ৬ মাস নিরলস পরিশ্রম করে সেই ফুটেজ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এবারের এশিয়ান গেমস উদ্বোধনীর পর প্রথমবারের মতো তা সবার সামনে প্রদর্শন করা হয়।

চুন বলেন, “ব্যাপক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চীনের হয়ে সর্বপ্রথম স্বর্ণপদক জিতে এনেছিলেন সু চিপো। তেমনি আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলও ব্যপক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা নিজেদেরকে ক্রীড়াবিদ হিসেবে দেখি।”

গত শনিবার চীনের হাংচৌতে শুরু হয়েছে ১৯তম এশিয়ান গেমস, চলবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

প্রাচীন চীনা পৌরাণিক কাহিনীকে বাস্তব রূপ দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি

 

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রাচীন চীনা পৌরাণিক কাহিনীর বাস্তব রূপ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারছেন দর্শকরা। সম্প্রতি ছেংতুতে গোল্ডেন পান্ডা এওয়ার্ডের এক ফোরামে এপিক চলচ্চিত্র ‘ক্রিয়েশন অব গডস ওয়ান: কিংডম অব স্টর্মস’ সিনেমার পরিচালক উয়ু আরশান এমন মন্তব্য করেন। তার মতে, পৌরাণিক কাহিনীগুলো সবই পরাবাস্তব। পরাবাস্তব কাহিনীকে বাস্তব চলচ্চিত্রে রূপ দিতে আধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে সাহায্য করছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন তিনি।

মিং রাজবংশ নিয়ে উপন্যাস ফেংশেন ইয়ানইয়ি অবলম্বনে তৈরি ‘ক্রিয়েশন অব গডস ওয়ান: কিংডম অব স্টর্মস’ চলচ্চিত্রটি এপিক মুভি ট্রিলোজির প্রথম সিনেমা। পৌরাণিক কাহিনী ও ইতিহাসের মিশেলে লেখা হয়েছে এই সিনেমার গল্প, যা গত এক শতাব্দী ধরে পাঠকদের বিমোহিত করে আসছে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সেই গল্প বাস্তব রূপে দেখতে পাচ্ছেন দর্শকরা। 

উপন্যাসটিতে শাং রাজবংশের উত্থান ও চৌ রাজবংশের পতনের গল্প বলা হয়েছে। গল্পে রয়েছে দেব-দেবতা ও অমরদের যুদ্ধের গল্প। এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে।    

দুইমাস আগে মুক্তি পাওয়া ‘ক্রিয়েশন অব গডস ওয়ান: কিংডম অব স্টর্মস’ সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি কামিয়েছে সিনেমাটি। এই সিনেমার পরিচালক উয়ু আর শান এক ফোরামে বলেন, আদিম ভাবনা এবং আবেগী বন্ধনের জোরে চীনাদের মন জয় করে নিয়েছে এই সিনেমাটি। 

পরিচালক বলেন, “আমার মতে, পৌরাণিক কাহিনী কেবল সুদূর অতীতের গল্পই বলে এমনটি নয়, এটি আসলে আমাদের হৃদয়ের রূপক প্রতিচ্ছবি। আমরা ছোট থেকে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শুনে বড় হই। যদিও গল্পগুলো সব পরাবাস্তব, তবে এগুলোতে আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবিই উঠে আসে। ফেংশেন ইয়ান ইয়ি গল্পটি তিন হাজার বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ হলো এটি ইতিহাসের পাশাপাশি আমাদের হৃদয়ের গভীরতম অংশকেও স্পর্শ করে।”

এই পরিচালক আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে দর্শকদের জন্য চলচ্চিত্রে বাস্তবসম্মত ও প্রাণবন্ত কাল্পনিক জগৎ তৈরি করা। কম্পিউটার প্রযুক্তি অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে এই চলচ্চিত্র এক যুগান্তকারী সাফল্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, “এই চলচ্চিত্র তৈরির কাজে প্রচুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এতো ভালো কম্পিউটার প্রযুক্তি অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার এর আগে অন্য কোনও চীনা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান করতে পারেনি। উপন্যাসের সবগুলো চরিত্রের পেইন্টিংই বেশ নজরকাড়া। তবে পেইন্টিংগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলতে আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে।”

এবারই ছেংতুতে প্রথমবারের মতো গোল্ডেন পান্ডা এওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি দুই বছরে একবার সিচুয়ানে এই গোল্ডেন পান্ডা এওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হয়।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

  

প্রবীণদের যত্নে আধুনিক সেবা শিল্প নিয়ে শেনচেনে প্রদর্শনী

 

প্রবীণদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে সম্প্রতি এমন সব আধুনিক প্রযুক্তির পসরা দেখা গেলো কুয়াংতোং প্রদেশের শেনচেন শহরের এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। প্রবীণদের যত্নে আধুনিক সেবা শিল্প নিয়ে শেনচেন শহরে এটিই ছিলো প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী।

যৌবনের পর প্রতিটি মানুষেরই বার্ধক্যের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই সময়টা ঘিরে থাকে নানা রোগ ও অসুবিধা। কঠিন এই সময়টুকুকে সহজ করতেও বিজ্ঞানীরা কম কষ্ট করছেন না। প্রবীণদের যত্নে আধুনিক সেবা শিল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে বিশ্বজুড়েই। এরকম প্রায় ১ হাজারের বেশি সেবা নিয়ে চীনের শেনচেনে এ সম্পর্কিত এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে জমায়েত হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২০০ কোম্পানি। 

প্রদর্শনীতে দেখা হলো বেইজিং হাসপাতাল থেকে আসা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ লি চিংয়ের সাথে। তিনি দেখালেন কীভাবে উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্যগুলো বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও উন্নতিতে সহায়তা করে। হাতে একটি স্ফিগমোম্যানোমিটার নিয়ে সেটি দেখিয়ে বললেন, “এই যন্ত্রটি মাঝারি হাইপোক্সিয়ার মাধ্যমে কার্ডিওভাসকুলার এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটি আসলে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আমরা এটিকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেনো এটি বাসায়ও ব্যবহার করা যায়।” 

লিয়ের মতে প্রবীণদের জন্য তৈরি স্বাস্থ্যসেবা পণ্যগুলো বাসার পাশাপাশি নার্সিং হোমেও ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে প্রতিদিন চিকিৎসক থাকেন না।

তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা সাধারণত হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেন। তবে বয়স্ক রোগীরা হাসপাতালে সময় কাটান কম, বাসা বা নার্সিং হোমে সময় কাটান বেশি। যেহেতু প্রবীণদের কাছে প্রতিদিন চিকিৎসক যেতে পারেন না, তাই তাদের দেখাশোনায় প্রয়োজন আধুনিক ও বুদ্ধিমান চিকিৎসাপণ্য।” 

২০২১ সাল পর্যন্ত হালনাগাদ করা সরকারি তথ্যে দেখা যায়, চীনে ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষ আছেন ২৬ কোটির বেশি এবং ৬৫ বছর বা তারও অধিক বয়সী মানুষের সংখ্যা ২০ কোটির বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল এই জনগোষ্ঠীর ৭৫ ভাগেরই দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা, বিগ ডেটা ও তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে এই বয়স্ক ব্যক্তিদের ২৪ ঘন্টা তত্ত্বাবধানের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন প্রবীণদের জীবন আরও সহজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী