সেপ্টেম্বর ২৫: চীনের কৃষক ও ফসল উত্সব হলো জাতীয় পর্যায়ে কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে পালিত একটি উৎসব। উত্সবটি পালিত হচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে। প্রতিবছর ‘শারদীয় বিষুব’-এ উত্সবটি পালিত হয়।
এ উত্সবে লক্ষ লক্ষ কৃষকের উদ্দীপনা, উদ্যোগ ও সৃজনশীলতা প্রকাশিত হয়। ‘চীনের কৃষক ও ফসল উত্সব’-এর আয়োজন গ্রামীণ সংস্কার ও উন্নয়নের মহান অর্জনগুলোকে তুলে ধরতে পারে এবং প্রাচীনকাল থেকে চীনের কৃষি-ভিত্তিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
২০১৮ সাল থেকে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টানা ছয় বছর সকল কৃষক ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত কর্মীদেরকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে আসছেন, এই বিশেষ দিনে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, সি চিন পিং-কে কেন্দ্র করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কৃষিকাজের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। কৃষক ও ফসল উত্সব আয়োজন সমগ্র সমাজের কৃষির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে; সমাজে গ্রাম ও কৃষকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব ভালো করে বুঝতে পারে।
খাদ্য-নিরাপত্তা জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকার সাথে সম্পর্কিত বিষয়। সি চিন পিং বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন, এক শ কোটির বেশি মানুষের খাবারের সমস্যা সমাধান করা সবসময়ই সিপিসি’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কৃষক ও ফসল উত্সব উদযাপনের মাধ্যমে ধারাবাহিক নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম উন্নয়ন ও প্রচার করা যায়। কৃষকের কাজ করার উদ্দীপনাও এতে বাড়ে।
চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ চীনে উচ্চ তাপমাত্রা ও খরা এবং উত্তর চীনের অন্যান্য স্থানে মারাত্মক বন্যা দেখা দেয়। চীনা কৃষকরা এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে গ্রীষ্মকালীন গম ঘরে তুলেছে। শরতে শস্য ছিল সাধারণ বছরের মতোই।
চীনের কৃষক ও ফসল উত্সব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উদযাপনী কার্যকলাপ আয়োজিত হয়। বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে চীনের কৃষি, শিল্প ও গ্রামের আধুনিকায়নের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়। কৃষক ও ফসল উত্সব হলো কৃষকদের উত্সব। কৃষক ও ফসল উত্সব উদযাপনের বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। প্রথমত, উত্সব উপলক্ষ্যে ধারাবাহিক কৃষি ও শিল্পসহায়ক ব্যবস্থা ও নীতিমালা কার্যকর হতে পারে; গ্রামীণ এলাকার অভ্যন্তরীণ গতিশীলতাকে উদ্দীপিত করা যায়। দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্যের প্রদর্শনী ও গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে গ্রামীণ ভোগের জীবনীশক্তি উদ্দীপিত করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।
সম্প্রতি জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি বছর চীনের গ্রীষ্মকালীন ফসল ফলেছে মোট ২৯২.৩ বিলিয়ন জি তথা প্রায় ১৫০ বিলিয়ন কেজি, যা বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে ০.৯ শতাংশ কম। ফসল বপনের জমির আয়তন ০.৩ শতাংশ বেশি ছিল। এক্ষেত্রে টানা ৩ বছর ধরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। সামগ্রিকভাবে যদিও আউটপুট সামান্য হ্রাস পেয়েছে, তবে তা এখনও তুলনামূলকভাবে উচ্চ স্তরে রয়েছে। এটি সারা বছর ধরে স্থিতিশীল শস্য উৎপাদনের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে।
এদিকে, খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা হলো একটি কৌশলগত ইস্যু। আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যে, চীনের খাদ্যের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ভবিষ্যতে খাদ্যের চাহিদা বাড়তে থাকবে এবং সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে আঁটসাঁট ভারসাম্য ক্রমশ আরও আঁটসাঁট হয়ে উঠবে। শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নতি এবং শস্য উৎপাদন-ক্ষমতা উন্নত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
কৃষকদের মৌলিক আয় নিশ্চিত করলে এবং খাদ্যশস্য বপনের এলাকা স্থিতিশীল থাকলে দেশের খাদ্য-নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে।
সি চিন পিং বলেন, শক্তিশালী কৃষিশিল্প হলো একটি শক্তিশালী আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশের ভিত্তি। উচ্চমানের উন্নয়ন অর্জনের জন্য কৃষির আধুনিকায়ন প্রয়োজন। কার্যকরভাবে আবাদী জমি সংরক্ষণ, শস্যবপন ক্ষেত্রের আয়তন স্থিতিশীল রাখা, উচ্চমানের কৃষিক্ষেত্র নির্মাণ জোরদার করা, এবং খাদ্যশস্য ও গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যের স্থিতিশীল ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। (ছাই/আলিম)