চোখ ধাঁধানো, মন মাতানো, জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠেছে ১৯তম হাংচৌ এশিয়ান গেমসের। শনিবার সন্ধ্যায় হাংচৌর অলিম্পিক স্পোর্টস সেন্টার স্টেডিয়াম- ‘বিগ লোটাস’ বা ‘বড় পদ্ম’ খ্যাত স্টেডিয়ামে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতিতে গেমসের উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।
প্রায় দু’ঘন্টার উদ্বোধনী আয়োজনে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের দৃষ্টিনন্দন মার্চপাস্ট এবং হাংচৌ ও চীনের ঐতিহ্য তুলে ধরে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হৃদয় জয় করে নিয়েছে চীন ও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের। হাংচৌ এশিয়াডের ঔজ্বল্য ছাপিয়ে গেছে আগের সব এশিয়ান গেমসকে।
৪৫টি দেশ ও অঞ্চলের রেকর্ড সংখ্যক প্রায় সাড়ে ১২ হাজার খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণে, প্রযুক্তি নির্ভর ও পরিবেশবান্ধব এ গেমস নিয়ে বিশ্বের তাবৎ গণমাধ্যমে প্রশংসার ফোয়ারা ছুটেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও হাংচৌ এশিয়াডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সচিত্র, সপ্রশংস প্রতিবেদন এসেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম একে অলিম্পিকের মতো বর্ণাঢ্য গেমস বলে অভিহিত করেছে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের ২৪০ সদস্যের দল হাংচৌ এশিয়াডে অংশ নিচ্ছে বিধায় প্রায় সব প্রতিবেদনে এসেছে বাংলাদেশের কথা।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র ইত্তেফাক তাদের খেলাধুলার পাতায় ৮ কলামজুড়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাংচৌ এশিয়াডের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন নিয়ে। ‘হৃদয় জয় করলো চীনের বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান’- শিরোনামের প্রতিবেদনে হাংচৌ এশিয়ান গেমসে নজরকাড়া আয়োজন এবং চীনের সাংগঠনিক ক্ষমতার ভূঁয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ৪৫টি দেশের ক্রীড়াবিদদের মার্চপাস্ট শেষে গেমসের উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘চীনের লক্ষ্য ছিল এশিয়ান গেমস হবে অলিম্পিকের মতো। …করোনার কারণে চীন অনেকের কাছে কটু কথা শুনেছিল। (চীন) শেষ হয়ে গেছে, সেখানে কিছু হবে না। এ সব নানান নেতিবাচক কথা চীনকে একবিন্দু টলাতে পারেনি। চীন নিজের শক্তি আর সামর্থের কথা, নিজেকে জানান দিতে এশিয়ান গেমসকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিল। পৃথিবীর কাছে নিজেদের সম্মান তুলে ধরতে এটাই ছিল তাদের চোখে মোক্ষম অস্ত্র। এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীন জানিয়ে দিল তাদের জয়গানের কথা’।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত বাংলাদেশ প্রতিদিন সংবাদপত্র হাংচৌ এশিয়ান গেমসের প্রশংসা করে লিখেছে, ১৯৯০ এবং ২০১০ সালে এশিয়ান গেমস এবং ২০০৮ সালে অলিম্পকি গেমস আয়োজন করেছে চীন। এবার এশিয়ান ক্রীড়ার সেরা আসরটি আয়োজন করছে হাংচৌ।
বাংলাদেশের অন্যতম দৈনিক সংবাদপত্র সমকালও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে হাংচৌ এশিয়াডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের খবর ছেপেছে। সংবাদপত্রটির প্রতিনিধি হাংচৌ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ দিয়েছেন।
‘প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এশিয়ান গেমসের বর্ণিল উদ্বোধন’- শিরোনামে সরেজমিনে প্রতিবেদনে হাংচৌ এশিয়াডের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীর কাব্যিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সবুজায়নের নগরীতে নানা রং, যে রং কোনো চিত্রশিল্পীর আঁকা নয়। থ্রিডি এলইডিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংধনুর ওই সাত রং, যেখানে চীনা ও ইংরেজিতে লেখা ‘ওয়েলকাম টু হাংচৌ’। স্টেডিয়ামের এক পাশে ডিজিটাল স্ক্রিনে তুলে ধরা হয় পর্যটন নগরীর ইতিহাস-ঐতিহ্য। সবকিছু এমনভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে, কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছে হাংচৌর অলিম্পিক স্টেডিয়াম যেন জাদুঘর!
এবারের হাংচৌ এশিয়াড পরিবেশবান্ধব করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আয়োজকরা। প্রতিবেদনে সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য ছিল না আতশবাজি। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এমনভাবে প্রায় দুই ঘণ্টার উদ্বোধনকে রাঙিয়েছে আয়োজকরা, তাতে সবুজ-মেরুনের সঙ্গে জ্বলে ওঠে আতশবাজির রশ্মি। কয়েক দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে গুমোট ধরে থাকা হাংচৌর আকাশও গতকাল রাতে হেসেছে। রঙিন আলোয় যেন মুছে গেছে কালো মেঘ’।
দেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ –‘সি ডিকলেয়ার্স বিগেস্ট এভার এসিয়ান গেমস’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে হাংচৌ এশিয়াড শুধু বড় নয়, এ যাবৎকালের সেরা আসরও বটে।
হৃদয় থেকে হৃদয়ে, ভবিষ্যতে’– এই প্রতিপাদ্যটি এবারের এশিয়ান গেমসের স্লোগান। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যকে চিহ্নিত করেই এই স্লোগানটি নিয়েছেন আয়োজকরা।
তবে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলা যায় ‘এশিয়ান গেমসের ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (চীন) শুধু এশিয়াকে দেখায়নি, পুরো পৃথিবীকে উপহার দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সহজেই মাথা নোয়ান না চীনারা। চীন আবার পৃথিবীর বুকে মাথা ঊঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আবার পৃথিবীর স্রোতে সবার সামনে এগিয়ে চলার বার্তা দিয়েছে। আর সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলবে চীন’।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।