চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৫
2023-09-23 17:34:20

 

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

হুনানে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনী

দ্বিতীয় হুনান অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ছানচৌ শহরে গেল সপ্তাহে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর। এতে সুদূর সিনচিয়াং এবং তিব্বতসহ চীন জুড়ে ১৫০টিরও বেশি ঐতিহ্যের প্রদর্শন করা হয়। 

তং জাতিগোষ্ঠীর পিপা গান, থানথৌ চীনা নববর্ষের ছবি আকাঁ, হুয়াও ক্রস সেলাই, এ সব প্রদর্শিত নৈপুণ্য চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

এক্সপোটি একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ উদযাপন বলে জানান চিয়াং এমব্রয়ডারির উত্তরাধিকারী ছাং সিনসিয়াং।

‘এটি একটি দ্বিমুখী সূচিকর্ম বাঘ, চিয়াং সূচিকর্মের একটি ক্লাসিক ধরণ, এগুলো একটি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এতে স্বচ্ছ কাপড়ের উভয় পাশে অভিন্ন নিদর্শন তৈরি করা থাকে’।

এক্সপোতে লাইভ পারফরম্যান্সের আয়োজন করা হয় এবং একটি  পণ্যবিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।  

১৩টি প্যাভিলিয়ন চীনা ওষুধসহ সূচিশিল্প, চীনামাটির বাসন, রন্ধনপ্রণালী, অপেরা এবং আরও অনেক কিছুকে তুলে ধরে, যা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক প্রদর্শন করে।

দ্বিতীয় হুনান পর্যটন সম্মেলনের অংশ হিসেবে, এক্সপোটি তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে হুনানের পর্যটন শিল্পকে উন্নীত করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। 

 

গ্রেটার বে এরিয়া আর্ট ফেস্টিভ্যাল

চলমান তৃতীয় কুয়াংতং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়া (জিবিএ) সাংস্কৃতিক ও আর্ট ফেস্টিভ্যাল তুলে ধরছে জমকালো ফোক অপেরা পারফরম্যান্স, আকর্ষণীয় মার্শাল আর্ট শো এবং চীনা লোকসংগীত কনসার্টসহ ৭টি ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতিকে।  

গত ১২ সেপ্টেম্বর চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুয়াংচৌর কুয়াংতোং ফ্রেন্ডশিপ থিয়েটারে সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব।

ইভেন্ট চলাকালীন দর্শকদের শৈল্পিক অভিজ্ঞতা দিতে গ্রেটার বে এরিয়ার বিভিন্ন শহরে মঞ্চ শিল্প পরিবেশনা, জাতিগত গানের কনসার্ট, শিল্প প্রদর্শনী এবং শিল্প উদ্ভাবন ফোরামসহ বিভিন্ন পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে।  

কুয়াংতোং প্রাদেশিক সরকার, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, হংকং এবং ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের যৌথ উদ্যোগে এ বছরের সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।  সাংস্কৃতিক নির্মাণের প্রচার করা এবং গ্রেটার বে এরিয়াতে সাংস্কৃতিক পর্যটন সম্পদকে একত্রিত করা এ ইভেন্টের লক্ষ্য।

ইভেন্টটি আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।   

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

 

২. এশিয়ান গেমসে বর্ণিল সাজে হাংচৌ

২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর! ১৬ দিনের ক্রীড়া মহাযজ্ঞ!

এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞকে কেন্দ্র করে অপরূপ রূপে সেজেছে এর প্রধান আয়োজক শহর পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌ।

 

হাংচৌতে এশিয়ান গেমসের ৪৪টি ভ্যেনু; শহরের ল্যান্ডমার্ক ভবন, বিশ্বখ্যাত পশ্চিম হ্রদ, ছিয়ানতাং নদী ও বেইজিং-হাংচৌ গ্র্যান্ড ক্যানেলসহ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নির্দশনের স্থানগুলো ঝলমল করছে অপূর্ব বর্ণবিভায়!

হাংচৌর বাসিন্দা লি শিয়াওইয়ান বলছিলেন গেমসের চমৎকার আবহ সম্পর্কে।

আমরা এশিয়ান গেমসের একটা দারূণ আবহ টের পাচ্ছি। আমরা বিদেশি বন্ধুদের হাংচৌতে স্বাগত জানাচ্ছি এবং সবাইকে গেমস উপভোগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

 

হাংচৌর রাস্তা-ঘাট, সড়কদ্বীপ ও বিভিন্ন স্থাপনা এশিয়ান গেমসের নানা প্রতীক, মাসকট ও স্লোগানে সজ্জিত করা হয়েছে। শহরের ১৮টি প্রাকৃতিক পুস্প-উদ্যানের পাশাপাশি গেমস উপলক্ষ্যে ১৪টি থিম গার্ডেন স্থাপন করা হয়েছে।

হাংচৌর বিশ্বখ্যাত পশ্চিম হ্রদে নতুন প্রজাতির পদ্ম লাগানো হয়েছে- যেগুলো গেমস চলাকালে পূরোপুরি ফুটবে। নিজেদের শহরকে আরও সুন্দর করে তুলতে বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঘরবাড়ির আশপাশে ফুল গাছ লাগান।

হাংচৌ শহর ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর উপ-পরিচালক সং শিয়াওছিং জানান তাদের প্রস্তুতির কথা।

আমরা সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার পরিকল্পনার সময় হাংচৌর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে এশিয়ান গেমসের সবকিছুর সুসমন্বয়ের কথা ভেবেছি; যাতে করে আমাদের শহরের ঐতিহ্য, সম্প্রীতি আর উন্মুক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

হাংচৌর মতোই সহ-আয়োজক পাঁচটি শহরও পিছিয়ে নেই গেমসকে ঘিরে সাজসজ্জায়।

নিংপো শহরে জনবহুল সড়ক এবং পার্কে সাজসজ্জার পাশাপাশি খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শাওসিংয়ে যানবাহনে এশিয়ান গেমসের বর্ণিল উপস্থিতি।

চিনহুয়া শহর বাসিন্দাদের সুবিধার্থে ৮০ হাজার বর্গমিটারে একটি এশিয়ান গেমস থিক পার্ক স্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ওয়েনচৌ ও হুচৌ শহরও এশিয়ান গেমসের নানা প্রতীক, মাস্কট, স্লোগান আর পুস্পবিন্যাসে হয়ে উঠেছে বর্ণিল।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

৩. চীনের ঐতিহ্যের জানালা গেমস ভিলেজ

খেলনা মূর্তি-শিল্প থেকে শুরু করে জটিল কারুকার্যময় শিল্প- এশিয়ান গেমস ভিলেজে চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে স্থাপিত প্রদর্শনী বুথে সবকিছু সম্পর্কে জানতে পারছেন বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। প্রদর্শনী বুথগুলো তাদের কাছে হয়ে উঠছে চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি জানালা।

চেচিয়াংয়ের নিংপো শহরে স্থাপিত সাব-ভিলেজে স্থাপিত সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে প্র্যাকটিস ও কাজের ফাঁকে জড়ো হন বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।

চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একজন উত্তরাধিকারী সান ওয়েনচং ক্রীড়াবিদদেরকে চীনা চাঁদের দেবীর কিংবদন্তীতে খরগোশের মূর্তিগুলির তাৎপর্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের খরখোশের খেলনা মূর্তি বানানোর কৌশল শেখান।

বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তারা বিষয়টি খুব উপভোগ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের একজন কমকর্মা নারিন্দর সিং রাজপূত তাদের একজন। তিনি বলেন,

‘এটি খুবই ভালো, খুবই আকর্ষণীয়। আমরা এখানে বিরক্ত বোধ করছি না কারণ এখানে অনেক কিছু চলছে’।

হংকং প্রতিনিধিদলের একজন কর্মকর্তা লি চিছিং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর জন্য ধন্যবাদ জানান আয়োজকদের।

‘এখানকার বুথ এবং প্রদর্শনী আমাদের স্থানীয় বৈশিষ্ট্য এবং চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে’।

নিংপো ভিলেজে ৭০টির বেশি প্রদর্শনী ক্যাবিনেট রয়েছে, যার প্রতিটিতে চীনের বিভিন্ন অবৈষয়কি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ