আকাশ ছুঁতে চাই ৩৬
2023-09-21 20:07:15

 

১. এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের নারী

২. নারীদের ভাগ্য বদলেছে ‘লাকি ডল’

৩. ছাকান লেকের তীরে মৎস্যজীবী নারী

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের নারী

 

অতীতে বাংলাদেশের নারীদের ক্রীড়াক্ষেত্রে অংশগ্রহণ খুব বেশি ছিল না। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও এগিয়ে এসেছেন ক্রীড়াক্ষেত্রে। তারা জাতীয় ক্রীড়ায় বড় অবদান রাখছেন। বিদেশেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এমনি একজন নারী ক্রীড়াবিদ নুসরাত জাহান শামসি। কথা বলবো তার সঙ্গে।

বাংলাদেশের তরুণী নুসরাত জাহান শামসি। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় শুটিং দলের সদস্য হিসেবে চীনে হাংচৌ এশিয়ান গেমসে অংশ নিচ্ছেন।

 

নুসরাত জাহান শামসি আগামি বছর এইচ এসসি পরীক্ষা দিবেন। চলতি বছরই তার এইচএসসি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়ার জন্য তিনি এই পরীক্ষা দিতে পারেননি। জাতীয় ক্রীড়ায় অবদান রাখার জন্য তার এই ত্যাগস্বীকার নিশ্চয়ই একটি বিরল ঘটনা।

নুসরাত শামসি ক্রীড়া শিক্ষাগ্রহণ করেছেন বিকেএসপিতে। তিনি শুরু করেছিলেন ভলিবল দিয়ে। পরে কৌতুহলের বশে শুটিংয়ে অংশ নেন। সেখান থেকেই এই গেমসে যাত্রা শুরু। পরিবারের সকলের কাছ থেকেই সহযোগিতা পেয়েছেন শামসি। তিনি ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যেতে চান। দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে চান।

এদিকে হাংচৌতে ১৯ তম এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে চীনে পৌছে গেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল অধিনায়ক নিগার সুলতানার নেতৃত্বে বাংলাদেশের টাইগ্রেসরা অংশ নিচ্ছেন এই সম্মানজনক ইভেন্টে।

বাংলাদেশ নারী দল সরাসরি খেলবে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে।

এশিয়ান গেমসের ক্রিকেট ইভেন্টে এর আগে বাংলাদেশ রৌপ্য পদক জিতেছে দু’বার। এবার স্বর্ণ পদক জয়ের প্রত্যাশা বাংলাদেশ নারী দলের। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অধিনায়ক।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শান্তা মারিয়া

 

 

নারীদের ভাগ্য বদলেছে ‘লাকি ডল’

অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক নারীর জীবনে  নিয়ে এসেছে আর্থিক নিরাপত্তা। এমনি একটি অবৈষযয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো লাকি ডল নামে বিশেষ ধরনের পুতুল। এই লোকজ কারুশিল্প সিচুয়ান প্রদেশের একটি কাউন্টির স্থানীয় নারীদের জীবনে নিয়ে এসেছে পরিবর্তন।

 

কাপড়, পুতি ও নানা রকম এক্সেসরিজ দিয়ে তৈরি এক পুতুল। হাতে তৈরি এই পুতুলের নাম ‘লাকি ডল’। এই পুতুল আয় রোজগার বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় নারীদের।

চীনের বিখ্যাত ইয়েলো রিভার বা হোয়াং হোর অববাহিকায় অবস্থিত সিচুয়ান প্রদেশ। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের এই প্রদেশের রুয়োরকাই কাউন্টির থাংখ্য টাউনে ২০১৬ সালে গঠিত হয় এক সমবায় সমিতি। মূলত নারীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সমবায় সমিতি নারীদের আয়ের পথ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালায়।

এখানকার পাইহ্য কমিউনিটির নারীরা এক বিশেষ ধরনের কারুশিল্পে দক্ষ। তারা কাপড়ের পুতুল তৈরি করতে পারেন, স্থানীয়ভাবে যেগুলোকে ‘লাকি ডল’ বলা হয়। এই পুতুলগুলো লোকজ ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প।

সমবায় সমিতি এই পুতুলকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। হস্তশিল্পের একটি ছোট কারখানা স্থাপিত হয়। সেখানে  এই পুতুল তৈরিতে দক্ষ প্রবীণ নারীরা অন্যদের এই পুতুল তৈরির কৌশল শিক্ষা দেন।

পুতুলগুলো কমিউনিটির বাইরেও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় সংস্কৃতির সুভ্যেনির হিসেবে পর্যটকরাও এগুলো কেনেন। পুতুলগুলো স্থানীয় কারুশিল্পের ক্ষেত্রে বিশিষ্টতা অর্জন করে। শুধু চীনের বাজারে নয়, বিদেশেও কিন্তু জনপ্রিয়তা পেয়েছে পুতুলগুলো।

সমবায় সমিতির সদস্যদের আয় রোজগার বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে সমিতির সদস্যসংখ্যাও।

এখন পাইহ্য কমিউনিটির নারীরা তাদের সংসারের শ্রীবৃদ্ধি করে নিচ্ছেন এই পুতুল থেকে।

তাদের রোজগার বেড়েছে,। লাকি ডল সত্যিই সৌভাগ্য এনেছে এলাকার নারীদের জন্য। সেইসঙ্গে এই শিল্পকে ভিত্তি করে চাঙা হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

ছাকান লেকের তীরে মৎস্যজীবী নারী

চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা। নতুনভাবে জেগে উঠছে গ্রামের অর্থনীতি। গ্রামীণ পুনর্জীবনের এই ধারাকে বেগবান করেছেন অনেক উদ্যোগী নারী। এমনি একজন উদ্যোগী নারী ছু সানমেই। কিভাবে তিনি নিজের জীবনের গল্পটি পাল্টে ফেললেন শুনবো সেই কাহিনী।

চিলিন প্রদেশের ছাংছুন সিটি। এখানে ছাকান লেকের তীরে ছু সানমেই এর রেস্টুরেন্ট।  ৩৩ বছর বয়সী উদ্যোগী নারী ছু। তিনি তার রেস্টুরেন্টে নানা রকম মাছের ডিশ পরিবেশন করেন। তার তৈরি মাছের ডিশের আকর্ষণে অনেক ক্রেতা আসেন।

এটা সম্ভব হয়েছে ছাকান লেকের সংস্কার কাজ ও পরিবেশ উন্নত হওয়ার ফলে।

ছিয়ান গোরলোস মঙ্গোলিয়ান স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টিতে এই রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। ছু জানান, ১৯৭০ এর দশকে ছাকান লেকের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। এখানে পানি দূষণের পরিমাণ ছিল বেশি। ক্ষার ও লবণাক্ত মাটি এবং আশেপাশের কৃষিক্ষেত্রের কারণে পরিবেশ আরও বেশি দূষিত হয়েছিল। এখানকার মৎস্যজীবীরা তখন পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে একেবারেই সচেতন ছিলেন না। নির্দিষ্ট একটা সময়ে যে মাছধরা বন্ধ রাখা দরকার সেটাও তারা জানতেন না। ফলে লেকের পানিতে মাছের পরিমাণ কমে যায়। লেকের মাছও দুর্গন্ধযুক্ত ছিল। সবসময় মাছ পাওয়াও যেত না।

তবে দিন বদলায়। লেকের সংস্কার কাজ হয়। এখানকার পরিবেশ উন্নত করা হয়। অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। কৃষিক্ষেত্রগুলো আবার অরণ্যে পরিণত করা হয়। লেকের পরিমাণ বাড়ানো হয়। পানিতে পদ্মফুল ও নানা রকম জলজ উদ্ভিদ লাগানো হয়। এখন ৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় লেক সম্প্রসারণ করা হয়। মৎস্যসম্পদও বাড়ানো হয়েছে।

ছু নিজে একজন মৎস্যজীবী। ২০১৯ সালে ছু এবং তার স্বামী একটা ছোট রেস্টুরেন্ট খোলেন। তিনি ছাকান লেকের মাছ ধরে ফ্রেশ মাছ রান্না করে বিক্রি করা শুরু করেন। এখন তার রেস্টুরেন্টে ৮০টি টেবিল। দৈনিক ৩০০ ক্রেতা আসেন।

ছু জানান, গ্রীষ্মকালে তারা লোটাস ফেস্টিভ্যাল করেন। তখন পদ্মফুলের বীজ ও মৃণাল সঙ্গে মাছের নানা রকম ডিশ পাওয়া যায়।

ছু বলেন, আগে অনেক মৎস্যজীবী এখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন অনেকে আবার ফিরে আসছেন। বিশেষ করে নারীরা অনেকেই এখানে রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। তারা গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল