সেপ্টেম্বর ২১: ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ’ প্রস্তাব করেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাকে শুরু থেকেই স্বাগত জানায়। বিগত দুই বছরে, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বড় প্রাণশক্তি ও আকর্ষণ দেখিয়েছে, বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য চীনা উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
উন্নয়ন একটি উন্নত জীবনের জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষা বহন করে। উন্নয়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে শীর্ষ অগ্রাধিকার, এবং মানবসমাজের চিরন্তন লক্ষ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশ্ব অস্থিরতা ও পরিবর্তনের নতুন সময়ে প্রবেশ করেছে; বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি কমেছে; উত্তর-দক্ষিণ উন্নয়নের ব্যবধান আরও প্রসারিত হয়েছে; এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকটময় মুহূর্তে, ২০২১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো বিশ্বের কাছে একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ প্রস্তাব করেন। তিনি "উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া", "মানুষকে কেন্দ্র করে শাসনকাজ পরিচালনা করা" এবং "সর্বজনীন সুবিধা ও সহনশীলতার চর্চা করা" "উদ্ভাবন-চালিত ধারা মেনে চলা", "মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থান মেনে চলা" এবং "অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড ধারণা মেনে চলা"-র মাধ্যমে, সকল পক্ষকে যৌথভাবে, বৈশ্বিক উন্নয়নকে ভারসাম্য, সমন্বয় ও সহনশীলতার নতুন পর্যায়ে উন্নীত করার আহ্বান জানান।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের বন্ধু-গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে যাত্রা শুরু করে। ২০২২ সালের জুনে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বৈশ্বিক উন্নয়ন উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এবং যৌথভাবে একটি সর্বজনীন, ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত, সহনশীল, জয়-জয় সহযোগিতা ও অভিন্ন সমৃদ্ধির উন্নয়ন-কাঠামো সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। তিনি বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ঘোষণা করেন, ফলে উদ্যোগটি বাস্তব সহযোগিতার এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ফিজিতে, চীনের ছত্রাক প্রযুক্তি শিকড় গেড়েছে এবং এই দ্বীপদেশে উন্নয়নের জন্য নতুন আশা নিয়ে এসেছে। বর্তমানে, ১৭টি দেশে ছত্রাক প্রযুক্তির প্রদর্শনী ঘাঁটি আছে এবং ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ, ক্ষুধা হ্রাস, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো উন্নয়ন সমস্যা সমাধানে অবদান রাখছে।
খাদ্য নিরাপত্তা একটি জরুরি বৈশ্বিক উন্নয়ন সমস্যা এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ সহযোগিতার আটটি মূল ক্ষেত্রের মধ্যে একটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার দেশ জিবুতি মারাত্মক খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়। গত বছরের অক্টোবরে এবং চলতি বছরের মার্চ মাসে, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, চীন সরকার জিবুতিকে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের কাঠামোর মধ্যে, দুই দফায় জরুরি খাদ্য-সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে আছে ১৫০০ টন চাল।
বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ লাওসের প্রথম প্রকল্প হিসেবে, গত বছরের নভেম্বরে, চীন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং লাও শিক্ষা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় স্কুল মিল প্রোগ্রামকে ৯৩০ টন চাল এবং ১২০ টন টিনজাত মাছ দিয়ে সহায়তা করে। লাওসের আটটি প্রদেশে ১৪০০টিরও বেশি স্কুলের ১.৩ লাখেরও বেশি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রদের স্কুলের খাবার দেওয়া হয়, যা লাওসে প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ ও শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
চলতি বছরের আগস্টে, জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস, আফ্রিকা এবং অন্যান্য উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে সংলাপে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বিশ্ব ও জনগণের স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং উন্নয়ন ইস্যুকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডার কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও কণ্ঠস্বর বৃদ্ধি করা এবং উন্নয়ন অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থন করা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেদিন তার ভাষণে ঘোষণা করেন যে, চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বিশেষ তহবিল চালু করবে।
এখন পর্যন্ত, ৭০টিরও বেশি দেশ "বৈশ্বক উন্নয়ন উদ্যোগের বন্ধু-গ্রুপে" যোগ দিয়েছে এবং এ উদ্যোগের প্রকল্প-ভান্ডারে ৬০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশের প্রায় ২০০টি বাস্তব সহযোগিতা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগটি কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পায়নি, বরং এটি চীন এবং আসিয়ান, মধ্য-এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার নথিতেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে এ উদ্যোগের প্রাণবন্ততা ও শক্তিশালী আকর্ষণ-ক্ষমতা প্রতিফলিত হয়। (ইয়াং/আলিম/ছাই)