‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৩৬
2023-09-20 19:32:29

 

‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৩৬

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।       

১. ৬ষ্ঠ ক্রস-স্ট্রেট ইয়ুথ উন্নয়ন ফোরামে সি চিন পিং এর অভিনন্দনবার্তা

"এশিয়ান গেমসকে স্বাগত জানাতে একসাথে কাজ করা এবং একসাথে একটি নতুন পরিকল্পনা আঁকা" এই প্রতিপাদ্যে ৬ষ্ঠ ক্রস-স্ট্রেট ইয়ুথ উন্নয়ন ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অভিনন্দনবার্তা পাঠান।

 

এতে তরুণরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যত উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ক্রস-স্ট্রেট ইয়ুথ উন্নয়ন ফোরাম ক্রস-স্ট্রেট যুবকদের একে অপরের কাছ থেকে যোগাযোগ ও শেখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।  তাইওয়ানের যুবকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মূল ভূখণ্ডে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট সি।

তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের তরুণরা ঐতিহাসিক প্রবণতা উপলব্ধি করবে, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করবে, সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সাহসের সাথে পালন করবে এবং দৃঢ়ভাবে ক্রস-স্ট্রেট সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ বিকাশ করবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সি চিনপিং।

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

২. তুনহুয়াংয়ে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা যুব ক্যাম্পাস অনুষ্ঠিত

 

শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এসসিও যুব ক্যাম্পাস-২০২৩ শেষ হলো সদ্য। উত্তর-পশ্চিম চীনের প্রাচীন সিল্ক রোডের ধারে ২ হাজার বছরের পুরানো শহর তুনহুয়াংয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই যুব ক্যাম্পাস। 

কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং শহরে আয়োজিত শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা যুব ক্যাম্পাসে এসসিও-ভুক্ত ১২টি সদস্য ও পর্যবেক্ষক দেশের ৩০ জনেরও বেশি তরুণ প্রতিনিধি অংশ নেন।  

এটি সপ্তম শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ইয়ুথ ক্যাম্পাস। ২০১৬ সাল থেকে এ বার্ষিক অনুষ্ঠানটি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন থিমে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এ বছর প্রথমবারের মতো এতে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে প্রাধান্য দেয়া হয়।

 

নয়াদিল্লির তরুণ নেতাদের কনফেডারেশনের চেয়ারপারসন হিমাদ্রীশ সুওয়ান দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে বলেন, দুই দেশের উচিত মতপার্থক্যের পরিবর্তে একত্রিত হওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া।

"আমি মনে করি, চীন এবং আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তরুণদের খোলা মন নিয়ে চিন্তা করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীন-ভারত এমন একটি সম্পর্ক যা ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো এবং আমাদের শক্তিশালী ইতিহাস আছে। 

"আমি মনে করি, এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম পারস্পরিক সহযোগিতার উপায়গুলো অন্বেষণ করার, সন্দেহ দূর করার এবং বন্ধুত্বের একটি বাগান গড়ে তোলার সঠিক উপায়, যেখানে আমরা একসাথে কথা বলতে পারি এবং রাষ্ট্রপতি শির মানবজাতির জন্য ভাগ করা ভবিষ্যত নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারি।"

গত ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ৮ দিনের এই ইভেন্ট শেষ হয় ১৩ সেপ্টেম্বর। তুনহুয়াং পরিদর্শনের পর প্রতিনিধিরা পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের উপকূলীয় শহর ছিংতাও ঘুরতে যান।

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক : শিহাবুর রহমান

 

৩. উচ্চ-দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী

 

একটি উল্লেখযোগ্য, সুগঠিত এবং উচ্চমানের দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং।  সম্প্রতি উত্তর চীনের থিয়ানচিন পৌরসভায় অনুষ্ঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রতিযোগিতায় তিনি এ কথা বলেন।  

এ সময় লি আরও বলেন, দক্ষ প্রতিভা অমূল্য সম্পদ, কারণ দেশটি তার কর্মশক্তি উন্নয়ন কৌশল, কর্মসংস্থান-প্রথম কৌশল এবং উদ্ভাবন-চালিত উন্নয়ন কৌশল প্রয়োগ করে।

লি আরও যোগ করেন, সব অঞ্চল ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নকে গতিশীল করা উচিৎ। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ মেধাবীদের আয়ের মাত্রা বৃদ্ধি করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  এই দক্ষতা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন চীনা স্টেট কাউন্সিলর শেন ইয়িছিন।

দেশের উচ্চ-মানের উন্নয়ন এবং সর্বক্ষেত্রে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়তে সহায়তা করার জন্য দক্ষ প্রতিভা অন্বেষণের উপর জোর দেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং।

ভোকেশনাল স্কিলস কম্পিটিশন বা বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রতিযোগিতা চীনের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে হাই-প্রোফাইলের প্রতিযোগিতা।  প্রথম প্রতিযোগিতাটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কুয়াংতং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌতে অনুষ্ঠিত হয়।

 

আয়োজকরা জানান, এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য কর্মীদের তৈরি এবং উদ্ভাবনে সহায়তা করা, তাদের নিজস্ব মূল্য উপলব্ধি করানো এবং সেইসাথে তাদের দক্ষতা নিখুঁত করতে তাদের অনুপ্রাণিত করা।

এই বছরের চার দিনের আয়োজনে ১০৯টি প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টে ৪ হাজারের বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক : মাহমুদ হাশিম 

 

৪. ভিয়েতনামের তরুণী চীনে কি করে

ভিয়েতনামের মেয়ে এমা নগুইয়েন। ২০ বছর বয়স। এখন চীনের বেইজিংয়ে শিরান মিউজিয়ামে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।চীনের সংস্কৃতিতে তিনি মুগ্ধ। অবৈষয়িক সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান তাকে আকর্ষণ করে।

 

চীনের টাইডাই পদ্ধতিতে কাপড় রং করার ঐতিহ্যবাহী কৌশল এমাকে বিস্মিত করেছে।   প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান দিয়ে কাপড় রং করার চীনা টাই ডাই কৌশল বিষয়ে শিখছেন এমা। তিনি চীনে এসেছেন চীনা সংস্কৃতি বিশেষকরে ফেব্রিক ও বিভিন্ন ভেষজ উপাদান বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করার জন্য।

 

এমা নগুইয়েন, ভিয়েতনামের তরুণী, ভলেন্টিয়ার, শিরান মিউজিয়াম

‘আমি চায়নিজ কালচার বিশেষ করে ফেব্রিক ও মেটেরিয়াল বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চীনে এসেছি। ভিয়েতনামের সংস্কৃতির সঙ্গে চীনের মিল আছে। আমি জানতে চাই দুটি দেশের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্যগুলো কেমন।’

চীনে প্রাচীনকাল থেকে কাপড় রং করার জন্য নানা রকম ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা হয়। অনেক রকম উদ্ভিদের পাতা, শিকড়, ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

‘আমি মিউজিয়ামেরন কাজ বিষয়ে অনেক ধারণা রাখি। যেমন, আমরা সকলের জানা পদ্ধতিতেই যে টাইডাই করি তা নয়, চীনা ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস বিষয়ে আমাদের অনেক কিছু জানতে হয়, পড়াশোনাও করতে হয়।’

 

চীনের এই ঐতিহ্যবাহী টাইডাই পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

 

"ভেষজভিত্তিক টাই-ডাই হল একটি প্রাচীন এবং অনন্য রঞ্জক কৌশল যা উদ্ভিদ থেকে প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করে ফেব্রিকের উপর রং করে। রাসায়নিক রঙের তুলনায়, উদ্ভিদ-ভিত্তিক টাই-ডাই আরও পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই। উদ্ভিদের প্রক্রিয়া -ভিত্তিক টাই-ডাইতে গাছের পাতা, শিকড় এবং ফুলের মতো অংশ নির্বাচন করা হয়। সেগুলিকে জলে ফুটানো বা ভিজিয়ে রাখা এবং ফ্যাব্রিকের ফাইবারগুলিতে  বসানোর জন্য বাঁধা, ভাজ করার বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে।  এই টাইডাই শুধুমাত্র প্রাকৃতিক জগতের সৌন্দর্য এবং অনন্যতাই প্রদর্শন করে না, বরং শিল্প সৃষ্টিতে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করে যা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সুরক্ষাও তুলে ধরে।

টাইডাই কৌশল শেখার পর এমা ঐতিহ্যবাহী ভিয়েতনামী পোশাক এই পদ্ধতিতে রং করেন। ফলে নতুন স্টাইল তৈরি হয়। এই পোশাকের নাম আও দাই।

 

এমা নগুইয়েন, ভিয়েতনামের তরুণী, ভলেন্টিয়ার, শিরান মিউজিয়াম

 

‘ এটা হলো আও দাই। আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। ভিয়েতনাম থেকে এনেছি। আমি জানতাম আমাকে কিছু টাইডাই করতে হবে। তাই আমার পোশাকটাই রং করতে চেয়েছি। আগে এটা সাদা ছিল। ইনি আমার নানী। একই পোশাকে। প্রথমে এটা সাদা ছিল, টাইডাই করার পর গোলাপি হয়েছে। সবাই নতুনটা বেশি পছন্দ করেছে। যদি আমার মা জিজ্ঞাসা করেন এই কাপড় কোথায় পেয়েছি, বলবো এটা আমি বানিয়েছি।’

এমা আশা করেন তার বয়সী আরও অনেক তরুণ তরুণী মিউজিয়ামে এসে এই কাজ শিখবেন এবং প্রকৃতিকে ভালোবাসবেন।

 

প্রতিবেদক : শান্তা মারিয়া

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী