মানসম্মত ফলন বাড়াচ্ছে গ্রিনহাউজ পদ্ধতি | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৬
2023-09-20 19:38:58

         

                               

     

মানসম্মত ফলন বাড়াচ্ছে গ্রিনহাউজ পদ্ধতি | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৬

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে দূরে থাকছে পোকামাকড়

২. ভেড়া পালনে স্মার্ট পদ্ধতি

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

পোকামাকড় দূরে থাকে গ্রিনহাউজে

বাংলাদেশীদের মতো নাইজেরিয়ানদের কাছেও টমেটো ভীষণ পছন্দের সবজি। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ নানা কারণে এর ফলন কম হয়। এ জন্য তারা এখন গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করছেন। এর মাধ্যমে টমেটোগুলো কীটপতঙ্গ থেকে দূরে থাকছে এবং ভালো ফলন হচ্ছে।

নিজের বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক নাইজেরিয়ান নারী। কিছুদিন আগেও তার এই বাগানে পোকামাকড়ের ভীষণ উপদ্রব ছিল। একেক সবজিতে আক্রমণ করতো একেক রকম পোকা। এতে করে নানা রোগে আক্রান্ত হতো শাক-সবজি আর ফলন হতো কম। এখন তার পুরো বাগান গ্রিনহাউজের আওতায় আর এর মাধ্যমে বড় সুফল পাচ্ছেন তিনি। 

আসলে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় অন্যতম সংযোজন হলো গ্রিনহাউজ সিস্টেম। এই ব্যবস্থায় সাধারণত আবদ্ধ ঘরে চাষাবাদ করা যায়। এর মাধ্যমে ফসল পোকামাকড় থেকে দূরে রাখা যায় এবং একই সঙ্গে যে কোন আবহাওয়ায় মানসম্মত উৎপাদন সম্ভব হয়।

ব্লেসিং স্যামসন নামের এই নাইজেরিয়ান নারী জানিয়েছেন, গ্রিনহাউজ প্রকল্প চালুর পর কতটা উপকৃত হয়েছে তার অঞ্চলের কৃষকরা।

ব্লেসিং স্যামসন, নাইজেরিয়ান কৃষক

"খোলা আকাশের নিচে চাষাবাদ করার চেয়ে গ্রিন হাউজ প্রকল্পের মধ্যে চাষাবাদ করার অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন ধরুন, পোকামাকড় মারতে আপনার জমিতে স্প্রে করলেন, কিন্তু আপনার পার্শ্ববর্তী জমির কৃষকরা যদি নিয়মিত স্প্রে না করে তাহলে সেই জমির পোকামাকড় আপনার জমিতে আক্রমণ করবে। এ সব বাড়তি ঝামেলা থেকে পুরোপুরি মুক্ত গ্রিনহাউজ প্রজেক্ট। কারণ এখানে চারদিক ঢেকে রাখা হয়।"

আফ্রিকায় টমেটো উৎপাদনে শীর্ষ দেশ নাইজেরিয়া কিন্তু এরপরও স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না কারণ এখানে যে পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয় তার অর্ধেকেরও বেশি পোকামাকড়ের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় এবং দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে ফসল সতেজ রাখা সম্ভব হয় না।

স্থানীয় কৃষি গবেষক কালিব মেনেগবে জানিয়েছেন, এই গ্রিনহাউজ প্রযুক্তির ফলে এতদিনের জটিল সমস্যার বড় সমাধান এসেছে।

কালিব মেনেগবে, স্থানীয় কৃষি গবেষক

"গ্রিনহাউজ প্রকল্পের একটা সুবিধা হলো আপনি স্যুট টাই পরে এখানে কৃষি কাজ করতে পারবেন এবং আপনার পোশাক-আশাক একটুও নোংরা হবে না। আরেকটি বড় সুবিধা হলো আপনি খুব কম জায়গায় চাষাবাদ করতে পারবেন এবং কম সময়ে অধিক ফলন পাওয়ার আশা করতে পারেন। আসলে গ্রিনহাউজ প্রকল্পে আপনি অনুকূল পরিবেশ করতে পারবেন এবং এতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি উৎপাদন সম্ভব হবে।‘

কৃষি খাতকে ঢেলে সাজাতে এরইমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস প্রকল্প নির্মাণের জন্য কৃষকরা ভর্তুকি পাবেন। এই দেশে একধরনের "ক্রেডিট কালচার" চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যেটি বাস্তবায়ন হলে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পাবেন কৃষকরা।

মূলত চীনে বড় পরিসরে গ্রিন হাউজ প্রকল্পের ব্যবহার করা হয়। নিজ দেশের কৃষিকাজে সমৃদ্ধি আসার পর এই ভাবনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পৃথিবীর অন্য দেশেও। সে পথে হাঁটতে শুরু করেছে নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

ভেড়া পালনে স্মার্ট পদ্ধতি

আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করছেন চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ভেড়ার খামারীরা। ভেড়া পালনের স্মার্ট পদ্ধতির ফলে ভেড়ার প্রজনন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি উৎপাদিত পশমের পরিমাণও বেড়েছে।

 

সিনচিয়াংয়ের বেইংগোলিন মংগোলিয়ান স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে স্মার্ট ভেড়ার খামারে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। 

সিনচিয়াংয়ে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ৪৮ মিলিয়ন ভেড়ার নিবন্ধন করা হয়েছে। বসন্তকালীন চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনেক ভেড়াকে। আবার প্রাকৃতিক চারণক্ষেত্রের উপর চাপ কমাতে খামারে রেখে দেয়া হচ্ছে অনেক ভেড়াকে।

এই খামারে দুই হাজারের বেশি ভেড়া আছে। খামারের ভিতরে আলো বাতাসের ভালো ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন ওদের ভালো খাবারও দেয়া হয়। খাদ্যের মধ্যে দেয়া হয় ভুট্টার দানা, ভুট্টার ডাঁটি, আলফা আলফা এবং লিকোরাইস।

শাবকদের ভুট্টার গুড়া খাওয়ানো হয় কারণ তাদের পাকস্থলী এখনও মাত্র গড়ে উঠছে।

গর্ভবতী ভেড়াদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা হয়। মা ও ভ্রুণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয় সব ঠিকঠাক আছে কিনা।

উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এখানে প্রতিপালন করা ভেড়ারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।

সিনচিয়াংয়ের আকেসু প্রিফেকচারের বাইছাং কাউন্টি ভেড়ার পশমের জন্য বিখ্যাত। বাইছাং কাউন্টিকে বলা হয় ‘চীনা উন্নত পশমের ভেড়ার শহর’। এখানকার ভেড়ার পশম সিনচিয়াংয়ের অন্যান্য এলাকা, ইনার মঙ্গোলিয়া এবং সিচুয়ান প্রেদেশের ভেড়ার পশমের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।

এখানকার ভেড়ার খামারগুলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে পশম সংগ্রহ করা হয়। অনেক সময় বাড়িতে পালন করা ভেড়াও এখানে নিয়ে এসে পশম সংগ্রহ করা হয়।

এখানকার ভেড়ার পশমের গুণগত মান ভালো। এগুলো ল্যাবরেটরিতে বিশেষভাবে পরীক্ষা করা হয়।

সিনচিয়াংয়ে ভেড়া পালন অনেক উদ্যোক্তাকে আকৃষ্ট করেছে। পশুপালকরা ভেড়া পালন করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করেছেন।

এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের অবস্থার উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে ভেড়া পালন শিল্প।


প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: হাবিবুর রহমান অভি

 

 

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী