চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন চীনের নতুন উন্মুক্ততা প্রদর্শন করে
2023-09-19 10:46:44

রপ্তানিপণ্য নিয়ে চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। বেশ ক’বছর আগে চালুর পর ঘাঁটিটি বিশ্বের বৃহত্তম স্থল-বেষ্টিত দেশ কাজাখস্তানকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করা কৌশলগত ‘রপ্তানি বন্দরে’ পরিণত হয়েছে।

চিয়াংসু প্রদেশ চীনে সবচেয়ে আগে চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন চালু করার প্রদেশগুলোর অন্যতম। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে লিয়ানইয়ুনকাং থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক মালবাহী ট্রেন চালু হয়। তারপর প্রদেশের সুচৌ, নানচিং ও স্যুইচৌ ইত্যাদি শহর পরপর রেল-লাইন চালু করে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চিয়াংসু থেকে চীন-ইউরোপ (মধ্য-এশিয়া) মালবাহী ট্রেন ট্রিপের সংখ্যা ছিল ১,৫০৪টি, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

লিয়ান ইয়ুনকাং চীন-কাজাখ আন্তর্জাতিক লজিস্টিক লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার জুও শ্যুয়েমেই ব্যাখ্যা করেন, ২০১৪ সালে ঘাঁটি চালু হওয়া থেকে মোট ৫ হাজারের বেশি চীন-ইউরোপ (মধ্য-এশিয়া) মালবাহী ট্রেন পাঁচটি ট্রানজিট বন্দর হয়ে ৬টি মালবাহী লাইনে চলাচল করে। এর মধ্যে ট্রানজিটের মাধ্যেম কাজাখস্তান থেকে আমদানিকৃত নিত্য-ব্যবহার্য্য দ্রব্য, রপ্তানিকৃত খনিজ দ্রব্য, খাদ্যের মতো প্রধান বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি চীনের লিয়ান ইয়ুনকাংয়ে সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়।

চীন-কাজাখ (লিয়ান ইয়ুনকাং) লজিস্টিক সহযোগিতা ঘাঁটি হলো চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে চীন উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ, বিশ্ব আর্থ-বাণিজ্যিক পরিস্থিতি সুষ্ঠু করতে সহায়তা দেয়ার প্রাণবন্ত একটি ক্ষেত্র। বর্তমানে প্রাচীন ইউরেশিয়ায় প্রতিদিন নতুন উন্মুক্তকরণের গল্প লেখা হচ্ছে।

২০১১ সালের মার্চ মাসে চীনের প্রথম চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন ছোংছিং থেকে রওয়ানা হয়। চলতি বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত মোট ৭৩ হাজারের বেশি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এতে ৬৯ লাখ টিইইউ মালামাল পাঠানো হয়েছে।

হামবুর্গ মালামাল সংস্থা গেটওয়ে’র ম্যানেজার জোশুয়া বলেন, চীন-ইউরোপ পণ্য পরিবহন এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন লজিস্টিক পথযাত্রা শুরু করে, ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগে চীন-ইউরোপ সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে পরিণত হয়েছে এবং চীন-ইউরোপ বাণিজ্যে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন লাইন ৮৬টি। যা চীনের ১১২টি শহর, ইউরোপের ২৫টি দেশ ও অঞ্চলের ২শ’র বেশি শহর এবং ১১টি এশীয় দেশ ও অঞ্চলের শতাধিক শহর সংযুক্ত করে।

জার্মানীর ডুইসবার্গ শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যুরোর দায়িত্বশীল ব্যক্তি ক্রিস্টিন বলেন, ‘রেলপথে চলমান চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন, একটি তরতাজা বাণিজ্যিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে’। চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন চীন ও ইউরোপের দূরত্ব কমিয়ে কাছাকাছি এনেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের কারণে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের নাগরিকদের জীবনে নতুন চেহারা দেখাচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপের অধিবাসীরা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্ডার দিলে, সবচেয়ে দ্রুত, দ্বিতীয় দিনেই চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনে পাঠানো, বিদেশী গুদামে রাখা, চীনে উৎপাদিত গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি পেতে পারেন। একই সময় চীনে মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আসা ইউরোপের রেড ওয়াইন ও মধ্য এশিয়ার ময়দা জনগণের জীবনে স্বস্তি এনেছে।

চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ সহযোগিতামূলক অংশীদার দেশে চীনের আমদানি-রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৬ শতাংশ বেশি। একই সময় মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশে চীনের আমদানি-রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪.১ শতাংশ বেড়ে ৩৯ হাজার ৪৭ কোটি ইউয়ান হয়েছে।

চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমি-সিএএসএস-এর বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণালয়ের গবেষক নি ইউয়েচু মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাসের প্রেক্ষাপটে, চীন ও ‘এক অঞ্চল এক পথ’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এখনও শক্তিশালী, আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, অব্যাহতভাবে এটি শক্তিশালিও হচ্ছে।

(প্রেমা/হাশিম)