সেপ্টেম্বর ১৯: গত কিছুদিন মার্কিন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন পোস্টে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত একদল লোক, উন্মত্তভাবে দোকানের দিকে ছুটে যাচ্ছে, তারপর দ্রুত চুরি করা মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের স্পষ্ট চুরি ও ছিনতাইয়ের আচরণকে আমেরিকানরা "জিরো-ডলার কেনাকাটা" বলে উপহাস করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের নর্থরিজ মলে ম্যাসির ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের একটি কাচের ক্যাবিনেট ভেঙে ফেলা হয় এবং ২০ হাজার ডলারের পারফিউম চুরি করা হয়। কয়েক ডজন লোক লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হাই-এন্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নর্ডস্ট্রম এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গ্লেনডেলে একটি ইয়েভেস সেন্ট লরেন্ট স্টোর লুট করেছে। প্রায় ৩ লাখ ডলারের জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে... সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। আসলে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এ ধরনের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি ফেডারেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা শিল্পের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ২৬.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে, মার্কিন খুচরা শিল্প-সম্পর্কিত ক্ষতি ৯৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এই বিপর্যয়ের মুখে, খুচরা বিক্রেতাদের তাদের পণ্যদ্রব্য লক আপ করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, চেইন ফার্মেসি এবং হোম বিল্ডিং উপকরণ সরবরাহকারীরা তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কারুসো, আমেরিকান ওষুধের দোকান চেইন ওয়ালগ্রিনসের মুখপাত্র, বলেন যে, সান ফ্রান্সিসকোতে সক স্টোরের সুরক্ষা ব্যয় চেইন স্টোরের জাতীয় গড়ের ৪৬ গুণ। লস অ্যাঞ্জেলেস, একসময় "শপিং প্যারাডাইস" নামে পরিচিত, হঠাৎ করেই অনেকটা নির্জন হয়ে গেছে এবং অনেক খুচরা দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
এই ধরনের ব্যাপক ডাকাতির সামনে, আমেরিকান পুলিশের কি আইনি পদক্ষেপ জোরদার করা উচিত না? বাস্তবতা হল যে, আমেরিকান পুলিশ বিভাগগুলি "শ্রমিক ঘাটতির" সম্মুখীন হচ্ছে। একাধিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উচ্চ অপরাধের হার, উচ্চ-তীব্রতার কাজ এবং পুলিশ ও নাগরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের চাপে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ পেশা ক্রমশ "অজনপ্রিয়" হয়ে উঠছে। ইউএস পুলিশ এক্সিকিউটিভ রিসার্চ ফোরামের প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মার্কিন পুলিশ বিভাগ থেকে পদত্যাগের সংখ্যা ৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক মামলা আছে কিন্তু পুলিশ অফিসার খুব কম। তাদের প্রত্যাশা পূরণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অক্ষমতা কল্পনা করা কঠিন নয়।
উপরন্তু, অপর্যাপ্ত অপরাধমূলক শাস্তিও চুরি ও ডাকাতিকে উত্সাহিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়া ২০১৪ সালে প্রস্তাব ৪৭ পাশ করেছে, যাতে বোঝা যায় ৯৫০ মার্কিন ডলারের নিচে চুরি শুধুমাত্র একটি অপকর্ম, কোনো অপরাধ নয়। কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় গুরুতর অপরাধকে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূল হিসাবে বিবেচনা করে। কারণ মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ভোট জয়ের চাবিকাঠি। তাই "দুষ্কর্ম" সরকারের মনোযোগ পায় না।
গভীরভাবে তাকালে, কেন "ফ্ল্যাশ মব ডাকাতি" যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেড়ে উঠছে? পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এমন ঘটনা অগাস্ট মাসে শীর্ষে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার আগের মাসের তুলনায় ০.৩ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সামনে, কিছু আমেরিকান এমনকি মুদি বা গ্যাসের বিলও বহন করতে পারে না। এই ঘটনাটি মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতিক "ভাল পারফরম্যান্স" এর সাথে বিশাল বিপরীত বলে মনে হচ্ছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে, মার্কিন জিডিপি ২%-এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাইরের বিশ্ব একে "প্রত্যাশিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে" বলে বর্ণনা করেছিল। যাইহোক, বাস্তবতা বিভ্রান্তিকর- ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক বিদ্যুৎ খরচ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৩%, ২% এবং ৭% কমেছে। সাধারণ পরিস্থিতিতে, যখন অর্থনীতির উন্নতি হয়, তখন সম্পর্কিত অর্থনৈতিক বা আবাসিক কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে সক্রিয় হওয়া উচিত। কেন মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য পরস্পরবিরোধী? হঠাত করে, "মার্কিন অর্থনীতি ভাল না খারাপ" একটি উত্তপ্ত বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে।
উপরন্তু, কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে "ফ্ল্যাশ মব ডাকাতির" ঘটনাটি আমেরিকান সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিশাল ব্যবধান প্রতিফলিত করে। পারিবারিক সম্পদ সম্পর্কিত ফেডারেল রিজার্ভের রিপোর্ট দেখা যায় যে, ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক হিসাবে, আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ১% এর মোট সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ৪৫.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ১২ ট্রিলিয়নেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের হার ২০২০ সালে ১১.৪% এ পৌঁছেছে, যা ২০১৮ থেকে ০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। বিশ্বের এক নম্বর পুঁজিবাদী দেশ হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "চকচকে" চেহারা ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে বিভাজনের দাগ লুকাতে পারে না।
ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাডলি বলেছেন, খুচরা শিল্প খাতে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে চারজনের মধ্যে একটি চাকরি হয়। খুচরা শিল্পের ক্ষতি অনিবার্যভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে ক্ষতি ডেকে আনবে। "জিরো ডলার ক্রয়" এবং "ফ্ল্যাশ মব ডাকাতির" ঘটনা আকস্মিক নয়। এটি আমেরিকান অর্থনীতির কাঠামোগত ত্রুটি এবং সামাজিক শাসনের অভাব প্রতিফলিত করে। এভাবে চলতে থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়তে পারে।
(ইয়াং/তৌহিদ/ছাই)