‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩৬
2023-09-19 16:18:04

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। পর্যটকের আগমনে জমজমাট চীনের কুইচৌ প্রদেশ

২।  শাংহাইয়ের পর্যটন উৎসবে মাতোয়ারা ভ্রমণ পিপাসুরা

৩। ইয়ুননানের প্রাচীন শহর চিয়ানশুই

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১। পর্যটকের আগমনে জমজমাট চীনের কুইচৌ প্রদেশ

চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ কুইচৌ। ১ দশমিক ৭ লাখ বগকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই প্রদেশ। পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ এই প্রদেশে প্রতিবছরই ঘুরতে আসেন লাখো পর্‍্যটক। চলতি বছরই পর্যটক আগমনে রেকর্ড করেছে প্রদেশটি। 

এই প্রদেশের রাজধানীর নাম কুইইয়াং। এই কুইইয়াং ইয়ুননান ও কুইচৌ মালভূমির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এই কুইইয়াং হলো প্রদেশটির রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । প্রাচীনকালে কুইইয়াং-এ অনেক বাঁশ উৎপাদিত হতো বলে একে বলা হয় 'চু' শহর। চু হল বাঁশ দিয়ে তৈরী এক ধরনের সংগীত যন্ত্র। এর ভোগৌলিক অবস্থান পাহাড়ের মধ্যে থাকার কারণে তাকে পাহাড় প্রদেশের রাজধানীও বলা হয় ।

হান জাতি ছাড়া অনেক সংখ্যালঘু জাতি কুইইয়াং শহরে বসবাস করে। এখানে মিয়াও, বুই, তোং এবং হুইসহ ৩০টিরও বেশি সংখ্যালঘু জাতির বাস। প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধরনের সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও রীতিনীতি  চালু রয়েছে এখানে। এখানকার ভৌগোলিক আকার বৈচিত্রময়, এছাড়া এখানকার মাটির নীচেও রয়েছে অনেক গুহা। এসব গুহা, পাহাড়, নদী ,বন ও মন্দির একসাথে মিলে সৃষ্টি করেছে মালভূমি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য।

কুইচৌ প্রদেশের আবহাওয়া শীতকালে খুব ঠাণ্ডা নয় এবং গ্রীষ্মকালে তেমন একটা গরমও নয় , তবে বৃষ্টি বেশি । সারা বছর গড়পড়তা তাপমাত্রা ১০ থেকে ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে । সারা বছর গড়পড়তা বৃষ্টির পরিমাণ ৯০০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার । কুইচৌ প্রদেশের দক্ষিণপশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি বেশি, উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টি কম হয় । সারা বছর বৃষ্টির সময় ১৬০ দিনেরও বেশি । গ্রীষ্মকালে বৃষ্টির পরিমাণ সারা বছরের অর্ধেকেরও বেশি ।

কুইচৌ প্রদেশের কৃষি জমির আয়তন ৪৬.৬ লাখ একরেরও বেশি। ধান ও ভূট্টাসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্যের চাষাবাদের জমির আয়তন মোট আয়তনের ৪ ভাগের ৩ ভাগ। ধান উত্পাদনের পরিমাণ প্রদেশের খাদ্যশস্য পরিমাণের ৩ ভাগের ২ ভাগের মত। তাছাড়া, কৃষকরা শাক -সবজি, তামাক পাতা ও আখসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্ভিদও চাষ করেন ।

কুইচৌ প্রদেশ হচ্ছে চীনের চারটি তামাক পাতা ও রেশমপোকা উৎপাদন অঞ্চলের অন্যতম । প্রচুর বন সম্পদ থাকার কারণে কুইচৌ চীনের অন্যতম কাঠ উৎপাদন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে । বিশেষ করে চিনপিং অঞ্চলের বৃক্ষের কাঠ অনেক জনপ্রিয় । এ অঞ্চলের খনিজ সম্পদও প্রচুর। পারদ ও কোয়ার্টসের মজুদ চীনে সবচেয়ে বেশি । প্রদেশটির ৮৬ ভাগ জেলায় খনিজ সম্পদ রয়েছে।

চীনের কুইচৌ প্রদেশের লিপোও কাউন্টিতে প্রতিবছরই  আসেন অসংখ্য পর্যটক। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন ঘটেছে এই কাউন্টিতে। সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র বলছে, গ্রীষ্মের ছুটিতে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশে দিনে ১ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। মনোরম দৃশ্য এবং বছরব্যাপী নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর জন্য বিখ্যাত এই জেলা। এ কাউন্টিতে, জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার। 

ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ও দর্শনার্থীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে লিপোওর প্রাচীন শহর এলাকায় খোলা হয়েছে ৮০টির বেশি হোমস্টে খোলা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য রাত্রিযাপন ব্যবস্থার হার প্রায় ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানায়, ছিয়ানান পুই এবং মিয়াও অটোনোমাস প্রিফেকচার হোমস্টে অ্যাসোসিয়েশন। কুইচৌর এই কাউন্টিতে চলতি বছরে পর্যটকের সংখ্যা ২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন- আফরিন নাহার

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। শাংহাইয়ের পর্যটন উৎসবে মাতোয়ারা ভ্রমণ পিপাসুরা

যারা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর জায়গা চীনের শাংহাই নগরী। আধুনিক অবকাঠামোর পাশাপাশি  প্রাচীন নিদর্শন ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে এই নগরীতে। শাংহাইয়ের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সেখানে আয়োজন করা হয় ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল, যাতে অংশ নেয় দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক।

জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে চীনে শুরু হয়েছে পর্যটন উৎসব। শনিবার চীনের শাংহাই নগরীতে ৩৪তম শাংহাই টুরিজ্যম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়, যা চলবে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।  মূলত সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার।

ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার, ওয়াইল্ড পার্ক, ফেংচিং অ্যানসিয়েন্ট টাউনসহ প্রায় ৭০টি পর্যটন স্পট রয়েছে শাংহাইতে। বিশেষ উৎসব উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য ৫০ ভাগ ছাড় দিয়েছে শাংহাই কর্তৃপক্ষ।

 

এ উৎসবে শাংহাই সিটির ১৬ ডিস্ট্রিক্টে আয়োজন করা হয় নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরিতে নেয়া হয়েছে এ উদ্যোগ। 

শাংহাইয়ের প্রশাসনিক দপ্তর জানায়, ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে শাংহাইয়ে ভ্রমণ করেছেন প্রায় ১৪০ মিলিয়ন দেশি পর্যটক। সব মিলিয়ে পর্যটন খাতে এ নগরীর আয় হয়েছে ১৫৫ বিলিয়ন ইউয়ান, যা গেল বছরের একই সময়ে আয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর শাংহাইতে পর্যটন উৎসবের আয়োজন করা হয়, যা নজর কাড়ে বিশ্বের ভ্রমণপিয়াসু মানুষদের।

প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। ইয়ুননানের প্রাচীন শহর চিয়ানশুই

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের প্রাচীন শহর চিয়ানশুই টাউন। ইয়ুননানের হংহ্য প্রিফেকচারে অবস্থিত এই চিয়ানশুই কাউন্টির একটি প্রাচীন এলাকাকে বলা হয় চিয়ানশুই টাউন।  

খুনমিং শহর থেকে ২১৪ কিলোমিটার দূরে  এই টাউন। এখানে বাস করে হংহ্য হানি ও ই জাতির জনগোষ্ঠীরা। অনেক বছর ধরে এই এলাকাটি হয়ে উঠেছে ইয়ুননানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

শুয়াংলোং ছিয়াও বা শুয়াংলোং ব্রিজ এখানকার একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। একে ডবল ড্রাগন ব্রিজও বলা হয়ে থাকে। এই চিয়ানশুই টাউন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই দেখা যায় প্রাচীন এই সেতু।  লুশুই এবং থাসুন নদীর সংযোগ স্থলে এই দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মিত হয় ছিং রাজবংশের আমলে। সম্রাট ছিয়ানলং(১৭১১-১৭৯৯ সাল)  প্রথম এই সেতু নির্মাণ করেন।

 

পরবর্তীতে সম্রাট কুয়াংসু (১৮৭১-১৯০৮ সাল) এটাকে পুনর্নির্মান করেন। এটাতে ১৪টি গর্ত বা হোল তৈরি করা হয়। বর্তমানে এটি ১৭ গর্ত ব্রিজ বা সেভেনটিন হোল ব্রিজ নামেও পরিচিত। ব্রিজটি ১৫৩ মিটার দীর্ঘ এবং ৩ মিটার চওড়া। ব্রিজের মধ্যভাগ সবচেয়ে নান্দনিক ও রাজকীয়। আর পুরো সেতুটি তৈরি কালো মার্বেল পাথর দিয়ে। এই সেতুকে ‘গ্র্যান্ড ভিউ প্যাভিলিয়ন অব সাউথ ইয়ুননান’ নামেও ডাকা হয়। এছাড়া দক্ষিণ ইয়ুননানের সবচেয়ে সুন্দর সেতু হিসেবে লোকেমুখে পরিচিত এই সেতু।

চিয়ানশুই টাউনে সেতু ছাড়া আরও অনেক দেখার স্থান আছে। এখানে রয়েছে বড় একটি দুর্গ প্রাসাদ। এই পর্যটন স্থানের রয়েছে সাতশ বছরের ইতিহাস। এছাড়া রয়েছে কনফুসিয়াসের মন্দির।

এখানকার পার্পল পটারি নামে খ্যাত মৃৎশিল্প ও পোর্সেলিনের কাজ বিখ্যাত। চিয়ানশুই স্ন্যাকস নামে এখানকার মুখোরোচক স্থানীয় খাবার খুব বিখ্যাত। বিশেষ করে তোফু দিয়ে তৈরি কিছু স্ন্যাকস সত্যিই মজাদার। চিয়ানশুই টাউনে ঘুরতে গেলে কারুশিল্পের কিছু সামগ্রীও কিনতে পারবেন পর্যটকরা।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী