বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব ৩৬তম পর্ব
2023-09-18 15:05:24

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩৬তম পর্বে যা থাকছে:

* থিয়েনচিন এক্সপোতে দেখা গেলো ছয় পাখাবিশিষ্ট বিদ্যুৎচালিত হেলিকপ্টার

* সড়কগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনছে চীন

* চীনের তৈরি প্রথম ক্রুজ শিপের নিরাপত্তা বাড়াবে আধুনিক প্রযুক্তি

 

 

থিয়েনচিন এক্সপোতে দেখা গেলো ছয় পাখাবিশিষ্ট বিদ্যুৎচালিত হেলিকপ্টার

 

চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন একটি সম্পুর্ণ বিদ্যুৎচালিত ছয় পাখাবিশিষ্ট হেলিকপ্টার উন্মোচন করেছে, যা জনসাধারণের সেবা ও সামরিক ক্ষেত্র - দুই জায়গাতেই কাজে লাগানো যাবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত থিয়েনচিন এক্সপোতে দেখা যায় নতুন মডেলের এই হেলিকপ্টার।

পুরোপুরি কম্পোসিট উপাদানে তৈরি এআর-৩০০ বিদ্যুৎচালিত ছয় পাখাবিশিষ্ট হেলিকপ্টার। এতে রয়েছে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক কন্ট্রোল সিস্টেম ও ছয়টি পাখা।  

এর প্রস্তুতকারক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটি বলছে, হেলিকপ্টারটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেনো এটি দ্রুতগতিতে মানবচালিত হেলিকপ্টার থেকে চালকহীন হেলিকপ্টারে রূপান্তরিত হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ হেলিকপ্টার পর্যটন, শহুরে পরিবহন ও পণ্য ডেলিভারির কাজে ব্যবহার করা যাবে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, সামরিক ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যাবে এটিকে। এই হেলিকপ্টারে চড়ে যুদ্ধের ময়দানে যেতে পারবে সৈন্যরা। শত্রুর ওপর আঘাত হানা এবং পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে কাজে আসবে ছয় পাখাবিশিষ্ট এই হেলিকপ্টারটি।

গত বৃহস্পতিবার চীনের থিয়েনচিনে শুরু হওয়া ৬ষ্ঠ চায়না হেলিকপ্টার এক্সপোজিশানে এআর-৩০০র’ একটি প্রোটোটাইপ প্রদর্শিত হয়। চায়না হেলিকপ্টার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের ডিজাইনার ওয়াং ফেই বলেন, প্রযুক্তি প্রদর্শনের জন্য প্রোটোটাইপটি তৈরি করা হয়েছে এবং পরের বছর পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা হবে এটি।

তিনি বলেন, এই হেলিকপ্টারটি বেশ নিরাপদ। এর দুটি পাখা ভেঙে গেলেও আকাশে উড়তে পারবে। হেলিকপ্টারটির রক্ষণাবেক্ষণ ও উড্ডয়ন খরচ প্রচলিত জ্বালানিচালিত একই মডেলের হেলিকপ্টারের মাত্র অর্ধেক বলেও জানান তিনি।

বেইজিংয়ের বিমান শিল্প পর্যবেক্ষক উ ফেইসিন বলেন, বিশ্বজুড়ে বেসামরিক ও সামরিক খাতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিদ্যুৎচালিত আকাশযান। চালক ছাড়াও যে হেলিকপ্টারটি উড়তে পারে, এই বৈশিষ্ট্যকে সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় বলছেন এই পর্যবেক্ষক। 

তিনি বলেন, “এই ধরনের আকাশযানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বেশ সস্তা। পরিচালনা করাও খুব সহজ। বিদ্যুৎচালিত বিধায় পরিবেশের জন্যও ভালো। পাশাপাশি আপনি যদি দ্রুত কাউকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে চান কিংবা কোনও আহত সৈন্যকে শত্রু এলাকা থেকে উদ্ধার করতে সেখানে অন্য কোনও সৈন্য পাঠাতে চান না, তখন এই হেলিকপ্টারের স্বচলন ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন।” 

সদ্য শেষ হওয়া থিয়েনচিন এক্সপোতে পুরো বিশ্ব থেকে ৩৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে ৬০ হাজার দর্শকের সমাগম হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত চার বছরে এটিই ছিলো চীনের প্রথম হেলিকপ্টার প্রদর্শনী।  

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

সড়কগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনছে চীন

 

একটি দেশ কতটা উন্নত তা অনেকটা নির্ভর করে সে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। তাইতো সড়ক-মহাসড়কগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনছে চীন।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে বুদ্ধিমান প্রযুক্তির আওতায়। এর মাধ্যমে বেশি কিছু সুবিধে পাবেন গাড়িচালক ও যাত্রীরা। বিশেষ করে চালকহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো বেশি সুবিধে পাবে। এ ধরনের গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা লেনও রয়েছে রাস্তায়। কাছাকাছি কোন গাড়ি চলে আসল ওয়ার্নিং সিগন্যাল দেবে গাড়িতে।

রাস্তার লেন ধরে প্রায় চার হাজার স্মার্ট ল্যাম্প লাগানো হয়েছে, যেগুলো পরিস্থিতি বুঝে পর্যাপ্ত আলো সরবরাহ করবে। 

সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল ট্রান্সপোর্টেশন কনফারেন্স এন্ড এক্সপো। এই প্রদর্শনীতে সড়ক বিভাগে চীনের অগ্রগতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়। চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সচিবালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রায় ৪০০ অতিথি এ সম্মেলনে অংশ নেন।

সড়কের ট্রাফিক সিস্টেম আরো গতিশীল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফাইভ জি প্রযুক্তি। এ ছাড়া পেইতো স্যাটেলাইট ব্যবহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনা হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। 

চীনের পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একজন গবেষক ছেন কুন জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। “এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মহাসড়কে উন্নয়ন করা হয়েছে এবং বুদ্ধিমান প্রযুক্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে বেইজিং থেকে সিয়নআন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে, শাংহাই-হাংচৌ-নিংপো এক্সপ্রেসওয়ে এবং ছেংতু-ইউপিন এক্সপ্রেসওয়ে, এই সড়কগুলো নেভিগেশন স্যাটেলাইটের আওতায় হয়েছে।”

ফাইভ জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এমন কিছু সংকেত দেয়া হবে, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়াতে পারবে স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো।

বেইজিংয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চায়না রেলওয়ের কর্মকর্তা ছেন ইয়াং বলেন, "খারাপ আবহাওয়া যেমন, ঘন কুয়াশা, বৃষ্টিপাত বা তুষারপাতের কারণে কারণে আলো কমে গেলে, লাইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ওঠে এবং ফ্ল্যাশ করে।"

এ ছাড়া যখন গাড়ির সামনে কাছাকাছি আরেকটি গাড়ি চলে আসবে, তখন লাল বাতির মাধ্যমে চালককে সতর্ক করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এরকম বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

চীনের তৈরি প্রথম ক্রুজ শিপের নিরাপত্তা বাড়াবে আধুনিক প্রযুক্তি

২০২৩ সালের শেষের দিকে চীন-নির্মিত প্রথম বৃহৎ ক্রুজ শিপ ‘আদোরা ম্যাজিক সিটি’ ডেলিভারি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিসজ্জিত এই জাহাজ যাত্রীদের একটি নিরাপদ ও বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা দেবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

লম্বায় ৩২৩ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থে ৩৭ দশমিক ২ মিটারের আদোরা ম্যাজিক সিটি ক্রুজ শিপটির ওজন ১ লাখ ৩৫ হাজার টন। জাহাজটি একসাথে ৬ হাজার ৫০০ যাত্রী বহনে সক্ষম। 

সম্প্রতি দানবাকৃতির এই জাহাজটি এর শেষ পরীক্ষামূলক সমুদ্রযাত্রা সফলভাবে শেষ করেছে। ২ কোটিরও বেশি যন্ত্রাংশ ও উপকরণ দিয়ে তৈরি আদোরা ম্যাজিক সিটি চীনের জাহাজনির্মাণ শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি। এমনকি এর পরীক্ষামূলক সমুদ্রযাত্রাগুলোও  ছিলো উচ্চমানসম্পন্ন। সমুদ্রবন্দর ছেড়ে যাবার আগে ১০০ বারেরও বেশি পরিদর্শন করা হয়েছে জাহাজটিকে।

 

শাংহাই ওয়াইকাওছিয়াও শিপবিল্ডিং কোম্পানির প্রকল্প বিভাগের উপ-পরিচালক ওয়েই শেংশেং বলেন, পরীক্ষামূলক যাত্রার আগে তারা জাহাজটির সকল সরঞ্জাম পরীক্ষা করেছে এবং দুবার এটি পরিদর্শন করেছে।

“১ হাজার ৩শ’ ক্রু সদস্য যুক্ত ছিলেন পরীক্ষামূলক সমুদ্রযাত্রায়। পরীক্ষার সময় যেনো কোনো জ্বালানি সংকটে না পড়তে হয়, সেজন্য সব ধরনের জ্বালানি পরিপূর্ণভাবে আছে কিনা পরীক্ষা করে নিয়েছি,” বলেন শেংশেং। 

আকারে বেশ বড় হলেও কম জায়গার মধ্যেই ডকিং করার সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আদোরা ম্যাজিক সিটি জাহাজটিকে। জাহাজটির ব্যবস্থাপক ছেন হং বলেন, ক্রুজ শিপটি লম্বায় ৩০০ মিটারেরও বেশি হলেও এর টার্মিনালটি আবাসিক এলাকার পার্কিং স্পেসের সমান। তবে ছোট জায়গায় ডকিং করতে জাহাজটি চলমান থাকতে হয়। তাই এই জাহাজটিতে ৩৬০-ডিগ্রী ঘূর্ণায়মান পড সিস্টেম লাগানো হয়েছে বলে জানান ছেন হং।

ন্যাভিগেশনের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে জাহাজটিতে। শাংহাই ওয়াইকাওছিয়াও শিপবিল্ডিং কোম্পানির উপ-পরিচালক মা লিপিন বলেন, আধুনিক দিকদর্শন যন্ত্রের সাহায্যে দিক নির্ণয় করে এই জাহাজটি। 

তিনি বলেন, “দিকদর্শন যন্ত্র দিয়ে আমরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে নিজেদের গতিপথ ঠিক করতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন এই যন্ত্রটি শুধু দিকই নিরুপণ করে না, পাশাপাশি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশও বলে দিতে পারে।”

ন্যাভিগেশনের নতুন এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ সিস্টেম। জাহাজ মনিটরিং ব্যবস্থাপনায় এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এই সিস্টেমে একইসাথে ব্যবহৃত হয় দিকদর্শন যন্ত্র ও স্যাটেলাইট পজিশনিং প্রযুক্তি। ফলে দিকের পাশাপাশি জাহাজের বর্তমান অবস্থানও দেখতে পাওয়া যায় এই সিস্টেমের সাহায্যে। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান, মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী